লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের গুড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম শিউলি এর অনিয়মের প্রতিবাদ করায় সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তারকে মারধর ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম শিউলি এর বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তারকে মারধরের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সড়ক অবরোধ করেছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, গুড়িয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম শিউলি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাত, এলাকার অভিভাবকদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, বিগত কয়েক মাস আগে শিক্ষার্থীর অভিভাবকে বিদ্যালয়ে হেনস্থা করা, গত রমজান মাসে হিন্দু শিক্ষিকা মিতালী রাণী সরকারকে দুপুর বেলা টিফিন চলাকালীন সময়ে অফিসে ভাত খাওয়া নিয়ে অশালীন ভাষায় গালিগালজ করে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া, বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে অভিভাবকগণ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলে তাদের সাথে অশালীন ভাষায় অপমানিত করা, শিক্ষার্থীদেরকে প্রচন্ড রোদে দাড় করিয়ে এ্যাসেম্বলিতে বাধ্য করা, এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক কথা বললে তাঁদেরকে অযোগ্য বেয়াদব বলে গালি দেয়া। গত ২৮ মে তারিখে মিতালী রাণী সরকারের সন্তানের অসুস্থতার কারণে বিদ্যালয়ে আসতে ৫মিনিট দেরী হওয়ায় তাকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে না দিয়ে ড্রয়ারে লক করে রাখে, কোন শিক্ষার্থী এ্যাসেম্বলিতে একটু দেরীতে আসলে তাকে রোদে দাড় করিয়ে রাখে। জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট দিতে দেরী হওয়ায় শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীকে অভিভাবকসহ বিদ্যালয় হতে বের করে দেয়। গত ৩১ মে সহকারী শিক্ষিকা সেলিনা আক্তারের হাত থেকে পিয়নের মাধ্যমে জোড় পূর্বক মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার এক পর্যায়ে নিজেই আক্রমণ করে এবং পরের দিন সকাল ৮টা ৫০মিনিটে সেলিনা আক্তার অফিস কক্ষে প্রবেশ করিলে পিয়নের মাধ্যমে অফিস কক্ষের জানালা বন্ধ করে পিয়নের সহায়তায় মোবাইল ছিন্তাই এর জন্য আক্রমণ করে এবং ঘারে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে মোবাইল নেয়ার চেষ্টার এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ জাতীয় নানাবিধ কারণে অভিভাবকগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদেরকে বিদ্যালয় থেকে বাইরে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে এবং প্রধান শিক্ষকের বদলীর দাবিতে জাতীয় মহাসড়ক সাময়িক ভাবে অবরোধ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক জাহানারা বেগম শিউলি সরকারি আইন ও নিয়মকানুনকে তোয়াক্কা করে না। এছাড়া নিজের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত বিদ্যালয়ে ছুটে যান লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান সুজন, গোকুন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আঃ রশিদ সরকার টোটন, লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী, লালমনিরহাট সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল হামিদ সরকার প্রমুখ।
পরে তারা উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, সহকারী শিক্ষক-প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় এলাকাবাসীর বক্তব্য শুনেন। এর পর ৩সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।