লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী সরকারি কলেজের জমিতে ২২বছর ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আদিতমারী উপজেলা শাখার দলীয় কার্যালয় রয়েছে। কলেজের জমি দখল করে কার্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই জমিদাতা। এতে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষা অনুরাগীরা ক্ষুব্ধ। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদিতমারী ডিগ্রি কলেজ ১৯৯১ সালে স্থাপিত হয়। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট কলেজটি জাতীয়করণ হলে কলেজটি নামকরণ হয় আদিতমারী সরকারি কলেজ। ১৯৯৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আদিতমারী উপজেলার কমলাবাড়ি ইউনিয়নের চন্দন পাঠ গ্রামের গিরীশ চন্দ্র বর্মণের ছেলে দীনেশ চন্দ্র বর্মণ তৎকালীন আদিতমারী ডিগ্রি কলেজের নামে রেজিস্ট্রি কবলা করে ১৮শতক জমি দান করেন। দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে, দান করা ১৮শতক জমিতে জমিদাতার পিতা গিরীশ চন্দ্র বর্মণের নামে কলেজ ছাত্রাবাস হবে। বাস্তবে ছাত্রাবাস তো দূরের কথা, সেই জমি জবর দখল করে সেখানে ২০০০ সালে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। এটির অবস্থান আদিতমারী উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে বড়বাড়ী-লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের পাশে।
জমির দলিলের উদ্ধৃতি দিয়ে জমিদাতা দীনেশ চন্দ্র বর্মণ সাংবাদিকদের বলেন, কথা তো ছিল দান করা জমিতে আমার পিতা গিরীশ চন্দ্র বর্মণের নামে ছাত্রাবাস করার। সে জন্যই মূলত কলেজের নামে জমি দান করি। এখন তো আমার আর কিছু করার নেই, যা করার কলেজ কর্তৃপক্ষই করবে।
তিনি আরও সাংবাদিকদের বলেন, আমার বাবা গিরীশ চন্দ্র বর্মণের মৃত্যু হয়েছে ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর। তাঁর নামে কলেজের ছাত্রাবাস নির্মাণ হলে আমার বাবার আত্মা শান্তি পেত, কারণ ওনার সম্মতি নিয়েই জমিটা আমি কলেজের নামে দান করেছিলাম।
জমিদাতা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জমিদানের পর গিরীশ চন্দ্র বর্মণ নামে ছাত্রাবাসের একটি সাইনবোর্ডও টাঙানো হয়। কিন্তু এর কিছুদিন পরেই তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সামছুল ইসলাম সেখানে আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেন। ২০০৩ সালে দুষ্কৃতকারীদের হাতে সামছুল ইসলাম নিহত হওয়ার পর তাঁর পরিবারের লোকজন দলীয় কার্যালয়ের পাশাপাশি সেখানে বিভিন্ন দোকান গড়ে তোলেন। বর্তমানে ওই পরিবারের লোকজনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জায়গাটি।
আদিতমারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আজিজার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কলেজের নামে ছাত্রাবাস নির্মাণের জন্য দীনেশ চন্দ্র বর্মণের দান করা ১৮শতক জমি রয়েছে। বর্তমানে এখানে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়সহ অন্য স্থাপনা রয়েছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
আদিতমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের নব-নির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, তৎকালীন (২০০০ সালে) যাঁরা উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ছিলেন, তাঁরা সেখানে দলীয় কার্যালয়টি নির্মাণ করেছেন।
এ বিষয়ে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল ইসলামের ছেলে ও কমলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ ওমর চিশতি সাংবাদিকদের বলেন, জমিটি আদিতমারী কলেজে দান করতে আমার পিতা জমির মালিককে উদ্বুদ্ধ করেন। আমার পিতা সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় স্থাপন করেন। প্রয়োজন হলে জমিটি আমরা ৯৯বছরের জন্য লিজ নিতে চাই। এত দিন পরে এ নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া বা প্রশ্ন করার কী আছে?
আদিতমারী সরকারি কলেজের সভাপতি ও আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি আর সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবগত করে পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন।