আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে শহীদুন্নবী জুয়েলের কোরআন অবমাননার কোন সত্যতা মেলেনি বলে দাবি করে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসকের গঠিত তদন্ত কমিটি।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের হাতে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
তদন্ত জমাদানের সময় উপস্থিত ছিলেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি.এম.এ মোমিন, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক সাইদুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম।
এর আগে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি.এম. এ মোমিনকে প্রধান করে তিন কার্যদিবস সময় দিয়ে ৩সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে কয়েক দফায় সময় নিয়ে বুধবার রাতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করে বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের হাতে প্রতিবেদন তুলে দেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট টি.এম.এ মোমিন সাংবাদিকদের বলেন, তিন কার্যদিবস থেকে সময় বাড়িয়ে ৯ কার্যদিবস সময় নেয়া হয়। সময় মত তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তদন্ত করে কোরআন অবমাননার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এটি স্রেফ একটি গুজব। গুজব ছড়িয়ে জুয়েলকে পিটিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে তিনি আরও বলেন, তদন্ত কার্যে মোট ৫০জনের লিখিত ও মৌখিক বক্তব্য গ্রহন করে তদন্ত কমিটির ৭টি সভা করে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ৬টি অধ্যায়ে ৪২টি অনুচ্ছেদে ৭৩পাতা সংযুক্তিতে মোট ৬ পাতার তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রস্তুত। ঘটনার ভুমিকা, বিবরন, অধিক তথ্যানুসন্ধান, গভির পর্যবেক্ষন, সুপারীশমালা ও মন্তব্য করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতে ৪টি সুপারীশ স্থান পেয়েছে বলেও দাবি করেন তদন্ত কমিটির প্রধান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ঘটনার গভীরে যেতে এবং নিবির পর্যবেক্ষনের জন্য আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১৭-২০ টি ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ করেছি। এসব দেখেও অনেক তথ্য উপাত্ত পেয়েছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। সেখানে বলা হয় কোরআন অবমানানার মত কোনো কাজ জুয়েল করেনি। শুধু গুজব ছড়িয়ে পিটিয়ে-পুড়িয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এর মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে যাকে পিটিয়ে হত্যার পর পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। গত ২৯ অক্টোবর বিকেলে পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার (৩১ অক্টোবর) একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে মোট ৩২জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ১০জনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গ্রেফতার আসামিরা সবাই বুড়িমারী এলাকার বাসিন্দা।
নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। সুলতান রুবায়াত সুমন নামে এক সঙ্গীসহ বুড়িমারী বেড়াতে আসেন তিনি। ওই দিন বুড়িমারী বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে শহিদুন্নবী জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।