শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাটে তামাকের বিষে কমছে জমির ঊর্বরতা; বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি লালমনিরহাটে জেন্ডার-সংবেদনশীল দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে আত্মনির্ভরশীল দল এবং ইউডিএমসি এর মধ্যে অ্যাডভোকেসি এবং লবিং মিটিং অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পাটগ্রামে শহীদ জিয়া স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র আমাদের হাতের নাগালে নাই-লালমনিরহাটে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় লালমনিরহাটে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ঔষধ সেবা অর্ধেক মূল্যে হত দরিদ্রদের ছানি অপারেশন অরবিট চক্ষু হাসপাতালে লালমনিরহাটে শীতের হরেক রকমের পিঠার দোকানের পসরা নিয়ে বসছেন বিক্রেতারা বিএনপির কর্মী সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত বাবা-মাকে একটা বাড়ি করে দেওয়ার স্বপ্ন যেন চিরতরে হারিয়ে গেলো লালমনিরহাটের শহীদ শাহিনুর আলমের
লালমনিরহাটে তামাকের বিষে কমছে জমির ঊর্বরতা; বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

লালমনিরহাটে তামাকের বিষে কমছে জমির ঊর্বরতা; বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি

লালমনিরহাটে অধিক লাভের আশায় কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকছে। এতে জমির ঊর্বরতা শক্তি কমাসহ তামাকের বিষ ক্রিয়ায় পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি কৃষক পরিবারে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি।

 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃষি বিভাগের উদাসীনতা, তামাক উৎপাদনের আগে কোম্পানিগুলোর দর নির্ধারণ, বিক্রির নিশ্চয়তা, চাষের জন্য সুদ মুক্ত ঋণ, কোম্পানীর প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শ দান তামাক চাষ বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ। কয়েক বছর আগেও লালমনিরহাটের যেসব আবাদি জমিতে ধান, গম, ভূট্টা, সরিষা ও আলুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছিলো সে সব জমিতে এখন তামাক চাষ হচ্ছে।

 

তামাকজাত কোম্পানীর প্রলোভনে ও অধিক মুনাফার আশায় তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকেরা। অধিক টাকা খরচ করে ধানসহ অন‌্যান‌্য ফসল চাষে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবং শ্রমিকের অধিক মূল্য হওয়ায় কৃষকরা প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ফলে লাভের আশায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি জেনেও তারা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তামাকের বৈজ্ঞানিক নাম Nicotiana Tabacum এবং Nicotiana rustica জাতীয় Solanacea পরিবারভূক্ত বিষাক্ত ও নেশা উদ্রেককারী Nightshade জাতীয় উদ্ভিদ।

 

লালমনিরহাট জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলেছে, তামাক চাষ ও সেবন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তামাক পাতার বিড়ি, সিগারেট, গুল, খইনি ও জর্দাসহ নানা ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করায় বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, চর্ম, ক্যান্সারসহ নানা রোগ। তামাক চাষে কারণে কৃষকদের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।

 

সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট জেলার ৫টি উপজেলাসহ তিস্তা, ধরলা ও রত্নাই নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জমিগুলোতে দিন দিন বেড়েই চলেছে তামাক চাষা। নারী-পুরুষ ও শিশুদের দিয়ে চলছে পরিচর্যা। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুক জুড়ে জেগে ওঠা চরের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হওয়া ফসলের মধ্যে অন্যতম বড় একটি অংশই হলো তামাক।

 

লালমনিহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক মহুবর আলী বলেন, বিএটিসি সিগারেট কোম্পানীর মাধ্যমে তামাক চাষীদের জন্য একর প্রতি জমিতে বীজ ও নগদ ৩হাজার ৬০০টাকা। সেই সাথে ইসুবি সারের জন্য হাজার টাকার সার আগাম দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, উৎপাদিত তামাক সঠিক মূল্যে কৃষকের বাড়ি থেকে কেনার নিশ্চয়তাও আমরা পাই। যে কারণে এলাকায় রবি মৌসুমের বেড়ে চলেছে তামাকের চাষ।

 

তিনি আরও বলেন, তবে তামাক চাষে প্রশাসনে তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে হু হু করে বেড়ে চলেছে চাষবাস।

 

একই এলাকার তামাক চাষী বেলাল হোসেন ও দিলীপ রায় বলেন, বর্তমানে শ্রমিকের মজুরির অধিক পরিমাণ বেড়ে গেছে। যে টাকা খরচ করে ধান থেকে শুরু করে তরকারি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন করি সেসব বিক্রি করে আসল টাকাই ওঠে না। তাই সবকিছু চিন্তা করে অল্প খরচে কোম্পানীর টাকায় তামাক চাষ করে মোটামুটি ভালোই লাভবান হওয়া যায়।

 

শারীরিক ভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতির কথা জানতে চাইলে তারা বলেন, যখন তামাকের কাঁচা পাতাগুলো গাঁথি তখন বিশ্রী একটা গন্ধে খারাপ লাগে কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। যাইহোক কী করব? এখন তো খেয়ে বাঁচি। পরে যা হওয়ার হবে।

 

বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের কৃষক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর ধরে তামাক আবাদ করি, এবার ভেবেছিল আলুর আবাদ করব কিন্তু আলুর বীজের যে দাম, সঙ্গে সার কীটনাশক তো আছেই । তাই এবার ডিসিশন চেঞ্জ করেছি। আবারও তামাক কোম্পানী থেকে টাকা নিয়ে তামাক চাষাবাদ করব।

 

জানা যায়, কয়েকটি দেশি-বিদেশি তামাক কোম্পানীর প্রতিনিধিরা স্থানীয় কৃষকদের তামাক চাষ সম্প্রসারণে উৎসাহিত করছে। তামাকের ব্যাপক বাণিজ্যিক চাষ করা হয় চারটি জাতের, এফসিভি, মতিহার, জাতি ও বার্লী।

 

এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইখুল আরিফিন বলেন, গত বছর লালমনিরহাটে প্রায় ৯হাজার হেক্টরে বেশি জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছিলো। চলতি বছর তার থেকেও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

তিনি বলেন, কৃষি জমি এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য তামাক চাষ ক্ষতিকর। তবে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা কৃষকদের বিনামূল্যে তামাকের বীজ, সারসহ ঋণও দেন। বিনা পুঁজিতে লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এ জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের বিভিন্নভাবে সচেতন করেও তামাকের চাষ কমছে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone