আলোর মনি রিপোর্ট: সুপারির জন্য বিখ্যাত জেলা লালমনিরহাট। অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিত লালমনিরহাটের সুপারির এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন ও ভালো দামে খুশি স্থানীয় সুপারির বাগান মালিকরা। করোনার এই ক্রান্তিকালে সুপারির ভালো দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে বাগান মালিকদের মুখে। বলা হয়ে থাকে লালমনিরহাটের মাটি ও আবহাওয়া সুপারি উৎপাদনে উপযোগী।
এ জেলার বেশির ভাগ বাড়ির পাশের উঠানে সুপারির গাছ আছে। এছাড়াও চাষিদের রয়েছে এলাকাজুড়ে সুপারি বাগান। সুপারির বাগান করে উৎপাদন করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সুপারি। অর্থকারী এ ফসলকে ঘিরে এ অঞ্চলে দেখা দিয়েছে অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা। উৎপাদিত এ ফসলের বাজার দর ভালো থাকায় সুপারি চাষে আগ্রহ বাড়ছে এখানকার মানুষের।
জানা যায়, সুপারির মৌসুম শুরু ফাল্গুন-চৈত্র মাসে। মূলত চৈত্র মাস আর বৈশাখ মাসেই সুপারির ভরা মৌসুম। তবে এবার সময়ের আগে বাজারে এসেছে সুপারি। মাঘ মাসের শুরুর দিকে বাজারে সুপারি আসতে শুরু করে। এতে সুপারি ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে সুপারি ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে লালমনিরহাট জেলার প্রতিটি হাট-বাজারেই প্রচুর পরিমাণে সুপারি আসে। এখানকার সুপারির খাল-ডোবা, পুকুর ও পানিভর্তি পাকা হাউজে ভিজিয়ে রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আর অবশিষ্ট্য সুপারি দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ ছাড়াও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষি, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। লালমনিরহাটের সুপারির প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র না থাকায় অনেক সময় কৃষকরা সুপারির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে।
এবার মৌসুম শুরু হওয়ার আগ থেকেই সুপারি বিক্রির প্রধান মোকাম লালমনিরহাট সদর উপজেলার লালমনিরহাট, নয়ারহাট, বড়বাড়ী হাট, দুড়াকুটি হাট, গোশালা বাজার, আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি হাট, কুমড়িরহাট, কালীগঞ্জ উপজেলার শিয়ালখাওয়া হাট, চাপারহাটসহ স্থানীয় প্রতিটি হাট-বাজারে সুপারিকে ঘিরে বর্তমানে চলছে জমজমাট ব্যবসা।
সুপারি চাষি মোঃ সাহেব আলী জানান, সুপারি গাছের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে তদারকির কারণে গাছে রোগ-বালাই কম ও ফলন বেশি হয়েছে। গাছ রোপণ ও সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণে নিজ নিজ আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নে লালমনিরহাটের অর্থকরী ফসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারছে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা নিজেদের চাহিদামতো সুপারি স্থানীয় পাইকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করছেন। এ বছর প্রতি পোন সুপারি (৮০টি) মানভেদে ১শত ২০টাকা থেকে ১শত ৭০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষক লীগ লালমনিরহাট সদর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মোঃ হযরত আলী জানান, লালমনিরহাটের সুপারির ঐতিহ্য রয়েছে। আর সুপারির জন্য এ জনপদ বিখ্যাত। তাই বলা যায়, সুপারি লালমনিরহাটের অন্যতম অর্থকরী ফসল। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সুপারি চাষ, পরিচর্যা, ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে আসছে। সুপারি বাগান করার মধ্য দিয়ে এখানকার কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কিছুটা বেশি। এতে ভালো দাম পেয়ে খুশি সুপারি চাষিরা।