ভয়ঙ্কর রূপে তিস্তা!
:: মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ :: বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার (২৬, ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর) ৩দিনের লাগাতার বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা, ধরলা, রত্নাই ও সানিয়াজানসহ প্রায় সকল নদ-নদীর পানি হু-হু করে বৃদ্ধি পেয়ে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।
লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৫টি ইউনিয়নই মৌসুমী বন্যায় কবলিত হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাট জেলার চারদিকে শুধু পানি আর পানি। লালমনিরহাটে বিপদ সীমার ৩৩সেন্টিমিটার উপরে তিস্তার পানি। বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হওয়ায় রোপা আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে অমানবিক জীবন যাপন করছেন। এসব মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার কারণে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি হয়েছে। অনেক জায়গায় সড়ক পথ ভেঙ্গে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি বাড়ি-ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে বানভাসি মানুষগুলো নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
লালমনিরহাটের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ বলেন, তিস্তা নদীর পানি বেড়ে প্রায় ৩৫টি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।
আরও বলেন, তিস্তা নদীর পাশাপাশি ধরলা ও রত্নাই নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী অববাহিকার ইউনিয়নের বন্যার অবস্থার অবনতি হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বন্যার খোঁজ খবর রাখছেন।
এদিকে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৩সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পানি বৃদ্ধির কারণে বর্তমানে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২দশমিক ১২মিটার। যা (বিপদসীমা ৫২দশমিক ১৫সেন্টিমিটার) যা বিপদসীমার ৩সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ২৯দশমিক ৬৪মিটার। যা (বিপদসীমা ২৯দশমিক ৩১সেন্টিমিটার) যা বিপদসীমার ৩৩সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপরে থাকলেও সকাল ৯টার পর থেকেই আবারও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষ এবার আরও একটি বন্যার কবলে পড়েছেন।
পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৫টি (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম) উপজেলার পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতিপূর্বেই কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দাবি, তিস্তায় এটি বড় ধরনের বন্যা। তবে বৃষ্টির কারণে উজানের ঢেউয়ের ফলে পানির প্রবাহ বেড়েছে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানির প্রবাহ কমেছে বলে দাবি করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, তিস্তার পানির প্রবাহ বেড়েছে। বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে। তবে ভারতে পানির প্রবাহ কমে গেলে তিস্তার পানি আরও কমবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি সমতল ৩০.২৬মিটার (বিপদসীমা ৩০.৮৭মিটার) যা বিপদসীমার ২৬১সেন্টিমিটার নিচে।
এছাড়াও রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, চাতলা, মালদহ, ত্রিমোহীনি, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই ও ভেটেশ্বর নদীতে বন্যার পানিও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, লালমনিরহাটে বৃষ্টিপাত ৫মিলিমিটার।