লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলা ও রত্নাই নদীর পাড়ে যতো দূর চোখ যায় চতুরদিকে সবুজ আর হলুদের হাতছানি। থোকা থোকা সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটছে অজস্র হলুদ রঙ্গের ফুল। তবে এই সব দৃশ্য কোনো ফুলবাগানের নয়, সবজি মিষ্টি কুমড়া ক্ষেতের দৃশ্য এগুলো।
দেশের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ হয়েছে সবজি মিষ্টি কুমড়া।
স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় কৃষকরা মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন। প্রতিবছরই বাণিজ্যিকভাবে মিষ্টি কুমড়া চাষ করছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
প্রতি দোন (২৭শতক) জমি চাষ করতে ৮ থেকে ১০হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এ মৌসুমে মিষ্টি কুমড়া চারা রোপণ করেছেন কৃষকেরা। পরে সেই জমিতে চারাগুলোর উপরে ধানের আঁটি বিছিয়ে দিয়েছেন। চারাগুলো গাছ হয়ে এখন সেই ধানের আঁটির উপর উঠেছে। ফুলের সঙ্গে কোনো কোনো গাছে মিষ্টি কুমড়াও ধরেছে এখন। যা দিনে দিনে বড় হচ্ছে।
চারা রোপণ করার সময় প্রতি দোন (২৭শতক) জমিতে ৩০কেজি করে টিএসপি সার ব্যবহার করেন। পরে গাছে ফুল আসার আগে আরও একবার সার ব্যবহার করা হয়। এর পাশাপাশি ইউরিয়া সারও ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া পোকার আক্রমণ থেকে গাছ ও মিষ্টি কুমড়া রক্ষা করতে সপ্তাহে একবার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় ক্ষেতে। সাড়ে ৩ ফুট দূরত্বে রোপণ করা চারার একেকটি সারির দূরত্ব রাখা হয়েছে ৪ ফুট।
আর কয়েক দিনের মধ্যে মিষ্টি কুমড়া বিক্রি শুরু হবে। আর তখন স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাবে লালমনিরহাটের বিভিন্ন গ্রামের চাষ করা মিষ্টি কুমড়া।
মিষ্টি কুমড়া চাষ করে এখানকার সবাই লাভবান হয়েছেন। তাই লাভবান চাষিদের দেখে অনেকেই ঝুঁকছেন এ সবজি চাষাবাদে। এতে একদিকে সবজির চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে, ঠিক তেমনি পূরণ হচ্ছে আর্থিক চাহিদাও।
কোদালখাতা গ্রামের মোঃ বাবুল হোসেন মিষ্টি কুমড়া চাষী জানান, মিষ্টি কুমড়া রোগবালাই খুবই কম। কোনো কোনো সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে গাছ শুকিয়ে যায় কিংবা পচন ধরে। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শে রোগ বুঝে ঔষুধ প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম খন্দকার বলেন, লালমনিরহাট কৃষি প্রধান জেলা। এ এলাকায় প্রায় সব ধরনের সবজির চাষ হয়। বরাবরের মতো এবারো মিষ্টি কুমড়া চাষ করে জেলার কৃষকেরা ভালো লাভ করছেন। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। দিন দিন জেলায় মিষ্টি কুমড়া চাষ বাড়ছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।