লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে এখন বিভিন্ন ফসলের সমারোহ। চারদিকে শুধু ফসল আর ফসল। মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, গাঁজর, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হচ্ছে তিস্তার বিস্তীর্ণ চরে। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে চাষীরা তাদের পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেলেও এবারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এমফোরসির নামের একটি প্রকল্প চরবাসীর পাশে দাড়িয়েছে। কাজ করে যাচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করণ, গরু, ছাগল পালনসহ নানা কর্মসূচী নিয়ে। ইতিমধ্যে সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে চরাঞ্চলের মানুষ। প্রতি বছরের মত এ বছরেও তিস্তার বুকে অনেকটা অংশজুড়ে চর পড়েছে। যে কারণে চরাঞ্চলের কৃষক সেই চরের পলি পড়া জমিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষ করছেন। হয়েছেও বাম্পার ফলন। এ বছর তিস্তায় ১০হাজার ৮শত হেক্টর জমি চরে পরিণত হয়েছে। যার মধ্যে ৮হাজার হেক্টর জমিতে ফসলের চাষাবাদ হয়েছে। যা গত বছরের থেকে ৫শত হেক্টর জমিতে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। প্রতিবছর কৃষকেরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চরে পাট, তামাক আলু, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, গাঁজর, ভূট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ করে থাকে। ভাল ফলন হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে না পারায় মধ্যসত্তভোগী ও স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ীর নিকট জিম্মি থাকতে হয়। ফসল বিক্রিতে ন্যায্য মূল্য হতে বঞ্চিত হন কৃষকেরা। আর ফসল ঘরে এলেও উৎপাদিত খরচ পর্যন্ত উঠে না। গত ২০২০ সালের জুলাই থেকে বাংলাদেশ সরকার ও সুইজারল্যান্ড সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এমফোরসি নামের একটি প্রকল্প লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ ও হাতীবান্ধা উপজেলার চরবাসীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের মানুষদের প্রশিক্ষণ, বীজ, সার প্রয়োগে পরামর্শ, উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করণ, নারীদের গরু ছাগল পালনসহ নানা কর্মসূচী। ইতিমধ্যে সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে চরাঞ্চলের ১৮ থেকে ২০হাজার কৃষক। প্রকল্পটির পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার এগিয়ে আসার দাবী চরবাসী মানুষের।
ধরলা নদীর চরের কৃষক শামসুল ইসলাম জানান, তিনি দশ বছর ধরে তরমুজ, কুমড়াসহ নানান ফসল চাষ করেন। কিন্তু ভাল বীজ না পাওয়ায় তার ফলন ভাল হতো না। ফলে দামও পেতেন না। এখন এমফোরসির প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে, ভাল বীজ ও কিটনাশক সার নিয়ে চরে আবাদ করেন। এখন ভাল ফলন ও দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করে লাভবান হয়েছেন তিনি। শুধু তিনিই নন তারমত হাজারো কৃষক আজ উপকৃত।
তিস্তা শৈলমারী চরে শাহানাজ পারভীন জানান, বন্যার সময় গরু ও ছাগল মাটিতে রাখার কারণে নানান রোগ বালাই দেখা দিত। চিকিৎসার অভাবে মারা যেত। আমাদের এলাকায় এমফোরসির প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছাগলের উচু ঘর করে সেখানে রাখায় আর রোগ ব্যাধি দেখা যায় না।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হামিদুর রহমান জানান, লালমনিরহাট জেলায় চর এলাকায় ৮হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ গম, ভুট্টা চিনা বাদামসহ বিভিন্ন ফসল। চরে ২০২০ সাল থেকে এমফোরসি নামের প্রকল্পটি কাজ করে যাচ্ছে তাদের প্রধান কাজ ফার্মাসদেরকে তারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে গিয়ে স্থানীয়ভাবে যে কৃষকগুলো আছে তাদেরকে আবার প্রশিক্ষিত করছে। ফলে মধ্যসত্তভোগী কৃষকদের আর ঠকাতে পারছেন না। প্রকল্পটি কৃষকদেরকে উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করণসহ লাভবান করে দিচ্ছে। এই প্রকল্পটির পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন এনজিও যদি কাজ করে তাহলে চর এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.