আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: লালমনিরহাট জেলার সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিন্দুর মতি মৌজায় অবস্থিত দেবত্ব লাভের কিংবদন্তী বিজড়িত দীঘি সিন্দুর মতি। খ্রিস্টপূর্ব সময়ে শ্রীলংকা (সিংহল দ্বীপ) থেকে রাজ নারায়ণ চক্রবর্তী নামে জনৈক নিঃসন্তান ব্রাহ্মণ জমিদার সন্তান লাভের আশায় স্বস্ত্রীক তীর্থ স্থান ভ্রমণে বেড়িয়ে নৌপথে এখানকার দেউল সাগর মন্দিরে এসে পৌছে ছিলেন। রাজ নারায়ণ চক্রবর্তী এবং তাঁর ধার্মিক স্ত্রী শ্রীমতি মেনেকা দেবী এখানে নতুন আবাসস্থল গড়ে তুলেন। প্রতিষ্ঠিত হয় রাজ নারায়ণ চক্রবর্তীর জমিদারীত্ব। এদিকে শ্রীমতি মেনেকা দেবীর গর্ভ থেকে জন্ম নেয় অপরুপা দু’কন্যা নাম রাখেন- সিন্দুর ও মতি। জমিদারের সুখী সমৃদ্ধ রাজ্য আকস্মিক ভাবে দেখা দেয় তীব্র খরা। এমাতবস্থায়, জমিদার প্রজাদের জলকষ্ট নিবারণের জন্য জরুরী ভিত্তিতে একটি বিশাল দীঘি খনন করেন কিন্তু জলের কোন সন্ধান মিলেনা। চিন্তিত জমিদার এক রাতে স্বপ্নাদেশে জানতে পারেন যে, তাঁর দু’কন্যা দীঘির মাঝখানে যথারীতি উপাচারসহ ভগবানের পূজা করলে তবেই জল আসবে। জমিদার রাম-নবমীর দিনে পূজার আয়োজন করেন। কিন্তু সামান্যতমও জল উঠল না। হঠাৎ জমিদারের মনে পড়ে যায় যে, ভূল বশতঃ তুলসী পাতা আনা হয়নি। সিন্দুর ও মতিকে দীঘির তলদেশে রেখে তুলসী পাতা আনতে তিনি ছুটে যান পুস্প কাননে। সহসা দীঘির তলদেশ ভেদ করে বিকট শব্দে তীব্র বেগে জলরাশি বেড় হয়ে নিমিষেই দীঘি জলে পূর্ণ হয়ে যায়। পূজার চালুনী-বাতি ও নৈবদ্যসহ বলিকৃত পাঠা জলের উপর ভেসে উঠে। ঢাক-ঢোল বাদকরা কোন রকমে সাতরিয়ে ডাঙ্গায় উঠে আসে, কিন্তু সিন্দুর ও মতি থেকে যায় দীঘির তলদেশে। ঘটনার পর অষ্টস দিনে সূর্যোদয়ের পূর্বে জমিদার ও স্ত্রী মেনেকা দেবীকে তাঁদের দু’কন্যা নিজ নিজ শাড়ির আচঁল এবং কনিষ্ঠাঙ্গুলী দীঘির জলের উপর তুলে দেখিয়েছিলেন। এ সময় তাঁরা দেবত্ব প্রাপ্ত দু’কন্যা সিন্দুর ও মতির সাথে কথাও বলেছিলেন মর্মে কথিত আছে। মানবী থেকে দেবীর আসনে অধিষ্ঠিত এ দু’কন্যার নামানুসারে দীঘিসহ এলাকাটার নাম হয়েছে- সিন্দুর মতি। প্রতি বছর চৈত্র মাসের রাম-নবমীতে সিন্দুর মতির পূজা উপলক্ষ্যে এখনও দীঘির পাড়ে বিরাট মেলা বসে।