সর্পিল গতিতে বয়ে যাওয়া তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরে অবস্থিত লালমনিরহাট জেলাটি রংপুর বিভাগের অন্তর্গত। বন্যার প্রকোপ প্রতিবছরই এ এলাকায় পড়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় এলাকার মানুষ। কিন্তু এবারের বন্যা স্মরণকালের ভয়াবহ এবং করালগ্রাসী রূপ নিয়ে এ জেলার মানুষের সামনে আবির্ভূত হয়েছে। বন্যার ভীষণতায় মানুষ শুধু আতঙ্কিত হয়নি, হয়ে পড়েছিল হতবিহ্বল। নদীর পাড় ভেঙেছে, বৃক্ষ উপড়ে গেছে, রাস্তা ভেঙেছে, মাঠের পর মাঠ যেখানে ফলে সোনালী ফসল, সব ডুবে যায় বিশাল জলরাশির তলে। মনে হয় যেন দিগন্তজোড়া নদী, মাঝে মাঝে বাড়িগুলোকে দূর থেকে দেখে মনে হয় সমুদ্রের মাঝে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ। এ অবস্থায় মানুষের আশ্রয় নেওয়ার জায়গা, প্রাণ বাঁচানোর মতো খাদ্য, চিকিৎসার ঔষধ, শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বনাশা, সর্বগ্রাসী বন্যায় এ অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অভাবনীয়। ঘর-বাড়ি ধ্বংস হচ্ছে, পাকা রাস্তা ধ্বংস হচ্ছে, কাঁচা রাস্তা, পানির প্লাবনে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। দীর্ঘদিন জমে থাকা দুষিত পানির কারণে শুরু হয়েছিল ডায়রিয়া, উদরাময়, আমাশয়ের মতো রোগ, যা মহামারি আকার ধারণ করেছিল। এসব জটিল রোগের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন হচ্ছেন, তার মধ্যে অধিকাংশই শিশু। স্কুলে পানি উঠছে। ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লালমনিরহাটের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো মানুষের বড় অভাব। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতার নামে যে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। তাই বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি, স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে হবে। যা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লালমনিরহাটের জনজীবনে স্বস্তি এনে দিবে। পরিশেষে বন্যার্তদের পাশে যাঁরা সহায়তা হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।