রোববার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় লালমনিরহাট জেলা প্রশসাকের কার্যালয় চত্ত্বরে বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি লালমনিরহাট জেলা শাখার আয়োজনে এ ঘন্টাব্যাপী ওই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি লালমনিরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ রেজাউল করিম স্বপন, সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হাকিম প্রমুখ। এ মানববন্ধনে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন ইটভাটা মালিকসহ কয়েশত শ্রমিক অংশ নেন।
পরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর-এঁর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ্য করা হয়েছে যে, আমরা বাংলাদেশের ইটভাটার মালিকগন বিগত ৫০ বৎসরের অধিক সময় ধরে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ইটভাটার ব্যবসা পরিচালনা করিয়া আসিতেছেন। আমরা দেশের রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ীসহ সকল অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহৃত ইট সরবরাহ করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার বলিষ্ট নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন, পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মান, ঢাকা শহরে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়েয়, কর্ণফুলী ট্যানেল, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এশিয়ান হাইওয়ে, হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরে তৃতীয় টার্মিনালসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্প নির্মানের মাধ্যমে দেশ আজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় সুদূর প্রসারী পদক্ষেপের স্বীকৃতি স্বরুপ আপনার "চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ" পুরস্কার প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের জনগণ গর্বিত।
আপনার এই দূরদর্শী উন্নয়নের সংঙ্গে সমতা রেখে আমরা ইটভাটার মালিকগন বায়ুদূষন রোধে বিগত ২০০২ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক জারীকৃত পরিপত্র মোতাবেক সনাতন পদ্ধতির ড্রাম চিমনীর পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব ১২০ উচ্চতার স্বামী চিমনী ইটভাটা প্রায় ৫০/৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছি। এই পরিবর্তন এক সঙ্গে সম্ভব হয়নি। যাহা প্রায় ৩/৪বছরে বাস্তবায়িত হয়েছে। ২০১০ সনে পরিবেশ অধিদপ্তরের “গণবিজ্ঞপ্তিতে" তৎকালীন ১২০ ফুট উচ্চতার চিমনীর পরিবর্তে আগামী ২বছরের মধ্যে জিগজ্যাগ/হাইব্রিড হফম্যান কিলন/ ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন, ট্যানেল ইত্যাদি প্রযুক্তির ডাটায় রূপান্তরিত করার নির্দেশ প্রদান করেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক আমরা জিগজ্যাগ ভাটা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করি। যাহা বাস্তবায়ন করতে আবারো প্রতি ভাটায় দুই কোটি টাকার অধিক ব্যয় হয় এবং সেই লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে আমরা জিগজ্যাগ ডাটার রূপান্তর কার্যক্রম অব্যহত রাখি। বর্তমানে সারা বাংলাদেশে প্রায় ৯৮% ইট ডাটা জিগজ্যাগ প্রযুক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে। জিগজাগ ভাটা জ্বালানী সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি যাহা উপমহাদেশে টেকসই এবং সহজ প্রযুক্তি হিসাবে পরিচিত।
২০১৩ সনের ইটভাটা নিয়ন্ত্রন আইনের জিগজাগ ভাটা বৈধ পদ্ধতির উল্লেখ থাকলেও উক্ত আইনের ৮(৩)(ঙ) এবং ৮ (৩) (খ) উপ-ধারায় “দুরত্ব নির্দিষ্ট" করনের কারনে দেশের অধিকাংশ জিগজাগ ইটভাটা অবৈধ হয়ে পড়ে ফলে মালিকগণ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স পাচ্ছেন না। উক্ত আইনের ৮(৩) (ঙ) এবং ৮ (৩) (খ) উপ-ধারায় বাংলদেশের কোথাও ইটভাটা স্থাপনের স্থান পাওয়া যাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরে আমরা বহুবার আবেদন করলেও উক্ত ধারাটি অদ্যাবধি কোন পরিবর্তন হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ আইনটি পরিবেশ মন্ত্রানালয় প্রজ্ঞাপন জারী করে ২০১৯ সনে কিছু ধারায় সংশোধন আনিলেও উক্ত আইনের ৮ (৩) (ঙ) এবং ৮ (৩) (খ) ধারায় কোন পরিবর্তন করেনি।
অধিকাংশ ভাটা মালিকণ লাইসেন্স ও ছাড়পত্র না পাওয়াতে নয়রানীর স্বীকার হচ্ছেন। বর্তমানে সারা দেশে ৮হাজারের অধিক জিগজাগ ভাটা রয়েছে। যাহাতে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে প্রায় ৪০লক্ষ দক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত হয়েছেন। ভাটা মালিকগণ প্রতি ভাটার জন্য ৪,৫০,০০০ টাকা ভ্যাট, আয়কর ও স্থানীয় ভূমি উন্নয়ন করসহ প্রতি বছর প্রায় ৫০০কোটি টাকা প্রদান এবং সামাজিক উন্নয়ন কাজে অবদান রাখছেন। বর্তমানে ইটভাটা গুলো বন্ধ হয়ে গেলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হলে এবং প্রায় ৪০লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। যদি ইটভাটা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সরকার ঘোষিত ২০৪১ ভিশন ব্যাহত হবে।
বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে এখন দেশের ইটভাটা সমূহ মাত্র ১০% বায়ু দূষন করছে, জৈব বস্তু পোড়ানোতে ৪০% এবং যানবাহনের কালো ধোয়া ৫০% (দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা ০৬-০৩-২০২১ ইং তারিখে প্রকাশিত রিপোর্টে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের রসায়ন বিভাগের জরিপ)। পূর্বে ইটভাটার দূষনমাত্রা ছিল ৫৮%। বিদ্যমান জিগজাগ ভাটায় আরও অধিকতর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ইটভাটার মালিকগণ এখন সবচেয়ে বড় সমস্যায় আছে ইট পোড়ানোর প্রধান উপাদান জ্বালানী কয়লা নিয়ে। যাহা সম্পূর্ন আমদানী নির্ভর, প্রতিটন কয়লা আমদানীতে কয়লার মূল্য, ট্যাক্স, ভ্যাটসহ সর্বাধিক ১৮ থেকে ২০হাজার টাকা ব্যয় হয় কিন্তু অতিমুনাফা লোভী আমদানী কারকরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ২৮ থেকে ৩০হাজার টাকা বিক্রয় করছেন। এই বিষয়ে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি পাশাপাশি করলার সরবরাহ বৃদ্ধির অন্য দেশীয় মুদ্রায় ভারত থেকে আমদানী করার প্রয়োজন ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ করছি।
ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর হাইব্রিড কিলন এবং ট্যানেল কিলন এর ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ এলাকার দুরত্ব ১০০০মিটারের পরিবর্তে ৪০০মিটার নির্ধারণ করেছে সুতরাং আমাদের জিগজ্যাগ ভাটার জন্য উক্ত আইনের ৮ (৩) (ঙ) ধারায় নিষিদ্ধ এলাকার দূরত্ব ৪০০মিটার এবং আইনের ৮ (৩) (খ) এ বনের দূরত্ব ৭০০মিটার করে আগামী ২০৩০ইং সাল পর্যন্ত আমাদেরকে লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রদান করে বৈধ জিগজ্যাগ ইটভাটা গুলিকে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদান এবং বর্তমান কয়লা সংকট সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি।