সড়ক দুর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
সালাম নিবেন। আশা করি আপনারা ভাল আছেন। আজ একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে ও কালীগঞ্জের কাশিরামের ঐতিহ্যবাহি মূসতাযির পরিবারের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের নানা অপতৎপরতাসহ আমাকে ঘরে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সড়ক দূর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি। আপনারা শত ব্যস্ততার মাঝেও মূসতাযীর পরিবারের আহবানে সাড়া দিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আমি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জের কাশীরাম গ্রামের এক হতভাগ্য কলেজ শিক্ষক তাবাসসুম তামান্না মুসতাযীর। আমার বাবা বজলে রহমান মূসতাযীর ছিলেন এক জন স্বনামধন্য প্রধান শিক্ষক। তিনি ২০০৫ সালে আমাকে আর আমার মাকে রেখে পরপারে চলে যান। তিনি প্রাচীর ঘেরা বিশাল বাড়িসহ অনেক জমি জমা ও সম্পদ রেখে গেছেন। এই বিশাল সম্পদ এখন আমি আর আমার মায়ের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। এর ওপর নজর পরেছে স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের একাধিক সদস্যসহ তাদের আত্মীয় স্বজনের। শুরু হয়ছে নানা অপকৌশল আর অপতৎপরতা। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার আমার বর্গা-দারদের নানা ছল ছুতায় অত্যাচার করা হয়েছে, কখনো ভয় দেখানো হয়েছে। এছাড়াও বাড়ির কাজের মেয়ে, পাহারাদার কেউ রক্ষা পায়নি তাদের অন্যায় আচরণ থেকে। তাই আমি বাধ্য হয়ে বিভিন্ন সময়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয় কে এসব বিষয়ে লিখিত ভাবে অবহিত করেছি। পাশাপাশি এসব অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকটা বাধ্য হয়ে আইন আদালতের আশ্রয় নিয়েছি প্রতিকার পেতে। যা নাগরিক হিসেবে আমার সাংবিধানিক অধিকার।
এ কারণে কালীগঞ্জের রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে প্রভাবশালী পরিবারের কোনো কোনো সদস্য এতে আমার ওপর অসন্তুষ্ট ও বিরাগভাজন হয়েছেন। তারা ছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। সর্বশেষ আমার বাড়ির কাজের মেয়ে রোকসানাকে গত ০৯/০৯/২০২০ ইং তারিখে আমার নিকট প্রতিবেশীরা বিনা উস্কানিতে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত ও শ্লীলতাহানি করে। ফলে আমি গত ১০/০৯/২০২০ ইং তারিখে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়েল করি ৬ জনের বিরুদ্ধে। এদের মধ্যে একজন খলিল গত ২২ অক্টোবর উক্ত মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যাওয়ার সময় আদিতমারীর খাতাপাড়া এলাকায় দুই ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হন। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি গত ২৬ অক্টোবর বিকালে মারা যান। মৃত খলিলের বিদ্বেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ও তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমি ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। কিন্তু কালীগঞ্জের প্রভাবশালী পরিবারের কোনো কোনো সদস্য একে পুজি করে আমার বিরুদ্ধে মানুষ কে খেপিয়ে তুলে আমার গ্রেপ্তারের দাবিতে গত ২৭.১০.২০২০ ইং রোজ মঙ্গলবার কালীগঞ্জে মৃত খলিলের লাশের খাটিয়া মহাসড়কে রেখে অবরোধের এক জঘন্য নাটক করে। এ সময় তারা আমার বাড়ির আশপাশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সে সময় আমি ও বৃদ্ধ মা একাবাড়িতে আতংকজন পরিস্থিতিতে ছিলাম। আপনারা অনেকেই জানেন যে যার লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে সেই খলিল সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে মর্মে তার ভাতিজা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সানিউর রহমান আদিতমারী থানায় লিখিত আবেদন দিয়ে লাশ গ্রহণ করেছিলেন। ওই আবেদনে সানিউর রহমান বলেছেন, তার চাচা খলিলের মৃত্যুর ঘটনায় তাদের কোনও অভিযোগ নেই এবং এই বিষয়ে তারা কোনও মামলা মোকদ্দমা করবেন না। অথচ মাত্র এক রাতের ব্যবধানে পরদিন সকালে ওই খলিলের লাশ রাস্তায় রেখে অবরোধের নাটক সাজানো হল। শুধু তাই নয় সড়কে দূর্ভোগ সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষের আবেগকে পূজি করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে আমাকে, আমার মাসহ আমার আধিয়ারকে ফাঁসাতে অবরোধ তুলে নিতে স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি আমার নামে মামলা দায়ের এর ঘোষনা দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আমার পরিবারে কোন পুরুষ সদস্য নেই, বাড়িতে শুধু বৃদ্ধা মা আর আমি। চারপাশের প্রায় সবাই প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য বা তাদের আত্মীয় স্বজন। কিছু আছেন, যারা তাদের আত্মীয় নন কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সদস্য হওয়ায় হয় তারা প্রভাবশালী পরিবারের ইংগিতে যে কোনো ধরনের অনিষ্ট করার সুযোগে থাকেন, নতুবা সব কিছু জেনে বুঝে চুপ থাকেন। প্রতিবছর বন্যার সময় বা বর্ষা কালে আমার বাড়ির সীমানা প্রাচীরের নিচে ফুটো করে দিয়ে তাদের বাড়ির পানি আমার বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, আবার কখনো প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। আমার বাড়ির ১১ শতক জমির কোন হদিস নেই। আমিন দিয়ে মাপতে গেলে প্রভাবশালী পরিবারের ভয়ে সঠিক ভাবে মাপে না। আমি লাইসেন্স বিহীন আমিনদের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় গত ২৩ মার্চ একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতে সেটির এখনও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার আবাদি ধানের জমির ভেতর দিয়ে রাস্তা করতে চায়, নানা কারণে জমি বিক্রি করতে চাপ দেয় বা কৌশল ব্যবহার করে। এখন এ অবস্থায় আমাদের জান মাল রক্ষায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কি? এখন আমি ও আমার বৃদ্ধা মা আত্ম হনন করব নাকি প্রতিপক্ষের দ্বারা যে কোনো সময় প্রাণ নাশের মতো পরিস্থিতির শিকার হব? স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশে কি নিরাপদে মান সন্মান নিয়ে বেচে থাকার আমাদের কোনো অধিকার নেই? জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে এই কি আমাদের নিয়তি?
প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা,
আপনারা জাতির বিবেক, বিপদগ্রস্থ যেকোন অসহায় মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক। আপনাদের লেখনির মাধ্যমে আমাদের সাথে হওয়া ধারাবাহিক অন্যায় অত্যাচারের কথাগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ রাষ্ট্রের আইন ও বিচার বিভাগের দৃষ্টি গোচরে নেবেন এই প্রত্যাশা ও আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
ধন্যবাদান্তে,
মূসতাযীর পরিবারের পক্ষে,
এস. তাবাসসুম রায়হান মূসতাযীর তামান্না,
প্রভাষক, ইংরেজী বিভাগ
উত্তর বাংলা কলেজ, কাকিনা, লালমনিরহাট।
মোবাইল- ০১৭১২-০১৯৬০৯
★বিঃ দ্রঃ বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) লালমনিরহাট হাড়ীভাঙ্গাস্থ নতুন জীবন রচি (নজীর) মিলনায়তনে মূসতাযীর পরিবারের আয়োজনে সড়ক দূর্ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড দাবি করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে লালমনিরহাটের কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক এস. তাবাসসুম রায়হান মূসতাযীর তামান্না-এর স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করা হলো।