বৃক্ষ রোপণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যে বৃক্ষ অমূল্য সম্পদ। বৃক্ষহীন জীবন ধু-ধু মরুদ্যান। কথিত আছে, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই মাতৃভূমি বাংলাদেশের বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল একদা। পাখ-পাখালির মধুর গুঞ্জন মনে আনত প্রশান্তি। বহতা নদীর মাঝি নৌকায় পাল তুলে গাইত মনের সুখে জারি, সারি, ভাটিয়ালি, ভাওইয়া গান। অগ্রহায়ণের শেষে ভাপা-পিঠার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ত ঘরে ঘরে। হাওড়-বাওড় ও খাল-বিল, নদী-নালায় মাছ ধরায় পড়ে যেত ধুম। কোথায় হারিয়ে গেল সেই সোনা ঝরা দিনগুলি। শৈশব-কৈশোরের সেই সব স্মৃতি তাড়িত করে আমাদের এখনো। কিন্তু আমরা তো আর ধূসর দিনের দুঃখ বোধ নিয়ে বাঁচতে পারি না। প্রকৃত অর্থে বাঁচতে হলে হারানো বাংলাকে আবারও আমাদের ফিরে পেতে হবে। তা আমরা পারি। পারব কি.....।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের বনভূমি ক্রমান্বয়ে ক্ষীণ হয়ে আসছে। বৃক্ষ নিধন চলছেই। পাশাপাশি ফসলি জমি হ্রাস পাচ্ছে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিগুন উৎপাদন করেও আমরা স্বস্তি পাচ্ছি না। আমরা সকলেই যদি ইচ্ছে ব্যক্ত করি যে, অন্তত এ বছর একটি করে ফলজ-বনজ বা ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করবো এবং তা পরিচর্যার দায়িত্ব নেব, তাহলে কী দাঁড়ায়? আমাদের পরিবেশ রক্ষায় এক বছরেই আমরা পেয়ে যাব প্রায় ১৮কোটি বৃক্ষ। বৃক্ষ রোপণের ফলে অনেক বিলুপ্ত প্রায় বৃক্ষ আবারও আমাদের হয়তো গৌরব ফেরাতে সহায়ক হবে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের শিশু-কিশোররা জানে না, এমন নাম না জানা অনেক গাছগাছালির সন্ধান পাবে। সেই সাথে ফুলের সৌরভ-সৌন্দর্য, পাখিদের কলকাকলিতে উচ্ছ্বল প্রাণ হয়ে উঠবে। বনভূমির অভাবে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় পাখিদের ফিরে পাবে। এখনো গ্রাম-বাংলার প্রান্তরে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শূন্যে ডানামেলে উড়ে বেড়ায়, তাদের সম্পর্কে জ্ঞাত হতে পারবে। কারুকার্যময় পাখিদের নীড় নিরাপদ প্রজননের ঠিকানা হয়ে উঠবে। কবির ভাষায়, 'বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,/ কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই।' এমন কাব্য করা কার্যকর কবিতা যাতে শুধু বইয়ের পাতা কিংবা দুর্লভ আলোকচিত্র/ ছবি হয়ে না ধরা দেয় আজকের শিশু-কিশোরদের তাই কাম্য।
বাংলাদেশের উত্তরের প্রান্ত জেলা লালমনিরহাট। এখানে বিরল প্রজাতির বৃক্ষ 'নাগ লিঙ্গম' রয়েছে। লালমনিরহাটে তারপরও এমন কিছু বিষয় আমাদের আকৃষ্ট করে, যা না দেখলে চোখ সার্থক না হয়ে ওঠে না।
লালমনিরহাট শহর থেকে অনতিদূরে গেলে কোথাও কোথাও গাছ-গাছিতে ভরপুর। ছায়া ঘন সবুজের সমারোহ, পাখিদের শিসপিস পথচারীদের প্রাণ ভরিয়ে তোলে।
স্থনীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি)র তত্ত্বাবধানে সরকারি সড়কে ব্যাপক হারে রোপণ করেই চলেছে ইউক্যালিপ্টাস গাছ। যেন দেখার কেউ নেই।
নয়নাভিরাম বৃক্ষ থেকে বইছে বাতাস। সেই সাথে মাটির ক্ষয়রোধ, পাখিদের প্রজনন ক্ষেত্র, হারিয়ে যাওয়া ঔষধি গাছের সমারোহ, ফল-ফলাধি, বিপুল পরিমাণ জ্বালানি কাঠ এবং জৈব সার পাচ্ছে এলাকাবাসী। এমনি করে আমরা যদি বৃক্ষ প্রেমী হয়ে উটি, তবে বাংলাদেশের গাছ-গাছালি ফুল-ফুল পাখি আগামী প্রজন্মের কাছে 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি' বলবার দৃঢ় প্রত্যয় জেগে উঠবে। চির সবুজের দেশ ফিরে পাব আমরা এমনটাই আশা করছে লালমনিরহাটবাসী।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.