আলোর মনি রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলায় বিলুপ্তির পথে কাউন চাষ। এক সময় লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়ন ও ২টি (লালমনিরহাট, পাটগ্রাম) পৌরসভার গ্রামেগঞ্জে-পাড়া-মহল্লায় ব্যাপক হারে চাষ হলেও বর্তমানে কাউন চাষে কৃষকদের আগ্রহ না থাকায় হারিয়ে যেতে বসেছে কাউন।
অল্প খরচে সহজ চাষ পদ্ধতিতে ও পানি সাশ্রয়ী হওয়ার পরও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঠিক তদারকির অভাবে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কাউন ফসলটি আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কাউন নামক ফসলটি যেন কালের গর্ভে বিলীন হতে চলেছে। সুস্বাদু একটি ফসলের নাম কাউন। মানুষজন কাউন চালের সঙ্গে রান্না করে খায়, হরেক রকমের পিঠা, খীর, পায়েস, খিচুরী, মলাসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তৈরি হতো কাউন থেকে। ফসলটির শুকনো জমিতে ঝুরঝুরে চাষের পর চৈত্র মাসে বীজ ছিটিয়ে বপন করতে হয়। জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে ফসল ঘরে ওঠে। এতে কোন সেচের প্রয়োজন হয় না। ফলন হয় প্রতি বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ মণ। কাউনের শীষ ছিঁড়ে নিয়ে যাওয়ার পর বাকি গাছের অংশ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য আবাদের মতোই কাউন সহযোগী ফসল হিসেবে কৃষকের আর্থিক যোগান দিতো।
কাউনের বৈজ্ঞানিক নাম ছিটারিয়া ইটালিকা গোত্র-গ্রামিনি। দীর্ঘ দিন ধরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর কাউন চাষের দেখা মেলে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামে।
কাছে গিয়ে দেখা যায়, বিলুপ্তপ্রায় কাউন ফসলটি তার অস্তিত্ব জানান দিয়ে বলছে, “এখনো আমার অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়নি। তবে আমি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, পারলে আমাকে রক্ষা কর।”
লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের কৃষক হরিপদ রায় হরি বলেন, শাক-সবজি, ধানের ফাকে কাউন চাষ করতো এই গ্রামের মানুষ। সেই কাউন বিক্রি করে সংসারের খরচ চলতো। এখন ফলন কম হওয়ায় কাউন চাষ আর করি না আমরা।
দেশী জাতের এ কাউন ফসলটিকে আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করা উচিত। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানতেই পারবে না কাউন নামটি। কাউন নামের এ ফসলটি যাতে বিলুপ্ত হয়ে না যায় এ জন্য সবার এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন গ্রামবাসী।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতান সেলিম বলেন, কাউন এখন অভিজাত ফসল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তা ছাড়া ফলন কম হওয়ায় কৃষকেরা কাউন চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।