লালমনিরহাটে নিজ ঘরে ফিরতে না পারা বানভাসি মানুষের জীবন কাটছে ভাসমান অবস্থায়। এখনও ডুবে আছে তাদের ঘর-বাড়ি। তাই আশ্রয় হয়েছে নৌকা ও কলাগাছের ভেলা ও অন্যের বাড়ি এবং ওয়াপদা বাঁধের উপর। কাটছে দুর্বিসহ জীবন। এদিকে উঠানামা করেছে পানি। উঁকি দিচ্ছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগব্যাধি। অনভ্যস্ত এই ভাসমান জীবন থেকে মুক্তি প্রয়োজন। কিন্তু বানভাসিদের জীবনে সেই দিন কবে আসবে কেউ জানে না। তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষ। তাইতো পানির সঙ্গে সখ্যতা তাদের জন্ম-জন্মান্তরের। প্রতি বছরের একটা নির্দিষ্ট সময় পানিতে ডুবে থাকে চারপাশ। চারপাশে পানি থাকলেও নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় জীবন অভ্যস্ত নয় এখানকার মানুষ। ভাসমান এই জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ। এমনিতে দেখে বুঝার উপায় নাই কী বিপদ যাচ্ছে মানুষগুলোর উপর দিয়ে। সন্ধ্যা নামে এদের বন্দী জীবনে। বিদ্যুৎ নাই। চুলার ব্যবস্থা আছে বা নাই। থাকলেও এক বেলার বেশি রান্না করার সুযোগ নাই। বানের পানি নামছে ধীরে ধীরে। কিন্তু সেই ঘরে ওঠার পরিবেশ নেই তাদের।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিকাল ৩টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির সমতল ৫২.৩০মিটার, (বিপদসীমা= ৫২.৬০মিটার) যা বিপদসীমার ৩০সে.মি নিচে। কাউনিয়া পয়েন্টে পানির সমতল ২৮.৯৭ মিটার, (বিপদসীমা =২৯.২০মিটার) যা বিপদসীমার ২৩ সেঃমিঃ নিচে। ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি সমতল ৩১.১০মিটার, (বিপদসীমা= ৩১.০৯মিটার) যা বিপদসীমার ০১সেঃমিঃ উপরে। পাটগ্রাম পয়েন্টে পানি সমতল ৫৮.৮৬ মিটার, (বিপদসীমা= ৬০.৩৫মিটার) যা বিপদসীমার ১৪৯ সেঃমি নিচে। সকাল ০৮টা পর্যন্ত লালমনিরহাটে বৃষ্টিপাত ০৬মিলিমিটার।
পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার পরিবারগুলো পানিবন্দি। ইতিপূর্বে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে। তবে ভারতে পানির প্রবাহ কমে গেলে তিস্তার পানি আবারও কমবে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট, কুলাঘাট, বড়বাড়ী ইউনিয়ন ধরলা নদীর বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে রাস্তাঘাট, হুমকির মুখে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ভেঙ্গে গেছে বাড়ী-ঘর।
অপরদিকে রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, চাতলা, মালদহ, ত্রিমোহীনি, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই ও ভেটেশ্বর নদীতে বন্যার পানিও বাড়তে শুরু করেছে।