'এখনো কৈলাসদের (হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ) রেস্টুরেন্টের বাইরে বসে খেতে হয়। মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করি’ লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন লালমনিরহাটের বাসিন্দা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)র আইন বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আবদুল আলিম। সেই পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
বুধবার (৪ জানুয়ারি) জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উপ-পরিচালক এম রবিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) এ বিষয়টি লালমনিরহাটে ব্যাপক আলোচিত হয়।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ।
চিঠিতে আরও উল্লেখ, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী, পুরুষ ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। কিন্তু উল্লিখিত বিষয়টি মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে প্রতীয়মান হয়। যখন ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে মানুষ, তখন দেশের যেকোনো প্রান্তে বৈষম্যের এমন অভিযোগ অনভিপ্রেত ও নিন্দনীয়। এ অবস্থায় অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ২২ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয় চিঠিতে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশনা পেয়ে তিনি আজ সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। তিনি দেখেছেন, হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষ রেস্তোরাঁর বাইরে বসে খাবার খাচ্ছেন। তখন রেস্তোরাঁ মালিককে বলেছেন, এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন, এসব মেনে নেওয়া হবে না। তাঁরাও অন্যদের মতো হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খেতে পারবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, দীর্ঘদিনের সমস্যাটি সমাধানের জন্য সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মানুষের ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে (এডিএম) সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছেন তিনি।
অধ্যাপক মোঃ আবদুল আলিম বলেন, শহরের মিশন মোড় এলাকায় গত মঙ্গলবার সকালে রেস্তোরাঁর বাইরে বসে হরিজন সম্প্রদায়ের একটি পরিবারের সদস্যদের খেতে দেখে তাঁর খুব খারাপ লাগে। তখনই মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ফেসবুকে ছবি দেন। গতকাল মানবাধিকার কমিশন ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার সুরক্ষায় সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। আইনে যে অধিকার মানুষের আছে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদ লালমনিরহাটের সভাপতি রঙ্গলাল বাশফোর বলেন, আমরা কি দেশের নাগরিক না? কেন আমরা হোটেল-রেস্তোরাঁর ভেতরে বসে খেতে পারব না? আমাদের রাস্তায় বসে খেতে হয়, থালা-বাসন, মগ-গ্লাস, চায়ের কাপ সঙ্গে রাখতে হয়। অথচ ফকির, অসুস্থ রোগীরাও ভেতর বসে খেতে পারেন। আজ আমাদের চাকরি বাকরি অন্য সম্প্রদায়ের মানুষজন নিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। শুধু ভোটের সময়ে আমরা মানুষ, ভোটের পরে আমরা নোংরা। অথচ আমরাই সমাজের নোংরা পরিষ্কার করি।
চমক হোটেলের ব্যবস্থাপক গোবিন্দ চন্দ্র বলেন, হরিজনদের হোটেলের ভেতরে বসানো সম্ভব নয়। তাঁরা বেশিরভাগ সময় নোংরা ও মাতাল থাকেন। ভেতরে বসতে দিলে সাধারণ ক্রেতা আসা বন্ধ করে দেবেন হরিজনদের জন্য আলাদা হোটেল তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : অধ্যক্ষ মোঃ রবিউল ইসলাম মানিক
সম্পাদক : মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ
প্রকাশক : মোঃ রমজান আলী
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ হেলাল হোসেন কবির
Copyright © 2024 আলোর মনি. All rights reserved.