লালমনিরহাটে রেজিস্ট্রি মুলে ক্রয়কৃত জমি বেদখল হওয়ার ১০বছর অতিক্রম হলেও আহম্মেদ আলী ও মাসুদ রানার দখলে থাকা জমি নিজেদের দখলে নিতে পারেনি ক্রেতা শাহাজামাল ও তার পরিবার। ক্রেতা শাহাজামাল মুত্যু বরণ করার পর তার স্ত্রী ও সন্তানরা জমি দখল করতে গেলে প্রাণ নাশের হুমকিও দিচ্ছে দখলদাররা। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেও কোন সুফল পাচ্ছে না ক্রেতার পরিবারটি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার লালমনিরহাট পৌরসভার খোচাবাড়ি এলাকায় এমন ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারণে জমি দখলে সহায়তা পাননি ক্রেতা ও তার পরিবার।
প্রাপ্ত অভিযােগে জানা যায়, ক্রয়কৃত জমির পূর্ব মালিক লালমনিরহাট পৌরসভা খোচাবাড়ি এলাকার লালু শেখ ওরফে লালমিয়া। লাল মিয়া গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ সালে ১২শতাংশ জমি শাহাজামাল এবং তার ভাই আরিফুলের নিকট বিক্রি করে। পরে আরিফুল তার অংশ শাহাজামালের নিকট বিক্রি করে। শাহাজামাল তার ব্যবসায়ী প্রয়োজনে ক্রয়কৃত সেই জমি দেখিয়ে রুপালী ব্যাংক এর নিকট ঋণ আবেদন করলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ আবদেনকারী শাহাজামাল এবং তার ভাইয়ের সার্বিক কাগজ পত্রাদি পর্যালোচনা করে ঋণ প্রদান করে। যার মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। ব্যাংক ঋণ পরিষদ করতে হচ্ছে ওই পরিবারটিকে।
শাহাজামালের মৃত্যুর পূর্বে লালমনিরহাট সদর উপজেলার ভূমি অফিসে দেওয়া পিটিশন অনুযায়ী একটি তদন্ত প্রতিবেদনে ক্রেতা মোঃ শাহাজামাল গং তাদের বক্তব্যে জানান যে, বি আর এস ৬৯৮ খতিয়ানের মালিক রাশিদুল ইসলাম, পিতাঃ মোহাম্মদ আলী, আয়শা বেওয়া, জং মোহাম্মদ আলী ১৭ আগস্ট ১৯৯৬ তারিখে ০.০২ একর জমি হাজেরা খাতুনের নিকট বিক্রয় করেন। এদিকে আহাম্মদ আলী, পিতা: পয়েন উল্লাহ ৯ এপ্রিল ১৯৯৬ তারিখে ০.০৪ একর জমি হাজেরা খাতুনের নিকট বিক্রয় করেন। হাজেরা খাতুন ২৭ মার্চ ১৯৯৭ তারিখের ১৮২১ নং দলিল মূলে নূর জাহান বেগম, জং কেরামত আলী এর নিকট উক্ত ৫৮২ দাগে ০.০৬ একর জমি বিক্রয় করেন। নুর জাহান বেগম নিজ নামীয় ক্রয়কৃত জমি ১৭ জুলাই ২০০২ তারিখের ৪৭০৮ নং দলিল মূলে লালু শেখ, পিতা মৃত কদম শেখ নিকট উক্ত ৫৮২ দাগে ০.০৬ একর জমি বিক্রয় করেন। বি আর এস ৬৯৬ খতিয়ানের মালিক রাশিদুল ইসলাম, পিতা মোহাম্মদ আলী ও আয়শা বেওয়া, মোহাম্মদ আলী ৫৮২ দাগের ২৯ অক্টোবর ১৯৯৮ তারিখের ৬০৫৯ নং দলিল মূলে ৫৮২ দাগে ০.১২ একর জমি নিজাম আলী, নুরুল হক, আবুল হোসেন ও রুবেল আহাম্মেদ সর্বপিতা কেরামত আলীগণের নিকট বিক্রয় করেন। নিজাম উদ্দিন ও নুরল হক উভয় পিতা কেরামত আলী ২৫ অক্টোবর ২০০০ তারিখে ২৯১০ নং দলিল মূলে লালু শেখ পিতা কদম শেখ এর নিকট উক্ত ৫৮২ দাগে ০.০৬ একর জমি বিক্রয় করেন। অতঃপর লালু শেখ ওরফে লাল মিয়া ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখের ৩৮২৫ নং দলিল মূলে উক্ত ৫৮২ দাগে ০.১২ একর জমি বিবাদী শাহাজামাল ও আরিফুল ইসলাম উভয় পিতা মোঃ আজগার আলীর নিকট বিক্রয় করেন। এভাবে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে তারা নাম খারিজ কেস নং ১২৬১/২০১৯-২০২০ খারিজ করে নেন জমি তাদের ভোগ দখলে আছে এবং জমি সঠিক আছে মর্মে জানান। আবেদনকারীর খারিজ বাতিলের আবেদনের উপর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, পৌর ও এ অফিসের সার্ভেয়ারকে বলা হলে তারা উভয়ে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করেন।
ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, পৌর ও এ অফিসের সার্ভেয়ার তারা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, বিবাদী শাহাজামালগং আহাম্মদ আলী, রাশিদুল ইসলাম, আয়শা বেওয়া ও নূর জাহান কোন দলের দলিলের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী লালু শেখ, ক্রয় করেন। লালু শেখ ওই ০.১২ একর জমি শাহাজামাল ও আরিফুল ইসলামের নিকট বিক্রয় করেন। সে মতে বি আর এস ২১১৯, ৬৯৮ ও ৯৮২ খতিয়ানের ৫৮২ দাগ হতে ০.১২ একর জমি ১২৬১/২০১১-২০২০ খারিজ অনুমোদিত হয়। যার পর্যালোচনা করে জমির মালিকানা শাহাজামাল বলে প্রমানিত হয়।
এ ব্যাপারে অনুলিপি অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সাব রেজিষ্টার লালমনিরহাট, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, পৌরসভায় প্রেরণ করে। তবু অবৈধভাবে জমি দখলকারীগণ উক্ত জমির দখল ছাড়েনি। বর্তমানে জমি ভোগ দখলকারীদের নিকট বৈধ কাগজ পত্রাদি দেখতে চাইলে তারা তা প্রদর্শন করতে পারেনি।