শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাটে সেনা বাহিনীর সার্জেন্টের পরিবারের উপর হামলা, আহত ৫, সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি লালমনিরহাটে সাংবাদিকের উপর হামলাকারী মাইদুল গ্রেফতার লালমনিরহাটের কৃষকেরা আগাম জাতের আলু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন লালমনিরহাটে বিশ্ব শান্তি কল্পে ১৬ প্রহর ব্যাপী অখন্ড শ্রীশ্রী হরিনাম সংকীর্তন ও অষ্টকালীন লীলা কীর্তন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে ৪র্থ উপজেলা স্কাউট সমাবেশ, মহাতাঁবু জলতা ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত সরকারের নতজানু স্বভাবের কারণে ভারত শুধু নিয়েছে, বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি-লালমনিরহাটে মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম লালমনিরহাটে ইটভাটায় যাচ্ছে ফসলি জমির মাটি! লালমনিরহাটের সাকোয়া ব্লকে সমলয় পদ্ধতিতে ব্রিধান-৯২ ধানের বীজতলা তৈরি হচ্ছে! লালমনিরহাটের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও জনসংযোগ মেলার শুভ উদ্বোধন, কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে দিন দিন খেজুর রসের কদর বাড়ছে!
প্রজন্ম কিংবদন্তি আজাদদের চিনেনা

প্রজন্ম কিংবদন্তি আজাদদের চিনেনা

ঢাকার সবচেয়ে বড় লোক পরিবারের ছেলে মাগফার উদ্দিন চৌধুরী আজাদ। তখনকার দিনে এলভিস প্রিসলির গান শোনার জন্য এক ধাক্কায় ১০০০টাকার রেকর্ড কিনে আনতো। তাদের বাড়িতে হরিণ ছিল, সরোবরে সাঁতার কাটত ধবল রাজহাঁস, মশলার বাগান থেকে ভেসে আসত দারুচিনির গন্ধ। (ডাকে পাখি খোলো আঁখি, এই গানটার শুটিং হয়েছিল তাদের বাড়িতে)।

আজাদ ক্লাস সিক্সে পড়ে, সেন্ট গ্রেগরি। ১৯৬০ এর দশক। আজাদের বাবা আরেকটা বিয়ে করবেন। আজাদের মা বললেন, তুমি বিয়ে করবে না, যদি করো, আমি একমাত্র ছেলে আজাদকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাব। আজাদের বাবা আরেকটা বিয়ে করলে আজাদের মা সাফিয়া তার বালকপুতের হাত ধরে ওই রাজপ্রাসাদ পরিত্যাগ করেন এবং একটা পর্ণকুটীরে আশ্রয় নেন। ছেলেকে লেখাপড়া শেখান। আজাদ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করে।

তার বন্ধুরা যোগ দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধে, ফিরে এসেছে আগরতলা থেকে, ট্রেনিং নিয়ে। তার ঢাকায় গেরিলা অপারেশন করে। বন্ধুরা আজাদকে বলল, চল, আমাদের সাথে, অপারেশন করবি। তুই তো বন্দুক পিস্তল চালাতে জানিস। তোর আব্বার তো বন্দুক আছে, পিস্তল আছে, তুই সেগুলো দিয়ে অনেকবার শিকার করেছিস।

আজাদ বলল, এই জগতে মা ছাড়া আমার কেউ নেই, আর মায়েরও আমি ছাড়া আর কেউ নেই। মা অনুমতি দিলেই কেবল আমি যুদ্ধে যেতে পারি।

মাকে আজাদ বলল, মা, আমি কি যুদ্ধে যেতে পারি?

মা বললেন, নিশ্চয়ই, তোমাকে আমার প্রয়োজনের জন্য মানুষ করিনি, দেশ ও দশের জন্যই তোমাকে মানুষ করা হয়েছে।

আজাদ যুদ্ধে গেল। দুটো অপারেশনে অংশ নিল। তাদের বাড়িতে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা হলো। গেরিলারা আশ্রয় নিল।

১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট। ধরা পড়ে ক্র্যাক প্লাটুনের একদল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। সেসময় আজাদকেও আটক করা হয়। তাকে ধরে নিয়ে রাখা হলো রমনা থানা সংলগ্ন ড্রাম ফ্যাক্টরি সংলগ্ন এম.পি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে।

গরাদের ওপারে দাড়িয়ে থাকা আজাদকে তার মা চিনতে পারেন না। প্রচণ্ড মারের চোটে চোখমুখ ফুলে গেছে, ঠোঁট কেটে ঝুলছে, ভুরুর কাছটা কেটে গভীর গর্ত হয়ে গেছে।

–“মা, কি করব? এরা তো খুব মারে। স্বীকার করতে বলে সব। সবার নাম বলতে বলে।“

–“বাবা, তুমি কারোর নাম বলোনি তো?

–না মা, বলি নাই। কিন্তু ভয় লাগে, যদি আরও মারে, যদি বলে দেই…

–বাবারে, যখন মারবে, তুমি শক্ত হয়ে থেকো। সহ্য করো। কারো নাম বলো না।

–আচ্ছা মা। ভাত খেতে ইচ্ছে করে। দুইদিন ভাত খাই না। কালকে ভাত দিয়েছিল, আমি ভাগে পাই নাই।

–আচ্ছা, কালকে যখন আসব, তোমার জন্য ভাত নিয়ে আসব।

সাফিয়া বেগমের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যায়। গায়ে হাত তোলা তো দূরে থাক, ছেলের গায়ে একটা ফুলের টোকা লাগতে দেননি কোনোদিন। সেই ছেলেকে ওরা এভাবে মেরেছে… এভাবে…

মুরগির মাংস, ভাত, আলুভর্তা আর বেগুনভাজি টিফিন ক্যারিয়ারে ভরে পরদিন সারারাত রমনা থানায় দাড়িয়ে থাকেন সাফিয়া বেগম, কিন্তু আজাদকে আর দেখতে পাননি। তেজগাঁও থানা, এমপি হোস্টেল, ক্যান্টনমেন্ট-সব জায়গায় খুজলেন, হাতে তখন টিফিন ক্যারিয়ার ধরা, কিন্তু আজাদকে আর খুঁজে পেলেন না।

ছেলে একবেলা ভাত খেতে চেয়েছিলেন। মা পারেননি ছেলের মুখে ভাত তুলে দিতে। সেই কষ্ট-যাতনা থেকে পুরো ১৪টি বছর ভাত মুখে তুলেন নি মা! তিনি অপেক্ষায় ছিলেন ১৪টা বছর ছেলেকে ভাত খাওয়াবেন বলে। বিশ্বাস ছিলো তাঁর আজাদ ফিরবে। ছেলের অপেক্ষায় শুধু ভাতই নয়, ১৪বছর তিনি কোন বিছানায় শোন নি। শানের মেঝেতে শুয়েছেন শীত গ্রীষ্ম কোন কিছুতেই তিনি পাল্টান নি তার এই পাষাণ শয্যা। আর এর মুল কারণ আজাদ রমনা থানায় আটককালে বিছানা পায়নি।

প্রজন্ম কিংবদন্তি আজাদদের চিনেনা, তাইতো আজো শহীদের মাটিতে পাকিস্তানের প্রতি প্রেম উথলে উঠে বারেবারে।

 

শুভ জন্মদিন শহীদ মাগফার উদ্দিন চৌধুরী আজাদ।

 

ভালো থাকুক জীবনের প্রেমগুলো। ভালো থেকো কিংবদন্তী।

-এফবি থেকে সংগৃহীত।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone