আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষ্যে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলায় ১শত ২৫টি ভূমিহীন পরিবারের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার জন্য প্রকল্পের জমি ক্রয়ে দূর্নীতি করায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ২একর ৮দশমিক ৩৭শতক জমি লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা মাসুম ২জন ব্যক্তির কাছে ক্রয় করে। প্রতি শতক জমি ৩২হাজার টাকা দাম নির্ধারণ হয়। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাট সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রার হয়। প্রকল্পের সরকারি তহবিল হতে প্রায় সাড়ে ৪লক্ষ টাকা দলিল রেজিস্ট্রার খরচ পরিশোধ করা হয়েছে। প্রকল্পের অর্থ লোপাট করতে চক্রটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের সরকারি খাস জমি ভুয়া কাগজপত্রে ২জন ব্যক্তি মালিকানা দেখায়। জমি বিক্রির অর্থ সরকারি চেকের মাধ্যমে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল কিন্তু লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রশাসনের জালিয়াতিতে জড়িত চক্রটি নিজেদের কাছে চেক রেখে দেয়। এই নিয়ে তৈরি হয় অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্ব। বিষয়টি আলোচনা হলে জালিয়াতি চক্রটি ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে ও ধামাচাপা দিতে জমি রেজিস্টারের দলিলটি বাতিলের আবেদন করে। প্রকল্পের তহবিল হতে পরিশোধ করা সাড়ে ৪লক্ষ টাকা সরকারি ফি নিজেরা সংগ্রহ করে অতি গোপনে জমা দিয়ে দেয়।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের কাশিনার ঝাড় এলাকার রংপুর-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের পাশে দুই দাগে ১একর ৭৪শতাংশ জমি মালিক সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
১৯৭৩ সালে সড়ক ও জনপদ বিভাগ কয়েক দাগের জমি অধিগ্রহণ করে ছিল। রংপুর-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণে ইটভাটা, নির্মাণ সামগ্রী ও ভারী যন্ত্রাপাতি রাখতে ওই জমি কয়েক জন কৃষকের কাছে অধিগ্রহণ করে। অধিগ্রহণ মূল্য সড়ক জনপদ বিভাগ চুকিয়ে দেয়। জমির পরিমান ৩দশমিক ৮৮একর। সিএস দাগ নং-২৩৬৬, ২৩৬৭, ২৩৭০, ২৩৮১, ২৩৮২, ২৩৮৩, ২৩৮৪, ২৩৯২, ২৩৯৩ ও ২৩৯৫। যার এল.এ কেস নং- ১৭/১৯৭৬-১৯৭৭। জাতীয় মহাসড়কের কাজ শেষ হলে সড়ক জনপদ বিভাগ জমির মালিকানা চিহ্নিত করতে বিশাল সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয়৷ জমির চারপাশে কংক্রিটের স্থায়ী সীমানা পিলার দেয়। জমিতে ফলজ ও বনজ বৃক্ষ রোপন করে। তবে উক্ত জমি পূর্বের মালিক দের স্বজনরা ভোগ দখল করে আসছিল। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষক আলতাফ হোসেন (৪৫) ও তার চাচা স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন হাসেন আলী (৫৭) কে সরকারি খাস জমির নিষ্কলুষ মালিক বানিয়ে পুনঃরায় সরকারি অর্থে কিনে নেয়ার চুক্তি করে। মৌখিক চুক্তিমতে প্রতি শতক জমির মূল্য সরকার ৩২হাজার টাকা দিবে। তারা পাবে ২০হাজার টাকা করে। অতিরিক্ত ১২হাজার টাকা নিবে জালিয়াত চক্র। দলিল সম্পূর্ণ হয় চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি। আলতাবের দলিল নম্বর- ১০৫৯, জমির মূল্য ৪১লক্ষ ৩৪হাজার টাকা ও হাসেন আলীর দলিল নম্বর- ১০৬১, জমির মূল্য ২৫লক্ষ ৩৪হাজার। লোভে পড়ে ইতোমধ্যে কৃষক আলতাব ও হাসেম আলী পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ২০শতাংশ জমি বিক্রি করে ঘুষ হিসেবে ভূমি অফিসের জালিয়াতি চক্রের হাতে তুলে দিয়েছে। এখন তারা নিঃস্ব-রিক্ত।
এদিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকল্পের অধীনে ৩০ জুনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষ উপলক্ষ্যে নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। প্রকল্পের জমি ক্রয় সংক্রান্ত দূর্নীতির কারণে ১শত ২৫টি গৃহহীন পরিবার বঞ্চিত থাকবে।
জমির মালিক আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৩ সালে আমার জন্ম হয়নি। আমার দাদা এই জমি আমার কাছে বিক্রয় করেছিল। আমি কিভাবে জানবো এই জমি আমার নয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা মাসুম আপার কথা বিশ্বাস করাই কাল হলো আমার।
আরেক জন জমির মালিক হোসেন আলী সাংবাদিকদের বলেন, জমি বিক্রয়ের আগে আমাদের উপজেলায় মাইক্রোবাসে করে জামাই আদরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কথা হয়েছিল জমির দলিল মূল্য শতক প্রতি ৩২হাজার আর আমরা পাবো ২০হাজার করে। এখন আমার সবই শেষ। জমিটি বাবার নামে থাকায় আমরা ওয়ারিশরা ভাগবাটরা করে নেই। এই জমি আর আমার থাকলো না এখন আমার কি হবে?
লালমনিরহাট সদর উপজেলা ভূমি অফিসার রুবেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের কাছে কোন রেকর্ড ছিল না জমিটি কার। আমরা জমির খারিজ তাদের নামে পেয়েছি তাই জমিটি নিষ্কণ্টক বলে প্রতিবেদন দিয়েছি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, জমি ক্রয় করার মত স্টাম্প কাগজ তাদের ছিল তাই জমি ক্রয় করেছি। পরবর্তীতে যখন জমির টাকা দিবো তখন আমার সন্দেহ হয় তাই পূণঃরায় তদন্ত করে জমিটি সরকারের বলে আমরা জানতে পারি। তাই টাকা দেওয়া হয়নি। তবে তিনি কমিশনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। জমি ক্রয় করে কেন রেজিস্ট্রি অফিসে চেক দিলেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন উত্তর দেননি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, জমি ক্রয়ের ঘটনাটি জানি। পরবর্তীতে তাদের টাকা দেয়া হয়নি। দলিল বাতিলের আবেদন করা হয়েছে।