গত ১৭ আগস্ট জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে লালমনিরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের বিষয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় করতে যান অ্যাড. সফুরা বেগম রুমী। পরে সেখানে কয়েকজন অনুসারী নিয়ে উপস্থিত হন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা স্বপনের অনুসারীরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেত্রী অ্যাড. সফুরা বেগম রুমীকে কটাক্ষ করে উচ্চস্বরে চিল্লাচিল্লি করতে থাকেন। উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা হলে দলীয় কার্যালয় ত্যাগ করেন অ্যাড. সফুরা বেগম রুমী।
এরপর দলীয় কার্যালয়ে গোলাম মোস্তাফা স্বপন ও বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী মিলে একটি সভা করেন। সভার পুরো অংশটি ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান জাবেদ হোসেন বক্কর। ভিডিওটি মূহুর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে পরলে জেলা জুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।
৪৯মিনিট ৪৪সেকেন্ডের সেই ভিডিওটিতে দেখা যায়, বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর বক্তব্যের শেষে বক্তব্য রাখেন জেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন। তিনি তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য সফুরা বেগম রুমীকে “হেলেনা” জাহাঙ্গীরের সাথে তুলনা করে বলেন, লালমনিরহাটের হেলেনা জাহাঙ্গীর সফুরা, তোমার কত ক্ষমতা হলে তুমি ক্ষান্ত হবে? মেরি পেয়ারী, মেরি জান! এরপর তিনি নাম উল্লেখ না করে জেলা আ’লীগের এক প্রভাবশালী নেতার কথা ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, তিনি যতদিন ঢাকায় থাকেন লালমনিরহাটের হেলেনাও ততদিন ঢাকায় থাকেন। এরপর বলেন, লজ্জা লাগে না? লালমনিরহাটের হেলেনা জাহাঙ্গীর সফুরা। তুমি আগস্ট মাসে মতবিনিময় সভা কর? লজ্জা লাগে না? বেয়াদব!
এরপর সদর উপজেলা আ’লীগের ব্যানারে আগামী ২১ আগস্ট এর কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি বলেন, জেলা আ’লীগের পাশাপাশি সদর উপজেলা আ’লীগের ব্যানারেও পৃথক কর্মসূচি পালন করা হবে।
তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, আমি যদি হুকুম দিতে নাও পারি তারপরেও ১ তারিখের পর থেকে ওদের যেখানেই পাবে সেখানেই প্রতিহত করবে, ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবে। এখনও যারা আমাদের পতাকাতলে আসেনাই তাদের অনুরোধ করবেন। আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত দরজা খোলা।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গোলাম মোস্তফা স্বপনের আগে কয়েকজন ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা বক্তব্য রাখেন, তারাও আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ ভাষায় সফুরা বেগম রুমীকে গালমন্দ করেন।
এদিকে এমন আক্রমনাত্মক ও আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগে সিনিয়র নেতা ও নেত্রীদের দলীয় অফিসে বসে গালমন্দ করে হুমকি দিয়ে তা আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা নিয়ে তোলপাড় চলছে জেলা আ’লীগ ও সুধী সমাজের মাঝে।
জেলা আ’লীগের শীর্ষ নেতার এমন আপত্তিকর ভাষার প্রতিবাদ করছেন জেলার নারী নেত্রীরা।
তারা জানান, রাজনীতি থেকে নারীদের কোনঠাসা করে রাখতেই গোলাম মোস্তফা স্বপন চক্রান্ত করছেন।
এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি মোড়ল হুমায়ুন কবির ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, রাজনীতির বেহাল অবস্থা। লালমরিহাট জেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদকের একি ভাষা! আমার মনে হয় রাজনীতি গ্রুপিং করতে যেয়ে উনি শিষ্টাচার ভুলে গেছেন। হোক যে ভাবে শেখাবে আমরা সে ভাবেই শিখব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মতিয়ার রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলা আ’লীগের কমিটি না থাকায় কেন্দ্রের নির্দেশ মোতাবেক একটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। দলের বিতর্ক এড়াতে ওই সম্মেলন প্রস্তুত কমিটির আহবায়ক করা হয় কেন্দ্রীয় নেত্রী সফুরা বেগম রুমীকে। এই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নিয়ে কোন আপত্তি থাকলে আমাদের জানানো যেত কিংবা আগামী জেলা কমিটির সভায় বিষয়টি তোলা যেত। কিন্তু তারা সেটি না করে জেলা আ’লীগ কার্যালয়ে বসে যে ভাষায় বক্তব্য রেখেছে এবং ফেসবুকে প্রচার করেছে তা বিএনপিও কোন দিন করেনি।
তিনি আরও বলেন, আইনের উর্ধে কেউ নয়। তাই সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় সাংগঠনিক ভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সফুরা বেগম রুমী বলেন, যারা কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে তারা আ’লীগকে ভালবাসে না, বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের মধ্যে থাকলে তারা কখনো অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করত না।
এ বিষয়ে জেলা আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, শোকের মাসে কোন কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা কিংবা মতবিনিময় বাঞ্চনীয় নয় অথচ সফুরা বেগম রুমি আপা সেটি করেছেন তার প্রতিবাদ করেছি মাত্র। সদর উপজেলা আ’লীগের কমিটি না থাকলেও সেই ব্যানারে কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমি ইউনিয়ন কমিটিগুলোকে কর্মসূচির কথা বলেছি।