মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ ও হেলাল হোসেন কবির: লালমনিরহাটের ড্রাইভারপাড়া এলাকায় রেলওয়ের একটি ভাড়া বাসা থেকে বিভিন্ন প্রকারের বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ ও ১৭৫টি ‘ডিজিটাল বডি ইলেক্ট্রিনিক স্কেল’ মেশিন উদ্ধার এবং ওই বাড়ীর এক দম্পত্তিকে আটক করেছে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার ২৩ জুন বিকাল সাড়ে ৫টায় লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ এরশাদুল আলমের নেতৃত্বে শহরের ড্রাইভারপাড়া এলাকার ওই দম্পতির বাড়ীতে অভিযান চালায় পুলিশ।
সরকারি ওষুধ ও বডি ইলেক্ট্রনিক মেশিন উদ্ধারের ঘটনায় জেলার কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে তোলপাড় চলছে। কেউ কেউ আতঙ্কে রয়েছেন।
আটক দম্পতি হলেন ড্রাইভাড়াপাড়া কলোনীর বাসিন্দা মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রেজা মিয়া (৪৫) ও তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন (৩৮)। আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রেজা মিয়া গাইবান্ধা জেলার সুন্দগঞ্জ উপজেলার ধুমাইটারী এলাকার মমতাজ উদ্দিনের ছেলে ও নিলুফা ইয়াসমিন লালমনিরহাট সদর উপজেলার খোচাবাড়ী এলাকার হাবিবুর রহমানের কন্যা।
অভিযান পরিচালনাকারী লালমনিরহাট সদর থানার এসআই মিজানুর রহমান মিজান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশের হাতে আটক আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রেজা মিয়ার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ৫/৬ বছর থেকে তিনি সরকারি ওষুধ ক্রয় করে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, লালমনিরহাটের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের লোকজনের সহায়তায় ট্যাবলেট, ক্যাপ্সুল, স্যালাইন, ইনজেকশন ও ডিজিটাল বডি ইলেক্ট্রনিক স্কেল মেশিনসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে নিয়ে বাইরে বিক্রি করে টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এতে রাজনৈতিক কয়েকজন নেতারও সম্পৃক্ততা কথা জানান।
জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রেজা মিয়া ১৯৯৬ সালে গ্রামীন ব্যাংকের কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী শাখা থেকে অফিস সহায়কের পদ থেকে চাকুরি চ্যুত হন। এরপর লালমনিরহাটে চলে আসেন এবং নিলুফা ইয়াসমিনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গত ১০/১১ বছর আগে লালমনিরহাট রেলওয়ে অফিস থেকে ড্রাইভারপাড়া কলোনীর একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানেই গড়ে তোলেন সরকারি ওষুধ চোরাকারবারি। টানা গত ৫/৬ বছর থেকে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ এরশাদুল আলম বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রেজা মিয়া ও তার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিনকে আটক ও চীনের তৈরি ১৭৫টি ডিজিটাল বডি ইলেক্ট্রনিক স্কেল মেশিন সহ বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ আটক করেছি। মেশিন গুলো জব্দ তালিকা করা হয়েছে। এখন ওষধ গুলো চেক করে করে জব্দ তালিকা করার কাজ চলছে। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করা হবে।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম বলেন, ওষুধের গায়ে ও ডিজিটাল বডি ইলেক্ট্রনিক স্কেল মেশিনের মোড়কের ওপর সরকারি সম্পত্তি লেখা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লালমনিরহাটের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে কিনেছেন বলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। আমরা আশা করি জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায় বলেন, পুলিশের অভিযানে সরকারি ওষুধ ও বডি ইলেক্ট্রনিক মেশিনসহ এক দম্পত্তিকে আটক কথা শুনেছি। সেসব ওষুধ ও মেশিন লালমনিরহাটের হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কী না-খতিয়ে দেখার মৌখিক নির্দেশ দিয়েছি। যদি লালমনিরহাট জেলার কোনো সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের হয়ে থাকে তাহলে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।