লালমনিরহাটে “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই” স্লোগান নিয়ে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মেগা প্রকল্প অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবীতে আগামী ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং তিস্তা নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ২দিন ব্যাপী লাগাতার কর্মসূচী সফল করার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা ৩০মিনিটে লালমনিরহাট জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় গোল চত্বর সংলগ্ন হামার বাড়ীস্থ তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। এ সময় লালমনিরহাট জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম মমিনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আফজাল হোসেন, মোঃ সাহেদুল হক পাটোয়ারী, মোঃ মজমুল হোসেন প্রামানিক, প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রামানিক, লালমনিরহাট পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুস সালাম, লালমনিরহাট সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শীবেন্দ্র নাথ রায় শিবু, লালমনিরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবু ইয়াহিয়া ইউনুছ, লালমনিরহাট জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী, লালমনিরহাট জেলা ছাত্রদল সভাপতি নাজমুল হুদা লিমন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম আনন্দসহ লালমনিরহাটের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, আমাদের রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী তিস্তা নদী এ অঞ্চলে মানুষের এক সময় গোলা ভরা ধান ছিল, গোয়াল ভরা গরু ছিল, মুখে ভাওয়াইয়া গান। তিস্তাপাড়ের মানুষ এক সময় আনন্দের দিন কাটাতো। তিস্তা নদী ছিল আমাদের মায়ের মতো, সেই তিস্তা নদী এখন শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। তিস্তা নদী এখন ধু ধু বালু চর।
তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ হচ্ছে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে রাখে, আর বর্ষা মৌসুমে বিনা কারণে পানি ছেড়ে দেয় এর ফলে বন্যার সৃষ্টি হয় লক্ষ লক্ষ পরিবারের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে যায়, বাড়ি-ঘর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিঃস্ব হয়ে বাড়ি-ঘর ছাড়া হচ্ছে। তিস্তা এখন আমাদের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে তিস্তা মানুষের জীবন-জীবিকার একমাত্র ভরসা ছিল, ছিল মানুষের প্রাণ, সেই তিস্তা এখন আমাদের গলার কাঁটা।
এই তিস্তার সুষ্ঠু পানি বন্টন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘদিন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। কিন্তু বিগত সরকার তিস্তাপাড়ের মানুষের সাথে শুধু প্রতারণাই করেনি পরিহাসও করেছে। আমরা মাঝে মাঝেই শুনি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে কিন্তু বাস্তবে সেটা কিছুই হয়নি। আমরা এটাও জানি আমাদের বন্ধু পার্শ্ববর্তী দেশ চীন এখানে অর্থায়ন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, একটি স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়েছিল, কি কারণে সেটি আলোর মুখ দেখতে পাইনি জানি না। আমরা যতোটুকু জানি সেই স্মারকের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেধেছিল মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তাদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আর জীবন-জীবিকা ফিরে পাবে এই অঞ্চলের মানুষের কর্মচাঞ্চল্যতা তৈরি হবে কিন্তু তার কোন কিছুই হয়নি। বর্তমানে তিস্তার দিকে তাকালে আমাদের সকলের বুক হাহাকার করে। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি, তাই আমরা এই তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে নদীর ন্যায্য পানি বন্টন, স্থায়ীবাদ নির্মাণের লক্ষ্যে আমরা এই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আর এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে তিস্তা তীরবর্তী ৫টি জেলার মানুষ। ৫টি জেলার মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলে ২দিনব্যাপী লাগাতার অবস্থা কর্মসূচি থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমি আহবান করি লালমনিরহাটের ১৩০ কিলোমিটার নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ নিজ নিজ উদ্যোগে এই লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুক। আমাদের দাবি খুব পরিষ্কার ন্যায্য পানির হিস্যা সেই হিস্যা আমরা চাই, আমরা চাই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তিস্তা নদী শাসন করা হোক।
প্রসঙ্গত, তিস্তা নদীর ১৩০ কিলোমিটার চরাঞ্চলে প্রায় লক্ষাধিক পরিবারের বসবাস, আর এই তিস্তাকে ঘিরে চরাঞ্চল মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। উজানে পানি প্রত্যাহারের কারণে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীর মরণদশা হয়। শুষ্ক মৌসুমে যেমন পানির অভাবে ব্যাহত চাষাবাদ, আর বর্ষায় মৌসুমে উজানের পানিতে নদীর তীরে বন্যা ও ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছেন নদী তীরবর্তী অঞ্চলের লক্ষ লক্ষ মানুষেরা। তিস্তাপাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের এ দুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। বিগত সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন এরপর চীনের রাষ্ট্রদূত তিস্তা এলাকা পরিদর্শন করেন এতে তিস্তাপাড়ের মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু তিস্তা মহাপরিকল্পনা চীন করবে নাকি ভারত করবে, এ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় তিস্তাপাড়ের মানুষেরা হতাশ হয়েছেন।