আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাটের কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত পরিচালিত হয়ে আসছে। অতি সম্প্রতি সময়ে বেড়িয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।
লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের কুলাঘাট বাজারের পাশেই অবস্থিত কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়ার মান ভালো হলেও দীর্ঘ দিন থেকে চলছে নানা অনিয়ম।
জানা যায়, করোনা কালীন সময়ে বিদ্যালয়টি বন্ধ হওয়ার কিছুদিন পরেই অফিস কক্ষ থেকে অফিসিয়াল টেবিলটি উধাও। যার দৈর্ঘ্য ১২ফিট ও প্রস্থ ৪ফিট এবং আনুমানিক মূল্য ৩০হাজার থেকে ৩৫হাজার টাকা। এর আগেও বিদ্যালয়টি থেকে পানির পাম্প, পানির ট্যাংক একইভাবে উধাও হয়ে যায়। বিদ্যালয়ের নামে থাকা জমির ১একর ৮শতাংশের জন্য ৪৪হাজার টাকা আইন উদ্দিন, মঈন উদ্দিন ও মফিজ উদ্দিনের কাছ থেকে নিয়েছেন। ৩০শতাংশ জমির জন্য ফজল মিয়ার ছেলে ফারুকের কাছে থেকে ৩০হাজার টাকা নিয়েছেন। ২০শতাংশ জমির জন্য সাফায়েত মাস্টারের কাছ থেকে ৩৫হাজার টাকা জমি বন্ধক বাবদ নেন। তৎকালীন দায়িত্বে থাকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনরূপ লিখিত ডকুমেন্ট দেয়া হয়নি, জমি বন্ধক গ্রহীতাদেরকে। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার অজুহাতে আইন উদ্দিন, মঈন উদ্দিন ও মফিজ উদ্দিনের কাছ থেকে ১লাখ ৫০হাজার টাকা নিয়েছেন, ফারুকের কাছ থেকে ২০হাজার টাকা জমি বন্ধকের উপর বাড়িয়ে নেওয়া হয়। কোন প্রকার লিখিত ডকুমেন্ট ছাড়াই এবং বিদ্যালয়ের ব্যাংক তহবিল থেকে ৬০হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে লিখিত রেজুলেশনের মাধ্যমে।
কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী জুয়েলের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, টেবিলটি পুরাতন হওয়ার কারণে দীর্ঘদিন জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে ছিল তাই নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে যা রেজুলেশন খাতায় যাবতীয় তথ্যসহ লিখিত রয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ে নৈশ্য প্রহরী না থাকায় পানির ট্যাংকটি পাইপসহ হারিয়ে যায়। এবং পানির পাম্পটি বিদ্যালয়ে রয়েছে।
জমি বন্ধকের টাকা এবং বিদ্যুৎ বিল বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করার পর অতিরিক্ত টাকা থেকে ৬টি চেয়ার তৈরী করেন। অবশিষ্ট টাকার হিসাব তিনি খাতাপত্র ছাড়া বলতে পারবেন না। আমি আরেকটি টেবিল ফার্নিচারের দোকানে বানাতে দিয়েছি। তাছাড়া আমি কয়েক বছর হয় স্ট্রকের রোগী।
কুলাঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, নিলামে টেবিল বিক্রির বিষয়ে আমি জানিনা এ ধরনের কোন রেজুলেশনে আমি স্বাক্ষর করিনি। তবে ১লাখ ৫হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ছিল মর্মে বিদ্যালয়ের ব্যাংক তহবিল থেকে ৬০হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। যেখানে আমিও স্বাক্ষর করেছি এবং জমি বন্ধকের টাকা প্রধান শিক্ষক বাড়িয়ে নেওয়ায় জমি বন্ধক গ্রহীতারা বেশ কয়েকবার এসেছিল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে সেখানেও তিনি স্বাক্ষর করেননি। এখন বিদ্যালয়ের যে পানির পাম্পটি রয়েছে সেটি ঠিকাদার বিদ্যালয়ের কাজের সময় দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী জুয়েল স্ট্রক করার পরে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)র দায়িত্ব পালন করেন আলমগীর হোসেন। তিনি দায়িত্বে ছিলেন নামে মাত্র। বিদ্যালয়ের সকল কাজ পরিচালনা হত, শাহজাহান আলী জুয়েলের স্ত্রী (সহকারি শিক্ষিকা) কায়সারুন নাহার ও তাঁর নিজের চাচি শিউলি বেগমের কথায়। আরও জানান যে, টেবিলটি বর্তমানে শিউলি বেগমের বাড়িতে রয়েছে যা বার বার ফেরত চাইলেও তা ফেরত দেওয়া হয়নি।
জমি বন্ধক গ্রহীতা মঈন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ বিল অনেক টাকা বকেয়া রয়েছে জন্য আমাদের কাছে টাকা বাড়িয়ে চায়। তখন আমি ও আমার ২ভাই মিলে ১লাখ ৫০হাজার টাকা দেই স্ট্যাম্পে চুক্তি হবে মর্মে কিন্তু পরবর্তীতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনকে বার গিয়েছি কিন্তু আমাদেরকে স্ট্যাম্প করে দেওয়া হয়নি।
ফজল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে ফারুক একজন অটোচালক অনেক কষ্ট করে তখন ২০হাজার টাকা দেয় কিন্তু তার কোন লিখিত দেননি তারা। বেশ কিছু দিন গিয়েছিলাম বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা নানা অযুহাতে ঘুরিয়েছে, কোন সুফল পাইনি আমরা।