লালমনিরহাটে মনোপলি নিপাত যাক প্রতিযোগিতামূলক তামাক শিল্প মুক্তি পাক বহুজাতিক কোম্পানীর একচেটিয়া আগ্রাসনে বিপন্ন প্রায় দেশীয় তামাক চাষীদের রক্ষায় প্রতিযোগিতা আইনের বাস্তবায়ন সহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে শতবর্ষী তামাক শিল্পের টেকসই উন্নয়ন চাই দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকাল ১১টায় লালমনিরহাট জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় গোল চত্ত্বরে স্থানীয় অবহেলিত তামাক চাষীর আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতি লালমনিরহাটের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক মোঃ অহেদ আলী-এঁর সভাপতিত্বে দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতি লালমনিরহাটের আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ তহিদুল ইসলাম, মোঃ বেলাল হোসেন, সদস্য মোঃ আঃ খালেক মিয়া, মোঃ রফিকুল ইসলাম, রতন কুমার রায়, মোঃ ফরিদুল ইসলাম, অর্জূন চন্দ্র, মোঃ শাহআলম, মোঃ আজিজুল ইসলাম, মোঃ জাহাঙ্গীর আলমসহ শতাধিক স্থানীয় অবহেলিত তামাক চাষীবৃন্দ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
দেশীয় তামাক চাষী কল্যাণ সমিতির বক্তব্য, আপনারা জানেন আজকে আমরা এখানে একটি বিশেষ কারনে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করছি এবং বিগত কয়েক বছর যাবৎ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে এই ধরনের মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচি করে আসছি। এই বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের আবারও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আমরা এদেশের অবহেলিত গরিব তামাক চাষী। আমাদের মাটি এবং আবহাওয়া তামাক চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। আজকে আমরা ঠিকমত তামাক চাষ করতে পারছি না, কেননা আমরা তামাক চাষ করার পর সেটা ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারি না। দেশে বর্তমানে শুধুমাত্র দু’টি বিদেশী কোম্পানী বেশি পরিমান তামাক ক্রয় করে এবং দু-একটি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী অল্প পরিমান তামাক ক্রয় করে। কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগেও আমরা ২৫ থেকে ৩০ টি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীর কাছে ন্যায্য মূল্যে প্রচুর তামাক বিক্রি করতাম। তখন এই সকল দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী কম দামের সিগারেট তৈরি করতো এবং বিদেশী কোম্পানী গুলো শুধুমাত্র বেশি দামের সিগারেট তৈরি করে বাজার জাত করতো। আমরা তাদের জন্য তামাক উৎপাদন করে ন্যায্য মূল্যে বিক্রয় করতাম। কিন্তু এখন আমরা জেনেছি যে, বিদেশী কোম্পানী গুলো বেশি দামের সিগারেটের সাথে সাথে কম দামের সিগারেট উৎপাদন করে বাজার জাত করছে।
ফলে তাদের সাথে দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী গুলো প্রতিযোগীতায় পেরে উঠছে না। এ কারনে দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী গুলো আস্তে আস্তে বাজার হারাতে-হারাতে নিঃস্ব হয়ে তাদের মিল কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে, হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই সকল মিল কল-কারখানাতে আমাদের সন্তান, ভাই ও বোনেরা নিয়মিত কাজ করতো।
বর্তমানে ত্রিশটি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীর মধ্যে মাত্র দু-একটি কারখানা কোন মতে চলছে, বাকি গুলো বন্ধ হয়ে আছে। তারা কোন সিগারেট উৎপাদন করতে পারে না, বিধায় আমাদের কাছ থেকে তামাকও ক্রয় করতে পারে না।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি যদি খোঁজ খবর নেন তবে জানবেন, এদেশে আগে কি পরিমান আর এখন কি পরিমান তামাক উৎপাদন ও বিক্রয় হচ্ছে। বর্তমানে এই তামাক শুধুমাত্র দু’টি বিদেশী কোম্পানী ক্রয় করছে এবং কেন দেশীয় কোম্পানীগুলো ক্রয় করতে পারছে না, তা অনুগ্রহ করে খতিয়ে দেখুন।
বিদেশী কোম্পানী দু’টিই একমাত্র বড় ক্রেতা হওয়ায়, তারা যে দাম দিচ্ছে তাই আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। প্রায়শই তারা উচ্চ গ্রেডের তামাক নিম্ন গ্রেডের দাম দিয়ে তাদের কাছে বিক্রয় করতে বাধ্য করছে। প্রতিযোগীতা মূলক বাজার না থাকার কারণে আমরাও কিছু করতে পারছি না। এটা যেন “নিল চাষের পুনরাবৃত্তি”। তারা যাই বলে তা আমাদের মাথা নত করে মেনে নিতে হচ্ছে।
দেশীয় কোম্পানীগুলো যদি আজ আগের মত ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে, তাহলে আমরা তামাকের ন্যায্য মূল্য পাবো এবং দেশের হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারীর বেকারত্ব দূর হবে। আমরা ভবিষ্যতে তাদের কাছে ন্যায্য মূল্যে আমাদের উৎপাদিত তামাক বিক্রয় করতে পারব এবং উৎপাদনে গিয়ে অধিক লাভবান হবো।
এই শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী কখনো এদেশ ছেড়ে যাবে না এবং তারা ব্যবসা বানিজ্য করে যে মুনাফা অর্জন করবে তা এদেশেই বিনিয়োগ করবে ফলে নতুন-নতুন কর্ম সংস্থানের সুযোগ হবে এবং দেশের বেকারত্ব দূর হবে। কিন্তু আমরা জানি অনেক বিদেশী কোম্পানী এ দেশে এসেছিল তারা ব্যবসা করেছে, মুনাফা করেছে, তারপর তারা ব্যবসা গুটিয়ে চলে গেছে। তারা এদেশের জন্য কিছুই রাখেনি। কিছুদিন আগেও একটি বিদেশী কোম্পানী এ দেশ থেকে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ করে চলে গিয়েছে। তাদের হাতে ছিল বাচ্চাদের টিকা এবং টিকা দেওয়ার মতো সমস্ত ঔষধ কিন্তু তারা চলে যাওয়ায় আজকে আমাদের দেশের অনেক বাচ্চার ঠিকমতো টিকা দেওয়া হচ্ছে না এবং নতুনভাবে অন্য কোম্পানী এসে সেই টিকা উৎপাদনও দ্রুত সম্ভব হচ্ছে না।
তাই দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল তামাক দিয়ে সিগারেট বানিয়ে বাজার জাত করে সরকার প্রতি বছর ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে, তা শুধুমাত্র দু’টি বিদেশী কোম্পানীর হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। এছাড়া প্রতি বছর অনেক তামাক বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি আমাদের মা, আপনার কাছে আকুল আবেদন, আমাদের সুযোগ দিন, আমরা কাজ করে দু-মুঠো ডাল-ভাত খেতে চাই, আমরা উৎপাদন করতে চাই। আমাদের দেশের মাটি উর্বর, আমরা কৃষিকাজে ফিরে যেতে চাই। আমাদের কৃষি কাজে ফিরে যাওয়ার জন্য আমরা আপনার কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীগুলোকে বাঁচানোর জন্য যে নীতিমালা দিয়েছেন তা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।
আমরা আপনার কাছে দাবী রাখতে চাই ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে আপনি এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী ওয়াদা করেছিলেন এবং সংসদে বিল পাস করেছিলেন যে, শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী গুলোর জন্য আলাদা নীতিমালা তৈরি করে যাতে তারা উৎপাদনে ফিরে আসতে পারে এবং ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে। সুতরাং তারা সিগারেট উৎপাদন করে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারলে, তাদের বাজার ফিরে পেলেই তারা আমাদের কাছে আসবে এবং আমাদের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করবে, যাতে আমরা এবং আমাদের পরিবার দু-মুঠো ডাল-ভাত খেতে পারবো।
২০১৮ সালের বাজেটে শতভাগ দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানীর জন্য মহান জাতীয় সংসদে যে নীতিমালা অনুমোদন হয়েছিল সেটি এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, একটি কু-চক্রী মহল সেটি এখনো বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নিকট সবিনয় আরজি, এই দেশে কি শুধু মাত্র দু’টি বিদেশী কোম্পানী থাকবে নাকি ৩০টি দেশীয় মালিকানাধীন কোম্পানী?
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। জয় হোক মেহনতি মানুষের।