ডেস্ক রিপোর্টঃ স্ত্রীর যৌতুক মামলায় সাময়িক বরখাস্তকৃত জয়পুরহাট পিটিআই ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) মোঃ সামসুজ্জোহা গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
নিশাত সুলতানা গত ২০ ডিসেম্বর ২০২০খ্রিঃ খুলনা সদর থানায় কে.এম.পি লিখিত অভিযোগ উল্লেখ করেন যে, তিনি ও মোঃ সামসুজ্জোহা দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরিচয় ও বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই দু’জন সুখী দাম্পত্য জীবন সাজানোর লক্ষ্যে ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক দেড় লক্ষ টাকা দেনমোহরে পারিবারিকভাবে উভয়ের বিয়ে হয়।
বিয়ের সময় মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে নিশাত সুলতানার পরিবার থেকে জামাইকে সোনার আংটি, চেইন, হাতঘড়ি, মোটর সাইকেল কেনার জন্য নগদ ১লক্ষ টাকাসহ অনেক দামী আসবাবপত্র প্রদান করেন। এতদসত্বেও যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী নিশাত সুলতানার উপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন করত। নির্যাতনের মাত্র সহ্য করতে না পেরে নিশাত সুলতানা গত ২৭/১০/২০১৯খ্রিঃ খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ধারায় একটি মামলা (মামলা নং ২৭১/১৯) দায়ের করেন। মামলা হওয়ার পর থেকে সামসুজ্জোহা নিজে ও বিভিন্ন লোক মারফত মামলাটি উঠিয়ে নেওয়ার জন্য হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।
গত ১৫/১২/২০২০খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালতে উক্ত মামলার হাজিরা দিতে আসেন সামসুজ্জোহা। সেদিন সকাল অনুমান ১০:৩০ঘটিকায় নিশাত সুলতানা আদালতে উপস্থিত হলে সামসুজ্জোহা নিশাত সুলতানার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা উঠিয়া না নিলে তাকে দেখে নেবে, প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে নিশাত সুলতানা গত ২০/১২/২০২০খ্রিঃ খুলনা সদর থানায় জিডি (নং ১০৩১) দাখিল করেন।
ফৈজদারী বিধান কোষের ১৭২ধারা অনুযায়ী কেস ডায়রী নিয়ন্ত্রন নং ২৬৪, অতিঃ কেস ডায়রী নং ১ তারিখ ১৫/৩/২০২১খ্রিঃ মোতাবেক ক্ষেতলাল থানা, জয়পুরহাটের তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই মোঃ ফরিদুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
সামসুজ্জোহা ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারী পর্যন্ত পাবনা পিটিআইতে কর্মরত ছিলেন। ব্যাংক কর্মকর্তা স্ত্রী নিশাত সুলতানার দায়েরকৃত যৌতুক মামলায় গত ১৫/১২/২০২০খ্রিঃ হাজিরা দিতে এসে কাবিন ও খোরপোষের টাকা দিয়ে টালবাহানা এবং মামলা ট্রায়াল করবে বলে কোর্টে অসৌজন্যমুলক আচরণের দায়ে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করায় তখন থেকেই চাকুরী হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত আছেন।
জানা যায, জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল থানার আক্কেলপুর ইউনিয়নের দেওগ্রামের জাহেদুল ইসলাম সরকারের ছেলে মোঃ সামসুজ্জোহা এবং খুলনা জেলার লবনচরা (সাবেক বটিয়াঘাটা) থানার জলমা ওয়াজেদ নগর সাঁচিবুনিয়া গ্রামের বাদশা মিয়ার মেয়ে নিশাত সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ব্যাচমেট ছিলেন। শিক্ষাজীবন শেষে জনতা ব্যাংকে অফিসার পদে প্রথম চাকুরী নিয়ে ২০১৫ সালে খুলনায় যোগদান করেন নিশাত সুলতানা। এদিকে ২০১৬ সালের ৩ মার্চ পাবনা পিটিআইতে ইন্সট্রাক্টর পদে যোগদান করেন সামসুজ্জোহা। স্ত্রী বিয়ের চার মাসের মধ্যে জনতা ব্যাংক এরিয়া অফিস পাবনায় বদলী হয়ে আসেন। এর পর থেকেই সুদর্শন চেহারার ভিতর থেকে কুৎসিত চরিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে ইন্সট্রাক্টর সামসুজ্জোহার।
নিজে অনেক ধার-দেনা আছে বলে স্ত্রীর বেতনের সমুদয় টাকা হাতিয়ে নিয়েও তিনি তৃপ্ত হয়নি। যৌতুকের জন্য নানা ভাবে চাপ দিতে থাকে স্ত্রীকে। স্ত্রীকে বাবার বাড়ী থেকে নানা উপঠোকন ও যৌতুকের টাকার জন্য শারীরিক ও মানুষিকভাবে অত্যাচার নিপীড়ন আরম্ভ করেন।
এক পর্যায়ে পুত্রবধুর কাছে শ্বশুর জাহেদুল ইসলাম মোবাইল করে বাড়ি নির্মাণের জন্য বিপুল পরিমান টাকার দাবী করে চাপ দেয়। একাধিক ব্যক্তির জমি কৌশলে দখলে নেওয়ার কারনে এলাকায় জাহেদুল ইসলাম একজন ধুরন্ধন ভুমিদস্যু বলে পরিচিত। স্ত্রী থাকাবস্থায় জাহেদুর ইসলামের সন্তানদের একাধিক বিয়ে করার বিষয়টি এলাকায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত।
এদিকে অন্য মেয়েকে বিয়ে করলে বাড়ি গাড়িসহ অনেক টাকা পেতাম এমন কথা বলে স্ত্রীর সাথে প্রায়ই বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হতো অর্থলোভী সামসুজ্জোহা। যৌতুকের টাকার দাবিতে স্ত্রীর সাথে অশান্তির মাত্রা দিনদিন বাড়তে থাকে। সামসুজ্জোহা পরিকল্পিতভাবে গর্ভের অনাগত সন্তানকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ৭ মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে মারপিট করে ও পেটে লাথি মারে। পেটের ব্যথায় দিন রাত ছটফট করলেও স্ত্রীকে হাসপাতালে নিতে তালবাহানা ও সময়ক্ষেপন করে।
পরবর্তীতে বাড়িওয়ালার হস্তক্ষেপে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর ভোর রাতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে নিশাত সুলতানার মৃত সন্তান ভূমিষ্ট হয়। সন্তান হারানোর ব্যথা দুর না হতেই স্ত্রীকে দুরে সরানোর নীল নকশায় মেতে উঠেন তিনি। সুচতুর সামসুজ্জোহা কৌশলে ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারী পাবনা পিটিআই হতে জয়পুরহাট পিটিআইতে বদলী হয়। স্ত্রীও বদলী হয়ে জয়পুরহাট যেতে চায়। কিন্তু ধুর্ত সামসুজ্জোহা ঠান্ডা মাথায় স্ত্রীকে বুঝায়, মায়ের কাছে গিয়ে ভাল থাকতে পাবরে, সহযোগিতা পাবে। এমন নানা ছলছুতোয় ২০১৯ সালের ৩ জুন স্ত্রীকে খুলনায় বদলীর করেন। পাবনা হতে খুলনায় আসার সময় কৌশলে স্ত্রীর টাকায় কেনা বাসার সমস্ত আসবাবপত্র ও সমস্ত সোনার গহনা রেখে দেন স্বামী।
তার পর থেকেই সামসুজ্জোহার আসল রুপ প্রকাশ পেতে থাকে। স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ না করে মোবাইলে যৌতুকের জন্য হুমকি দিতে থাকে। স্ত্রী মামলা করার প্রস্তুতি গ্রহন করছে এমনটি বুঝতে পেরে ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর খুলনায় শ্বশুড়ালয়ে এসে কথা বার্তার এক পর্যায়ে ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে স্বামী।
স্ত্রী নিশাত সুলতানা ও তার পিতা মাতা সামসুজ্জোহাকে অনেক বুঝালেও যৌতুক ছাড়া স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করবে না জানিয়ে চলে যায়। নিশাত সুলতানা সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য পাবনা পিটিআইয়ের স্বামীর সহকর্মী বন্ধু এবং জয়পুরহাট পিটিআই সুপারের কাছে আকুতি জানিয়েও বিন্দুমাত্র সহযোগিতা পায়নি বলে তিনি জানান। নিরুপায় হয়ে স্ত্রী নিশাত সুলতানা ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর খুলনা অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন আদালতে যৌতুক মামলা দায়ের করেন। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর মামলার প্রথম হাজিরা দিতে এসে কোর্টে দাড়িয়ে ভূল স্বীকার করে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেবার প্রতিশ্রুতি দিলে জামিন পায় সামসুজ্জোহা। এরপর মিমাংসায় না বসে নানা টালবাহানা করে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে বলে জানায়। ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তারিখে মিমাংসার কথা বলে নিশাতকে ডেকে নিয়ে জোড়পূর্বক আপোস ও খোলা তালাক নামায় স্বাক্ষর করে নেন সামসুজ্জোহা।
দেনমোহর এবং খোরপোষ বাবদ ৫লাখ টাকা ও জিনিসপত্র ফেরত দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্ত সে তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে জয়পুরহাট আদালতে নিশাত সুলতানার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানী করছে।
নিশাত সুলতানা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সামসুজ্জোহা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আমার মামলা থেকে বাঁচতে একের পর এক আমার নামে মিথ্যা মামলা করছে।
জয়পুরহাট পিটিআই ইন্সট্রাক্ট সামসুজ্জোহা মামলা ও ওয়ারেন্ট বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ারেন্টতো হওয়ার কথা নয়। আমার মামলার তারিখতো আসেইনি। তাহলে ওয়ারেন্ট হবে কি করে।