আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: এক সময় ভোর হলেই আমাদের গ্রামাঞ্চলের কৃষকেরা জোড়া গরুর দড়ি হাতে, মই-টোপা ও লাঙ্গল-জোয়াল কাঁধে নিয়ে বেরিয়ে পরতেন জমিতে হাল চাষের জন্য।
বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে কৃষকদের জীবনেও এসেছে নানা ধরনের পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়া এসে লেগেছে লালমনিরহাটেও। এখন আর কৃষকদের কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল, মই-টোপা ও জোড়া গরুর দড়ি হাতে নিয়ে মাঠে যেতে দেখা যায় না জমি চাষ করতে।
আমাদের কৃষি প্রধান আবহমান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গা-অঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ। চিরায়ত বাংলার রূপের সন্ধান করতে গেলে এসব কৃষি উপকরণের কথা এখন যেন রূপকথার গল্পের রুপে আসে আমাদের সামনে।
বর্তমান আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে চাষের পরিবর্তনে এসেছে এখন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি চাষ করার কাজ।
লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলায় বাণিজ্যিক ভাবে কৃষকেরা গবাদিপশু পালন করতেন হাল চাষের জন্য। আবার কিছু মানুষ নিজের জমিজমা না থাকলেও গরু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। বিঘা প্রতি চুক্তি করে অন্যের জমি চাষাবাদ করে নিজের পরিবারের ভরন-পোষণ করতেন। কিন্তু বর্তমানে আর তেমন চোখে পড়ে না সেই লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের কৃষক হরিপদ রায় হরি জানান, আগে গরু দিয়ে জমি চাষ করেছিলাম। ছোট বেলায় নিজ জমিতে হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ থাকত কয়েক জোড়া। হাল চাষের জন্য দরকার হতো ১জোড়া বলদ, কাঠের সাথে লোহার ফলা লাগিয়ে হতো লাঙ্গল আর কাঠ দিয়ে জোয়াল, বাঁশ দিয়ে মই ইত্যাদি তৈরি করা হতো। এখন আর সেই সব নেই বর্তমানে পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করছি।
মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মকড়া ঢঢ গাছ গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, গরু দিয়ে হাল চাষের অনেক উপকারিতা রয়েছে। লাঙ্গলের ফলা মাটির অনেক গভীরে যায় তাই জমির মাটি আলগা হয়, ধান চাষের জন্য কাঁদাও অনেক ভালো হয়। গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাসও কম হয়। হাল চাষের সময় গরুর গোবর জমিতে পড়ত, যা জমিতে প্রাকৃতিক জৈব সার তৈরি করতো। এতে জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেক কম হতো, আর ফলনও ভালো হতো। লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন জমি চাষ করা সম্ভব হতো প্রায় ৪০শতাংশ (দেড় দোন) জমি। কিন্তু বর্তমানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে জমি চাষ করার পদ্ধতি এখন বদলে গেছে, নতুন নতুন মেশিনের সাহায্যে কৃষকরা কম সময়ে ও কম খরচে অনেক বেশি জমি চাষাবাদ করছেন।
মোগলহাট ইউনিয়নের কোদালখাতা গ্রামের নায়েব আলী জানান, আধুনিক যন্ত্রপাতির তুলনায় লাঙ্গলের চাষ গভীর হয়। এতে করে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়, ফলনও ভালো হয়। জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বর্তমানে সকল ফসলই ব্যবহার করা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক।
জানা যায়, প্রয়োজন হলেই সল্প সময়ের মধ্যেই এখন ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে জমি চাষাবাদের কাজ। সেই সাথে কৃষকেরা এখন গবাদিপশু পালন না করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন তারা। এতে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কৃষিতে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ফুলগাছ ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সেলিম জানান, সময়ের প্রয়োজনে মানুষ এখন লাঙ্গল দিয়ে হাল চাষের পরিবর্তে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করছে। এতে তাৎক্ষণিক সময়ের বহু জমি চাষ করছে। যা আধুনিকার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে।