আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাটে প্রতিটি গাছের কচি পাতার মুখে মুখে থোকায় থোকায় আসতে শুরু করেছে লিচুর সোনালী মুকুল। ফাল্গুনের পহেলা সপ্তাহ থেকে সোনারঙ্গা নাক ফুলের মতো মুকুলগুলো সুবাতাস ছড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসে। লিচু উৎপাদনের জেলাগুলোর মধ্যে লালমনিরহাট জেলার শতাধিক গ্রামের নাম মানুষের কাছে এখন বেশ সমাদার পেয়েছে। লিচুতে সেরা লালমনিরহাটের যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেই ক্রমান্বয়ে যেন লিচু বাগানের পরিধি বাড়ছেই।
ফাল্গুন মাসের শেষে বাগানগুলোতে লিচুর মুকুল থেকে কুঁড়ি আসা শুরু হবে। আর চৈত্র মাসের শুরুতে কুঁড়ি থেকে ফুটবে গুটি গুটি লিচু।
সবুজ গুটি থেকে থোকা থোকা বৈশাখ মাসের শেষে টকটকে লাল রঙ্গে রাঙাবে লিচুর গ্রাম। লিচুর রাজ্যে পরিণত হবে লালমনিরহাটের শতাধিক গ্রামগুলো। লালমনিরহাট জেলার মাটির গুণাগুণ উর্বর হওয়ার কারণে এই অঞ্চলের লিচুর আটি ছোট হয় মাংস বেশি আর রসালো হয় লালমনিরহাটের লিচু।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেকটি গাছে গাছে মুকুল আসতে শুরু হয়েছে। আর বাগান পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছেন লিচু চাষিরা। লিচু বাগানে পাখিদের আনা-গোনা, নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ এই অঞ্চলের পথচারী ও এলাকাবাসী।
লিচু চাষিরা জানান, চলতি মৌসুমে অধিকাংশ গাছেই মুকুল আসবে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে এবার লিচুর বাম্পার ফলন হবে। আর আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ফুলে ফুলে ছড়িয়ে পড়বে বিভিন্ন এলাকা। মুকুল এসে যেন ঝরে না পড়ে, তার জন্য এখন থেকেই বাগানের দিকে নজর রাখছেন বাগান মালিকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি (লালমনিরহাট, পাটগ্রাম) পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে মোজাফ্ফর বা দেশি এবং বোম্বাই লিচু। বিভিন্ন বাগানে চায়না-৩, কদমী, বেদানা লিচুর চাষও হচ্ছে। দেশি বা মোজাফ্ফর লিচু পরিপক্ক হয়ে সবার আগে বাজারে আসে। তবে ব্যবসায়ীরা বোম্বাই ও চায়না-৩ লিচু বেশি দামে বাজারে বিক্রি করে থাকেন। আবার বোম্বাই লিচু আকারে বেশ বড় হয়ে থাকে এবং খেতে বেশ সুমিষ্ট। আর চায়না লিচু আকারে দেশি লিচুর মত হলেও খেতে খুবই সুস্বাদু হয় এবং আঁটি ছোট হয় বলে দেশ-বিদেশে বেশ সুনাম রয়েছে।
মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের কৃষক হযরত আলী বলেন, আমার ১দোন জমিতে লিচু গাছের পরিচর্যা করা হচ্ছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে আর প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হয়, তবে ভালোই লিচু উৎপাদন হবে বলে আশা করছি।
মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের কৃষক মোকলেছুর রহমান বলেন, বাগান কয়েক ধাপে বিক্রি হয়। গাছে মুকুল আসার আগেই এবং লিচু গুটি হওয়ার পরে বাগান বিক্রি হয়। লিচু পাকার আগেই বেশ কয়েকবার পরিবর্তন হয় বাগানের মালিকানা। তবে অনেক বাগান মালিকরা লাভের আশায় নিজেই শ্রম দেন। অনেক সময় খরার কারণে লিচুর আকার ছোট হয়ে যায়। আবার অনেক সময় কালবৈশাখী ঝড়ে সব লণ্ডভণ্ড হয় লিচু বাগান। তখন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
কোদালখাতা গ্রামের কৃষক ডাঃ অনিল চন্দ্র বর্মণ বলেন, গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। বাগানে কীটপতঙ্গ, মাকড়সা দূর করার জন্য বালাইনাশক স্প্রে করা হয়েছে।