শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সকাল বিকাল শুধু সংস্কার সংস্কার করছে, জনগণের ভাষা তারা বোঝেনা-লালমনিরহাটে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরে স্মারকলিপি পেশ: পরিবেশ বান্ধব তিস্তা মহাপরিকল্পনাসহ ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবি 1win App ᐉ Download And Gamble On Your Preferred Games অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, দুই ম্যাজিস্ট্রেট অবরুদ্ধ লালমনিরহাটে ৫৩তম জাতীয় শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা, ঔষধ সামগ্রী ও পথ্য পরিচালনায় সীমাহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে ৯ম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে মিনি ম্যারাথন ও বাইসাইকেলে রেস, তারুণ্যের উৎসব ও বিসিক উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠিত Greatest 2024 No-deposit Bonus Gambling enterprises inside Us Claim 100 percent free Money
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরে স্মারকলিপি পেশ: পরিবেশ বান্ধব তিস্তা মহাপরিকল্পনাসহ ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবি

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরে স্মারকলিপি পেশ: পরিবেশ বান্ধব তিস্তা মহাপরিকল্পনাসহ ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবি

পরিবেশ বান্ধব তিস্তা মহাপরিকল্পনা, অর্থনৈতিক অঞ্চল, অভ্যন্তরীণ বিমান যাতায়াত চালু, রংপুর-লালমনিরহাট-বুড়িমারী ৪ লেন সড়ক, তিস্তা নদীর উপর ডুয়েল গেজ নতুন রেলসেতু, মোগলহাট শুল্ক স্থলবন্দর স্থাপন, মেডিকেল কলেজ, রেল সংক্রান্ত, বেকারদের সরকারিভাবে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা, আইটি পার্ক, ধরলা নদী শাসন, কৃষকদের জন্য সরকারি বাজারসহ উত্তর অঞ্চলের উন্নয়ন বিষয়ক ১২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে লালমনিরহাটের একটি সামাজিক সংগঠন “অতিক্রম”।

 

এসব দাবি পূরণে পদক্ষেপ নিতে বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের পক্ষে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি. আর. সারোয়ার-এঁর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে লালমনিরহাটের সামাজিক সংগঠন “অতিক্রম”।

 

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপিটি লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জি. আর. সারোয়ারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাটের সামাজিক সংগঠন “অতিক্রম” এর উপদেষ্টা, কবি ও সাংবাদিক আবদুর রব সুজন, আহবায়ক, কবি ও সাংবাদিক হেলাল হোসেন কবির, যুগ্ম আহবায়ক, কবি ও সাংবাদিক মাসুদ রানা রাশেদ প্রমুখ।

 

উক্ত স্মারকলিপিতে অত্র অঞ্চলের জনগণের পক্ষে স্বাক্ষর করেছেন- হেলাল হোসেন কবির, মুহিন রায়, মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ, আবদুর রব সুজন, মোঃ নুরুজ্জামান বকুল, মজনু মিয়া, আহমেদুর রহমান মুকুল, মোঃ নূরুন্নবী মিয়া, মোঃ রশিদুল ইসলাম রিপন, মোঃ রমজান আলী, আব্দুল লতিফ, এস কে সাহেদ, মোঃ শাহজাহান আলী সাজু, মনজুরুল হক প্রমুখ।

 

উত্তর অঞ্চলের উন্নয়ন বিষয়ক ১২ দফার অন্য দাবিগুলো হলো- পরিবেশ বান্ধব তিস্তা মহাপরিকল্পনা, অর্থনৈতিক অঞ্চল, অভ্যন্তরীণ বিমান যাতায়াত চালু, রংপুর-লালমনিরহাট-বুড়িমারী ৪ লেন সড়ক, তিস্তা নদীর উপর ডুয়েল গেজ নতুন রেলসেতু, মোগলহাট শুল্ক স্থলবন্দর স্থাপন, মেডিকেল কলেজ, রেল সংক্রান্ত, বেকারদের সরকারিভাবে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা, আইটি পার্ক, ধরলা নদী শাসন, কৃষকদের জন্য সরকারি বাজার।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, আমরা লালমনিরহাট জেলার অধিবাসী এই মর্মে আবেদন করছি যে, লালমনিরহাট জেলা দেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভাবনাময় স্থান হলেও অদ্যাবধি এর আধুনিকতা ও কাঙ্খিত উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে। আপনি জানেন যে, অসহায় থাকার যন্ত্রণা কতটা জীবনকে অভিশাপের দিকে ঠেলে দেয়। আমরা অসহায় ভাবে জীবন যাপন করছি। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার প্রধানের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে আসছি এই অঞ্চলের সমস্যার সমাধানের জন্য। কিন্তু আমাদের কান্নাকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। আপনি শুধু বাংলা নন বিশ্বের বহু দেশ, জাতি, বর্ণের মানুষদের দুঃখের কথা জানেন ও ভাবেন। আমরা আশাবাদী আপনি আমাদের দাবিগুলোকে গুরুত্ব সহকারে পদক্ষেপ নিবেন। আপনিই পারেন এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের যৌক্তিক চাওয়া গুলোকে পূরণ করে মঙ্গা দূর করতে। আপনি অবশ্যই জানেন, রংপুর বিভাগে কোন মেগা প্রকল্প নাই। উত্তরাঞ্চলের মানুষের কল্যাণে আমরা নিম্নবর্ণিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একান্তভাবে আবেদন করছি।

 

প্রকল্প-১ (পরিবেশ বান্ধব তিস্তা মহাপরিকল্পনা): লালমনিরহাট জেলার উত্তর প্রান্তে দহগ্রাম (ভারত) থেকে তিস্তা নদী প্রবাহিত হয়ে গাইবান্ধার ব্রহ্মপূত্র নদে মিলিত হয়েছে। এই নদীটি লালমনিরহাট জেলার শুরু থেকে শেষপ্রান্ত পর্যন্ত প্রায় দেড়শ কিলোমিটার বিস্তৃত। এই নদীটির উভয় পাড়ে বসবাসরত জনগণ প্রতি বৎসর খরা, বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তাই এই নদী এখন অত্র অঞ্চলের মানুষের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তার ন্যায্য পানির আশায় আছি। ভারত যাতে হুটহাট করে পানি ছেড়ে দিতে না পারে সেটা সরকারের তরফ থেকে পরিস্কার ভাবে আওয়াজ দিতে হবে। ধরা যাক ভারত আমাদের পানি দিবেনা। তাহলে আমাদের উত্তর অঞ্চলের মানুষের ফুসফুস তিস্তা নদীকে রক্ষা করতে পারবো না, অবশ্যই পারা যাবে। তিস্তা নদীর উপর দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প থেকে নদীর উভয় পাড় বেধে নদী শাসন করে, ডেজিং এবং স্পার ও জলাধার (ওয়াটার ভেসেস) নির্মাণ পূর্বক পানি সংরক্ষণ করে খরা মৌসুমে নদীর নাব্যতা রক্ষা ও সংরক্ষিত পানিতে মৌসুমী মাছ চাষ করা সম্ভব। এভাবে বন্যা, খরা ও নদীভাঙ্গন রোধ করাও সম্ভব হবে। তিস্তা নদীকে ঘিরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণার মাধ্যমে এই অঞ্চলকে কর্মমুখী করাও সম্ভব এবং নদীর বুকে লালমনিরহাট সদর অংশে খুনিয়াগাছ কালমাটি হয়ে হারাগাছ পর্যন্ত একটি আধুনিক সড়ক বা ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের মাধ্যমেও বিনোদন জোন করা যেতে পারে। নদীর উভয় পাড়ে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার স্থানটি পরিবেশ বান্ধব প্রকল্প হলে সেখানে হাজার হাজার বেকারদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ বিষয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করে বিশ্ব ব্যাংক বা অন্য কোন দাতা সংস্থার সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। এভাবে বর্তমান তিস্তা নদীর অভিশাপকে আশীর্বাদে রূপান্তর করা সম্ভব। (ব্যবস্থা গ্রহণ: অর্থ, পানি সম্পদ, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়)।

 

প্রকল্প-২ (অর্থনৈতিক অঞ্চল): আপনি নিশ্চয়ই জানেন, তিস্তা পাড়ের মানুষজন দারুণ অভাবে থাকে। তারা পেটের দায়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রিক্সা চালায় ও গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করে। নিজ এলাকার বাহিরে কাজ করার ফলে কাজ শেষে তাদের কোন পুঁজি থাকেনা। যা আয় করে দিন শেষে খেয়ে ও বাসা ভাড়া দিতে শেষ। তাদের কারনেই ঢাকায় জ্যাম লেগেই থাকে। আমাদের এখানে কোন কর্মস্থানের সুযোগ নেই। লালমনিরহাটে একটি মিনি বিসিক শিল্পনগরী রয়েছে যার কোন উন্নতি নাই। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে এলাকার বেকার সমস্যা সমাধান হবে এবং রপ্তানি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে। উক্ত অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য লালমনিরহাটে প্রয়োজনীয় ভূমিও রয়েছে। লালমনিরহাট সদরের মহেন্দ্রনগর বন্দরের পাশে আউডিয়ার বিলে প্রায় ২০০ (দুই শত) একর জমি খাস রয়েছে, সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে সড়ক পথ, রেল ও বিমান বন্দরের সুবিধা রয়েছে। ফলে এখানে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরী হবে। যার কারণে এখানকার অর্থনীতি পাল্টে যাবে। (ব্যবস্থা গ্রহণ: অর্থ, শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়)।

 

প্রকল্প-৩ (অভ্যন্তরীণ বিমান যাতায়াত চালু): বিট্রিশ আমলে নির্মিত বিমানবন্দর তথা এশিয়ার ২য় বৃহত্তর বিমান বন্দরটি লালমনিরহাটে। ১১৫০ (এগারশত পঞ্চাশ) একর জমিতে এই বিমান বন্দর এলাকা। সেটি দারুণ ভাবে অবহেলায় পড়ে রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ছাড়া রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় অন্য কোথায় বিমান পরিসেবা নেই। এই বিমানবন্দর চালু হলে শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ রুটেই নয় (ঢাকা-লালমনিরহাট-বাগডগরা দার্জিলিং/শিলিগুড়ি, বিশ্ব/ভুটান-কাঠমুন্ড/নেপাল) আন্তর্জাতিক রুটেও বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনা করা সম্ভব। অপরদিকে বর্তমানে রেল সেবার অপ্রতুলতা, সড়ক ও জনপথে অত্যাধিক চাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রয়োজনীয় ভূমির অভাবে বিকল্প রেল বা সড়কপথ নির্মাণ অবাস্তব ও ব্যয়সাধ্য। লালমনিরহাট একটি জেলা শহর, রেলওয়ে বিভাগীয় সদর দপ্তর, অনেক এনজিওর প্রধান ও আঞ্চলিক কার্যালয়, সর্বপরি ভুটান থেকে অনেক যাত্রী ও জেলার উত্তরপ্রান্তে বুড়িমারীতে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর। ভারত, নেপাল ও দ্বাত্র-ছাত্রী এ পথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে থাকে। উত্তরাফলে একমাত্র সৈয়দপুর বিমানবন্দরে প্রতিদিন ৬/৭টি ফ্লাইটে প্রায় ৪৫০০ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করায় এর বর্তমান ধারণক্ষমতার উপর চাপ পড়েছে। লালমনিরহাট বিমানবন্দরের রয়েছে বিশাল ও প্রসন্ত রানওয়ে। তাই লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু করে ভারত, নেপাল, ভুটান ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক রুটে বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিসেবা চালু করা সময়ের দাবি ও বাস্তবসম্মত। যা হতে পারে বর্তমান সরকারের বিমান সেবার একটি দৃষ্টান্ত ও মাইলফলক। (ব্যবস্থা গ্রহণ: বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়)।

প্রকল্প-৪ (রংপুর-লালমনিরহাট-বুড়িমারী ও সেন সড়ক): রংপুর লালমনিরহাট- বুড়িমারী মহাসড়কটি বেহাল দশা। সড়কটি প্রায় শতটি আঁকাবাকা মোড় রয়েছে, যার ফলে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। দেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর বুড়িমারী হয়ে যেসব পাখারের ট্রাক বা বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে যার কারণে সড়কটির টেকসই ধরে রাখা যায় না। যেহেতু রংপুরের মর্ডান মোড় প্রর্যন্ত ৪ লেন সড়ক এসেছে। এই ৪ লেন সড়ক সংযোগ রংপুর লালমনিরহাট বুড়িমারী প্রর্যন্ত হলে দুর্ঘটনা যেমন হবেনা ঠিক তেমনি সড়ক পথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। (ব্যবস্থা গ্রহন: সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়)।

 

প্রকল্প-৫ (তিস্তা নদীর উপর ডুয়েল গেজ নতুন রেলসেতু): লালমনিরহাট একটি উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন শহর। তাই কোনকিছুই পরিকল্পনা মাফিক গড়ে উঠেনি। তিস্তা নদীর উপর পুরাতন রেল সেতুটি ছিলো লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের মানুষের শেষ ভরসা, একই সেতুর উপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করতো এবং বাস-ট্রাকসহ সকল যানবাহন চলতো। এক যুগ আগে সড়ক সেতু নির্মাণ হলেও রেল সেতুটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। সারাদেশে সাথে রেল যোগাযোগ ভালো করতে পুরাতন রেল সেতুর পাশে ডুয়েল গেজ নতুন রেল সেতু নির্মাণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মাটি পরীক্ষা করেন, এখন সেই নথিও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আপনি সুদৃষ্টি দিবেন বলে আমরা দারুণ ভাবে আশা রাখছি। (ব্যবস্থা গ্রহণ: স্থানীয় সরকার ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয়)।

 

প্রকল্প-৬ (মোগলহাট শুল্ক স্থলবন্দর স্থাপন): একটা সময় লালমনিরহাটের উপর দিয়ে ভারত, নেপাল, ভুটান থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। জেলা শহর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের জন্য মোগলহাট ইমিগ্রেশনটি ১৯৯৫ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এই ইমিগ্রেশন পয়েন্টটি ছিল দেশের প্রাচীনতম। এখন বন্ধ হওয়ায় কাস্টমস্, বিজিবি ও পুলিশ বিভাগের স্থাপনাগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে সরাসরি লালমনিরহাটে প্রতিসপ্তাহে পণ্যবাহী রেলওয়ে মালগাড়ী যাওয়া-আসাও ১৯৮৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। মোগলহাট রেল ষ্টেশনটি এখন পরিত্যক্ত। যার ফলে কোটি কোটি টাকার রেল লাইন চুরি হয়ে যায়। এখন জায়গাগুলি বেদখল হয়ে গিয়েছে। তাই দেশের স্বার্থে পূর্বের ন্যায় মোগলহাট ইমিগ্রেশন ও রেলওয়ের পণ্য পরিবহন পুনঃচালু করার জন্য আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি। (ব্যবস্থা গ্রহণ: স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, অর্থ ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয়)।

 

প্রকল্প-৭ (মেডিকেল কলেজ): আপনি অবগত আছেন যে, উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাটের মানুষ সম্পূর্ণরুপে কৃষির উপর নির্ভরশীল। এখানে স্বাস্থ্যসেবা বলতে ২৫০ শয্যা হাসপাতালটিই ভরসা। এই হাসপাতালে বেশি সময় ডাক্তার সংকটে থাকে। মানুষগুলোর কোন কিছু হলেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সহজ সরল এই মানুষগুলোর সেখানে গিয়েও তেমন সেবা পায়না। আর যাদের টাকা আছে তার চিকিৎসা নিতে যান ঢাকা বা দেশের বাহিরে। এখানে একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গড়ে ওঠলে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ডাক্তার হয়ে দেশের সেবায় যেমন এগিয়ে আসবে তেমনি প্রান্তিক কৃষকরা সঠিক সেবা পাবে। (ব্যবস্থা গ্রহণ: শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়)।

প্রকল্প-৮ (রেল সংক্রান্ত): দেশের রেলওয়ের নেটওয়ার্কে রেল লাইনের দু-পার্শ্বে রেল অধিগ্রহণকৃত জমি রয়েছে। তাই রেলওয়েকে ‘ডবল লাইনে’ উন্নত করে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে গণপরিবহণে বর্তমান জনসংখ্যার চাপ মোকাবেলা করা যেতে পারে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ (৬৫ কিলোমিটার) নতুন রেলপথ নির্মাণ উত্তরবঙ্গের সকল জেলায় সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। বর্তমানে ট্রেনযোগে ঢাকা যেতে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ ৬৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে সান্তাহার-নাটোর-ঈশ্বরদী-উল্লাপাড়া হয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার ঘুরে ও ৪ ঘন্টা অপচয় করে সিরাজগঞ্জ যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে যেতে হচ্ছে। তাই রেল যাত্রা মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। ফলে রেল বিভাগ কাঙ্খিত আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমানে যমুনা সেতুতে রেল সংযোগ দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ২৭/২৮টি ট্রেন উত্তরবঙ্গসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে যাওয়া-আসা করছে। সেতুর ৯ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে প্রতিটি ট্রেন ধীরগতি হওয়ায় ২৮ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় নিচ্ছে। সেই সাথে মালবাহী ট্রেনসহ অন্যান্য বিশেষ ট্রেন রয়েছে যা উক্ত দুর্বল রেল সংযোগের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। এ পরিস্থিতিতে গাইবান্ধা (তিস্তামুখ ঘাট) জামালপুর সংযোগের মাধ্যমে একটি রেলসেতু/টানেল নির্মাণ করে রেলের বিকল্প রুট চালু করা প্রয়োজন এবং যুক্তিযুক্ত। তাহলে ঐ লাইন দিয়ে যাত্রীসহ মালবাহী গাড়ি ও সব ধরনের পণ্য পরিবহন করা সহজতর হবে। তাই এর বাস্তবায়ন চাই। (ব্যবস্থা গ্রহণ: রেলওয়ে মন্ত্রনালয়)।

 

প্রকল্প-৯ (বেকারদের সরকারিভাবে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা): দেশের দক্ষিণের জেলাগুলোর চেয়ে আমাদের এখানে বেকারগণ বিদেশে যাওয়া সুযোগ পাচ্ছেনা। লালমনিরহাটের যুব উন্নয়ন ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বেকারদের প্রশিক্ষন দিয়ে সরকারি ঋণ দিয়ে বিদেশে পাঠানো ব্যবস্থা করা জরুরী। (ব্যবস্থা গ্রহন: যুব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়)।

 

প্রকল্প-১০ (আইটি পার্ক): তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্ব আজ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের স্বর্ণযুগে অবস্থান করছে। মানুষের জীবনের প্রতিটি কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তথ্যপ্রযুক্তির অবদান রয়েছে। পৃথিবীর উন্নত দেশসমূহের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে বাংলাদেশও তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক সকল কাজ প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন করার প্রবণতা বেড়েছে। কিন্তু দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী এখনও সেভাবে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠতে পারেনি। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করে দেয়ার একটি বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে। যাকে বলা হয়ে থাকে আউটসোর্সিং। চীন, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বহুদেশ আজ প্রযুক্তিকে তাদের উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। এমনকি এর সহায়তায় বিশ্বে কোন কোন দেশ আজ সুপার পাওয়ারের মর্যাদা লাভ করেছে। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে নিজেদের গতিশীলতায় তাল মেলানোর জন্য প্রান্তিক জেলা লালমনিরহাটে আইটি পার্ক গড়ে উঠলে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ও অগ্রগতিতে সমগ্র বিশ্বের কাছে একদিন বাংলাদেশ হবে একটি রোল মডেল। শিক্ষা, বাণিজ্যসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে আন্তর্জাতিক পর্যায় প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করে দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটানো ক্ষেত্রে আইটি পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যার ফলে বেকার সমস্যার সমাধান হয়ে লালমনিরহাটে বসে বৈদেশিক মুদ্রা আজ করা সক্ষম হবে। (ব্যবস্থা গ্রহণ: বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়)।

 

প্রকল্প-১১ (ধরলা নদী শাসন): দেশের উত্তর অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নদী ধরলা। ভারত হয়ে লালমনিরহাটের মোগলহাট, কুলাঘাট ও বড়বাড়ী ইউনিয়নের উপর দিয়ে এই নদী কুড়িগ্রামের শহরের কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে নদীটি রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। রংপুরে নীলকুমার নামে ধরলার একটি ছোট উপনদী আছে। বর্ষার শুরুতে ধরলাতে স্রোত খুব বেড়ে যায় এবং নদী তীরে ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দেয়। শুষ্ক মৌসুমে নদীর প্রবাহ খুব হ্রাস পায়; বিশেষত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নদী পথ প্রায় শুষ্ক থাকে। এই নদী নিম্ন অববাহিকা বর্ষার শুরুতে পাহাড়ী ঢল জনিত আকস্মিক বন্যা কবলিত হয়। নদী তীর অধিক মাত্রায় বেলে যুক্ত ও ঢাল বেশি হওয়ায় ভাঙ্গন প্রবণতা অধিক। প্রায় প্রতি বছরই নদী তীরবর্তী প্লাবন ভূমি বর্ষায় বন্যা কবলিত হয়। বাংলাদেশ অংশে নদীটির মোট দৈর্ঘ্য ৭৫ কিলোমিটার। ধরলার দুই পাড়ের মানুষের দুঃখের শেষ নেই। তাই দুই পাড়ের মানুষের কষ্টফেরাতে ধরলা শাসন করা জরুরী। (ব্যবস্থা গ্রহণ: পানি সম্পদ, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়)।

 

প্রকল্প- ১২ (কৃষকদের জন্য সরকারি বাজার): আপনি অবগত আছেন যে, উত্তরাঞ্চলের মানুষ সম্পূর্ণ রুপে কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষির উন্নয়ন ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে না। আর এ জন্য দরকার কৃষিতে আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে নিত্য নতুন উৎপাদন ব্যবস্থা জোরদার করা। যদিও এখানকার কৃষকগণ হাড়ভাংগা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করে আসছে। এখানে ব্যাপক ধান, ভুট্টা, আলু, ফুলকপি, বাঁধা কপি, বেগুনসহ বিভিন্ন রবিশস্য ফসল ফলালেও তারা সঠিক মূল্য পায়না। অপরদিকে সিজনাল ফসল উৎপাদন বেশি হওয়ার কারনে কৃষক আলু আর ধান ছাড়া বাকি ফসল মজুদ করতে পারে না। যার ফলে ফসলের সঠিক দাম না পাওয়ার কারনে দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এখানকার কৃষক। আর এই প্রান্তিক জেলা থেকে ঢাকা বা অন্যখানে ফসল বিক্রি করার জন্য উপায় খুঁজে পায়না। ফসল হাতবদল হলে তারা তেমন লাভবান হতে পারেনা। কৃষকদের কাছে নিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার পায় ফরিয়ারা। তাই এখানে সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি কৃষকদের ফসল ক্রয়ের জন্য কৃষি বাজার চালু সময়ে দাবি। (ব্যবস্থা গ্রহণ: কৃষি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়)।

 

আমরা জানি যে, আপনি প্রান্তিক মানুষের দুঃখ দূর্দশা বুঝতে পারেন। আপনার চিন্তা-ভাবনা ও কাজ বিশ্ব দরবারে উদারতার স্থান করে নিয়েছে। আপনি আমাদের দেশের গৌরবময় মানুষ। আপনি আমাদের নোবেলজয়ী বাঙালি। আপনি আমাদের অহংকার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আপনি আমাদের পরিচয়ের চির স্মরণীয় মানুষ। তাই আমাদের বিশ্বাস জনগণ তথা দেশের উন্নয়নই আপনার একমাত্র ব্রত। বিধায় প্রার্থনা এই যে, বর্ণিত প্রকল্প প্রস্তাবনাগুলি অত্র অঞ্চলের মানুষের মঙ্গলের জন্য সুবিবেচনা পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

লালমনিরহাটের সামাজিক সংগঠন “অতিক্রম” এর আহবায়ক, কবি ও সাংবাদিক হেলাল হোসেন কবির বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক আন্দোলন করে আসছি, উত্তর অঞ্চলের মানুষের বৈষম্য কবে দূর হবে জানা নেই। এ অঞ্চলের মানুষ তাদের দুঃখ দুর করতে তিস্তা মহাপরিকল্পনাসহ ১২ দফা দাবির বাস্তবায়ন চায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone