আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নব-নির্বাচিত ইউপি সদস্যের টর্চার সেলে নির্যাতিত হওয়া যুবক আনোয়ারুল ইসলাম (৩০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। নিহত আনোয়ারুলের মরদেহ নিয়ে আজ জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয়রা।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার নামুড়ি বাজারে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করা হয় স্থানীয় ও নিহতের আত্মীয়ারা।
স্থানীয়রা অভিযোগ জানায়, নব-নির্বাচিত ইউপি সদস্যের টর্চার সেলে অমানুষিক নির্যাতনে আনোয়ারুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। টানা ৬দিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে বুধবার সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। মৃত আনোয়ারুল আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নির্বাচন কালীন সময়ে পার্শবর্তী কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রার্থী মোজ্জাম্মেল হককে দেড় লাখ টাকা ধার দেন আনোয়ারুল। নির্বাচনে জয়লাভের পর সেই টাকা পরিশোধ করতে চাপ দেন তিনি। এ সময় টাকা না দিয়ে তাকে ভয়ভীতি দেখান মোজাম্মেল। এর মধ্যে ৪ জানুয়ারি টাকা দেয়ার কথা বলে আনোয়ারুলকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন মোজাম্মেল। এরপর নিজের টর্চার সেলে আটকে রেখে দুই দিন অমানুষিক নির্যাতন করেন।
বিষয়টি বুঝতে পেরে ইউপি সদস্যের বাড়িতে আনোয়ারুলকে উদ্ধার করতে গেলে আটকে রাখা হয় তার প্রতিবেশী রোকনুজ্জামানকেও। পরে তার ওপরও অমানুষিক নির্যাতন চলে। এরপর ৬ জানুয়ারি আনোয়ারুলের পরিবারের সদস্যরা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে পুলিশ মোজাম্মেলের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালায়। এ সময় আনোয়ারুলের মোটর সাইকেল উদ্ধার করে তারা।
এর মধ্যে মূমুর্ষ আনোয়ারুল ও রোকনুজ্জামানকে স্থানীয় তেতুলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ফেলে সটকে পড়েন অপহরণকারীরা। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করে। আহত আনোয়ারুলের মাথাসহ সারা শরীরে অসংখ্য লোহার পেরেক লাগানো ছিল। হাসপাতালে নিজের ওপর হওয়া অমানুষিক নির্যাতনের বর্ণনাও দেন আনোয়ারুল।
এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে ঘটনার রাতেই নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য মোজাম্মেল, তার ছোট ভাই মোশারাফ হোসেন ভুট্টু ও ছেলে সুজনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১১ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন মোজাম্মেল ও তার ছোট ভাই। কিন্তু আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আজ দুপুরে আনোয়ারুলের মরদেহ নামুড়ি বাজারে পৌঁছায়। পরে হাজার হাজার জনতা তার মরদেহ জাতীয় মহাসড়কে রেখে লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করে বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। এতে জাতীয় মহাসড়কের উভয় পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। পরে খবর পেয়ে আদিতমারী থানা পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ মোক্তারুল ইসলাম বলেন, মহাসড়ক স্বাভাবিক করতে চেষ্টা চলছে।