আলোর মনি রিপোর্ট: এক সময় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় একমাত্র বাহন ছিল গরু কিংবা মহিষের গাড়ি। লালমনিরহাটের মানুষ ধান-চাল, পাটসহ সব ধরনের কৃষিপণ্য পরিবহনে মহিষের গাড়ি ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন আর লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার বাথান (গো-চারণ ভূমি) ও পাথার (নিচু জমি) আগের মতো আর মহিষের গাড়ি চোখে পড়ে না!
এখন মহিষের গাড়ির জায়গা দখল করে নিয়েছে- শ্যালোইঞ্জিন ও ব্যাটারি চালিত ভটভটি, করিমন, নছিমন, অটোভ্যান, পিকাপভ্যানসহ নানা যান্ত্রিক পরিবহন। ফলে বিল, বাথান ও পাথার এলাকায় মহিষের গাড়ি আর চোখে পড়ে না তেমন। মাঝে মধ্যে ২-১টা দেখা গেলেও তা আসে অন্য কোনো স্থান থেকে। ফলে লালমনিরহাট জেলায় মহিষের গাড়ি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মহিষের গাড়িয়াল বলেন, আগে সারা বছর গাড়ি চালাতাম। এখন শুধু মাঝে মাঝে ডাক পড়লে কাজ করি। আর সারা বছর বেকার বসে থাকি। এখন সবাই ভটভটি, করিমন, নছিমন দিয়ে এ কাজ করায়। ফলে আমাদের চাহিদা কমে গেছে। এতে আমরা চরম অভাবের মধ্যে দিন যাপন করছি। অন্য পেশা বেছে নিচ্ছি।
কোদালখাতা গ্রামের কমল কান্তি বর্মণ ও ফুলগাছ গ্রামের হরিপদ রায় হরি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে যান্ত্রিক পরিবহনে কৃষিপণ্য এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সহজে পরিবহন করা যায়। তাই এই এলাকা থেকে মহিষের গাড়ি, গরুর গাড়ি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যারা এখন এ পেশা বদলায়নি, তারা বাপ-দাদার পেশা হিসেবে ধরে রেখে কাজের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
কৃষকরা বলেন, যান্ত্রিক পরিবহনে খরচ বেশি। তাছাড়া যে সকল স্থানে যান্ত্রিক পরিবহন ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। সেখানে মহিষের গাড়ি সহজে ব্যবহার করা যায়। ফলে এখনও ২-১টি মহিষের গাড়ী এ অঞ্চলে দেখা যায়। হয়তো এক সময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহনটা আর চোখে পড়বে না।
কবি ও সাংবাদিক হেলাল হোসেন কবির বলেন, গ্রাম বাংলার চিরায়ত এ ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ির চাহিদা এখনও একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। তাই যে সকল মশিয়ালরা এখনও টিকে আছেন তাদের বিভিন্ন সরকারি পরিবহন কাজে ব্যবহার করে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। যেমন- উপজেলা সদরের গুদাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিএফ, ভিজিডির চাল পরিবহন, সরকারি ঠিকাদারি মালামাল গন্তব্যে পৌঁছানোসহ বিভিন্ন সরকারি কাজে মহিষের গাড়ি ব্যবহার করা সম্ভব। তাই সরকার এ দিকে দৃষ্টি দেবে বলে জোর দাবী করেন তিনি।