আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলায় গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনে ডাটার বাম্পার ফলন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না থাকায় এবার গত বছরের চেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে। তরকারি হিসেবে সজনের জুড়ি নেই, তাইতো এর কদর রয়েছে সর্বত্র। সমগ্র দেশে সজনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় সজনে চাষিদের মুখে হাসি।
সজনে সবজি বিক্রয় করে তারা আয়ও করেছেন অনেক। লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার শহর, গ্রামে-গঞ্জে সবখানে গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে সজনে ডাটা ধরেছে। দ্বিগুণ আমদানিও বেড়েছে বাজারে। স্থানীয় হাট-বাজারে সজনে ডাটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মুখরোচক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সজনে ডাটা স্থানীয়ভাবে বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক ধরে প্রতিদিন জেলার যে কোনো হাট-বাজার থেকে শত শত মণ সজনে ডাটা আমদানি হচ্ছে। দাম গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও প্রতি মণ সজনে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১হাজার ৫শত থেকে ১হাজার ৬শ টাকায়।
মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামের হযরত আলী তার ৩টি গাছ থেকে সজনে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
ফুলগাছ গ্রামের সজনে ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানায়, সজনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় গতবছরের চেয়ে এ বছর ব্যবসায় লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গত কয়েকদিন যাবৎ সজনে ক্রয় করা শুরু করেছি। তাছাড়া সজনে চাষীরাও এবার লাভবান হয়েছেন।
অন্যান্য সবজির চেয়ে সজনে ডাটা পুষ্টিগুণ ও স্বাদে বেশি হওয়ায় যে কোনো বয়সের মানুষ সজনে খেতে ভালোবাসে।
চিকিৎসাবিদদের মতে, সজনে সবজিতে ক্যালসিয়াম, খনিজ লবণ, আয়রনসহ প্রোটিন ও শর্করা জাতীয় খাদ্য রয়েছে। এছাড়া ভিটামিন এ, বি, সি সমৃদ্ধ সজনে ডাটা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শরীরের পুষ্টির জন্য গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে বলে সজনে ডাটা ঔষুধি সবজি হিসেবেও ব্যাপক সমাদৃত। এছাড়া সজনে গাছের ছাল এবং পাতা রক্ত আমাশয়, পেটের পীড়া ও উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
সজনে ডাটা প্রধানত দুই প্রজাতির। এর মধ্যে এক প্রজাতি বছরে ৩বার থেকে ৪বার পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে এর নাম বলা হয় রাইখঞ্জন। অন্য প্রজাতির সজনে বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে একবারই পাওয়া যায়। সজনে চাষের জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি গ্রহণ করতে হয় না। এর জন্য আলাদা কোনো জমিও প্রয়োজন হয় না। যে কোনো পতিত জমি, পুকুর পাড়, রাস্তার বা বাঁধের ধার, বাড়ির আঙ্গিনা এমনকি শহরে যে কোনো ফাঁকা শুষ্ক জায়গায় সজনে গাছ লাগানো যায়। এর কোনো বীজ বা চারাও প্রয়োজন হয় না। গাছের ডাল কেটে মাটিতে পুঁতে রাখলেই সজনে গাছ জন্মায়। এর জন্য কোনো সার বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অবহেলা অযত্নে প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে ওঠে সজনে গাছ। বড় ও মাঝারি ধরনের এক একটি সজনে গাছে ৬মণ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত সজনে পাওয়া যায়। পতিত জমি, রাস্তার ধার, বাড়ির আঙ্গিনা বা শহরে বাসা-বাড়ির আনাচে-কানাচে সজনে ডাটার ডাল লাগিয়ে অনেকেই নিজ চাহিদা মিটিয়েও বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বিনা খরচে অধিক আয় পাওয়ায় অনেকেই বাণিজ্যিকভাবেও সজনে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে এই জেলার মাটি, পানি ও আবহাওয়া সজনে চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় এই জেলায় সর্বত্রই প্রচুর পরিমাণে সজনে উৎপাদন হচ্ছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতান সেলিম বলেন, জেলার সর্বত্র সজনে চাষে উপযোগী মাটি ও আবহাওয়া রয়েছে। এখানে বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ফলে এই জেলায় অনেকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুর পাশাপাশি এখন সজনে ডাটার ডাল রোপণ করতে শুরু করেছে।