আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মৃত ফছির উদ্দিনের ছেলে একরামুল হক। পৈতৃক সম্পত্তি ২৭শতাংশ জমি পেয়েছিলেন। পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যায় ১৯শতাংশ জমিই বিক্রি করতে হয়েছিল। বাকি ছিল ৮শতাংশের বাড়ি ভিটে। এই ৮শতাংশ বাড়ির ৫শতাংশ দান করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে, কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য। এখন সেখানে মদনপুর ফকিরটারি কমিউনিটি ক্লিনিক।
পিতৃহারা এনামুল এসএসসি পাশ করে প্ল্যাণ বাংলাদেশের একটি প্রজেক্টে ভলান্টিয়ার কমিউনিটি মোভিলাইজারের কাজ করেন। ২০১১ সাল থেকে ১৪ সাল পর্যন্ত প্রজেক্টটি চলে। তার পর প্রজেক্ট বন্ধ হলে তিনি পেশা হিসেবে রিক্সাভ্যান চালানো শুরু করেন। তবে মানুষের জন্য কাজ করার তীব্র অাকাঙ্খা ছিল তার।
ঐ ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য যখন স্বাস্থ্য দপ্তর যখন জমি খুঁজছিল, তখন এলাকার ১০/১২জন জমি দিতে চেয়েছিলেন। পরে কেউই আর জমি দেননি। উপায়ন্তর না পেয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এনামুল নিজের বাড়িভিটের শেষ সম্ববল টুকু দানপত্র করে দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নামে।
৮শতাংশ ভিটের ৫শতাংশই ক্লিনিকে দান করে ৩শতাংশের উপর ৪সন্তানসহ ৬জনের পরিবার নিয়ে কোন রকম ঘর করে অাছেন। এখন তার বাড়ির উঠনে পাকা ঘরে ক্লিনিক, তিনি থাকেন টিনের ঘরে। ভ্যান চালিয়ে কিছুদিন সংসার চালিয়েছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হওয়াতে ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। সমাজসেবা থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধির ভাতা পাচ্ছেন। এখন নামুড়ী বাজারের একটি পোল্ট্রি ফিডের দোকানে পার্টটাইম কাজ করেন। দিন গেলে ২শত টাকা মজুরি পান। ভাতার টাকা আর মজুরির টাকা দিয়েই চলে তার সুখের সংসার।
তাঁর সাথে এনামুলের বাড়ির পাশের টংঘরে চায়ের দোকানে কথা হয়। তিনি তার জীবনের গল্প শুনিয়েছেন। ভিটে বাড়িতেই জমি দিলেন, এখন কোন আপশোস হয়না? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আমার বাড়িতে কমিউনিটি ক্লিনিক। বিনা পয়সায় এলাকার মানুষ চিকিৎসা ও ঔষধ পায়। যা দেখে তৃপ্তি পাই, ভাল লাগে। অনেকেই সম্মান করে। এটাই আমার প্রাপ্তি। এর মধ্যে যে শান্তি, তা কি অন্য কোনো উপায়ে পেতাম? প্রশ্ন রাখেন এনামুল। অামি তো কোন কিছু পাওয়ার আশায় জমি দান করিনি।
এনামুলের জমি দানের বিষয়ে কথা হয় পলাশী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মী বেলাল হোসেনের সাথে।
বেলাল হোসেন বলেন, বিনিময়ে কিছু না পাক, এনামুল হকের মত মানুষদের স্বরণে রাখা প্রয়োজন। এনামুলের দেয়া জমির উপর ক্লিনিক। শত শত মানুষ এখান থেকে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছে, ঔষধ পাচ্ছে।
লালমনিরহাট সরকারি কলেজের ফিলোসফির গেস্ট টিচার রায়হান শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, ভিটেবাড়ির জমি জনকল্যাণে দান করা, এটা একটি দৃষ্টান্ত। এমন উদারতা সবার কাছ থেকে অাশা করা যায়না। এদের জন্য কিছু করা না গেলেও, এদেরকে স্বরণ করা উচিত। তাতে করে অনেকেই জনকল্যাণে এগিয়ে আশবে। যে মহত্ব এনামুল দেখিয়েছেন, তা ভুলে যাওয়াও অন্যায়।