শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
গণতন্ত্র আমাদের হাতের নাগালে নাই-লালমনিরহাটে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় লালমনিরহাটে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ঔষধ সেবা অর্ধেক মূল্যে হত দরিদ্রদের ছানি অপারেশন অরবিট চক্ষু হাসপাতালে লালমনিরহাটে শীতের হরেক রকমের পিঠার দোকানের পসরা নিয়ে বসছেন বিক্রেতারা বিএনপির কর্মী সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত বাবা-মাকে একটা বাড়ি করে দেওয়ার স্বপ্ন যেন চিরতরে হারিয়ে গেলো লালমনিরহাটের শহীদ শাহিনুর আলমের বিএনপির কর্মী সভা অনুষ্ঠিত যতদিন নির্বাচন হবে না, ততদিন স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে ফিরে আসবেনা-অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু আলু চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন লালমনিরহাটের কৃষকেরা লালমনিরহাটে সরকার ফার্মেসী এর শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি (জিআর) চাল কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ

ইসলামে শিশুর অধিকার

-মোঃ তৌহিদুল ইসলাম: ইসলাম মানুষের জীবনের প্রতিটি ধাপেই তার অধিকার সংরক্ষণ করেছে। তাকে সম্মানিত করেছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদের স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদের দিয়েছি উত্তম রিজিক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের ওপর আমি তাদের অনেক মর্যাদা দিয়েছি। (সুরা: বনি ইসরাঈল, আয়াত ৭০)

জন্মের আগে শিশুর অধিকার: শৈশব মানুষের জীবনের প্রথম ধাপ। এ সময়টি প্রত্যেক মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময় তাদের যেভাবে গড়ে তোলা হবে, গোটা জীবন তাদের সেদিকেই ধাবিত করবে। আজকের শিশুই ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি।

শুধু দুনিয়ার জীবনেই নয়, সন্তানদের উত্তম দিক্ষা দিয়ে মৃত্যুর পরও তার ফলাফল পাওয়া যায়। এ কারণে প্রত্যেক মানুষেরই তাদের সন্তানকে গড়ে তোলার জন্য তাদের অধিকারগুলো সংরক্ষণ করা উচিত। শিশুর কিছু অধিকার শুরু হয় তার জন্মের আগ থেকেই। এর মধ্যে প্রথমটি হলো উত্তম স্ত্রী নির্বাচন করা। কারণ শিশুর ওপর তার মায়ের প্রভাব পড়বেই। ফলে তাকে একটি সুন্দর ও সফল জীবন উপহার দিতে চাইলে তার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে বিয়ের আগেই। রাসুল (সা.) বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে মেয়েদের বিয়ে করা হয়- তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বিনদারি। সুতরাং তুমি দ্বিনদারিকেই প্রাধান্য দেবে, নতুবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারি, হাদিস: ৫০৯০)
স্ত্রী যদি দ্বিনদার না হয়, তার প্রভাব সন্তানের ওপর পড়বে।

জন্মের পর শিশুর অধিকার দুধপানের ব্যবস্থা করা: জন্মের পর শিশুর অন্যতম অধিকার হলো তার দুধপানের ব্যবস্থা করা, তার যত্ন নেওয়া, তাকে সব ধরনের রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মায়েরা তাদের সন্তানদের পূর্ণ দুই বছর দুধ পান করাবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৩৩)

বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে একমত যে শিশুকে বুকের দুধ পান করানো মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। যেকোনো ধরনের ইনফেকশন, ডায়রিয়া ও বমি ভাব বন্ধ করার ক্ষেত্রে মায়ের দুধ ভালো রক্ষাকবচের কাজ করে। পরবর্তী জীবনে স্থূলতাসহ অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। আর মায়ের জন্য স্তন এবং ওভারির ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

সুন্দর নাম ঠিক করা: নাম প্রত্যেক মানুষের জীবন-মরণের সঙ্গী। তাই শিশুর নাম রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো অর্থবোধক নাম রাখা উচিত। রাসুল (সা.) পিতার ওপর সন্তানের যে কয়টি অধিকারের কথা উল্লেখ করেছেন, এর অন্যতম হলো তার সুন্দর নাম রাখা ও তাকে আদব-শিষ্টাচার শিক্ষা দেওয়া। (শুআবুল ইমান)

শিশুকে ভালোবাসা: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) দিনের এক অংশে বের হলেন, তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেননি এবং আমিও তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। অবশেষে তিনি বনু কাইনুকা বাজারে এলেন (সেখান থেকে ফিরে এসে) হজরত ফাতেমা (রা.)-এর ঘরের আঙিনায় বসলেন। অতঃপর বললেন, এখানে খোকা [হাসান (রা.)] আছে কি? এখানে খোকা আছে কি? ফাতেমা (রা.) তাঁকে কিছুক্ষণ সময় দিলেন। আমার ধারণা হলো, তিনি তাঁকে পুঁতির মালা, সোনা-রুপা ছাড়া যা বাচ্চাদের পরানো হতো, পরাচ্ছিলেন (সাজিয়ে দিচ্ছিলেন)। তারপর তিনি দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেলেন। তখন তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে (হাসানকে) মহব্বত করো এবং তাকে যে ভালোবাসবে তাকেও মহব্বত করো।’ (বুখারি, হাদিস: ২১২২)

দ্বিনি ইলম শিক্ষা দেওয়া: দ্বিনি ইলম শিক্ষা করা সব মুসলমানের ওপর ফরজ। তাই সন্তানকে তার দৈনন্দিন ইবাদতের জন্য যতটুকু ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা দরকার, কমপক্ষে ততটুকু ইলম অর্জনের ব্যবস্থা করতেই হবে। তাকে পবিত্রতা শিক্ষা দিতে হবে, কোরআন শিক্ষা দিতে হবে, প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দিতে হবে। শিশুকে ভালোভাবে গড়ে তোলার জন্য তাকে নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করা, তার প্রতিভাকে মূল্যায়ন করা, সাধ্যমতো তাকে সময় দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি তাকে আস্তে আস্তে বিভিন্ন গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করাও মা-বাবার দায়িত্ব।

খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া: শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি তার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিও প্রয়োজন। এ জন্য দরকার চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা। খোলা মাঠ, মুক্ত আকাশ ও বিশুদ্ধ বাতাস শিশুর মনকে প্রফুল্ল করে। তাই তাদের মাঝেমধ্যে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া উচিত। শিশুদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য আত্মীয়- স্বজন, প্রতিবেশী ও সমাজের সবার সঙ্গে মেশার সুযোগ দিতে হবে। সৃজনশীল কাজের চর্চা করাতে হবে। অনেকে অন্যের সন্তানের সঙ্গে তুলনা করে নিজ সন্তানকে সারাক্ষণ পড়ার টেবিলে আটকে রাখে। অথচ পড়ালেখার চাপ সীমা ছাড়ালে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেন, শিশু যখন মক্তব (বিদ্যালয়) থেকে ফিরে আসে তখন তাকে খেলাধুলার সুযোগ দেওয়া উচিত, যাতে দীর্ঘ সময়ের পড়াশোনার চাপ দূর হয়ে যায়। শিশুকে যদি খেলাধুলার সুযোগ না দেওয়া হয় এবং সারাক্ষণ বই-খাতা নিয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তার স্বতঃস্ফূর্ততা বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। পড়াশোনা তার কাছে কারাগারের শাস্তি বলে মনে হবে। ফলে সে যেকোনোভাবে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তির জন্য অস্থির হয়ে উঠবে। (ইহয়াউ উলুমিদ দিন: ৩/৫৯)

নামাজে অভ্যস্ত করা: শৈশব থেকে সন্তানকে নামাজে অভ্যস্ত করে না তুললে ভবিষ্যতে সে নামাজের প্রতি যত্নবান হতে পারবে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘তোমরা সন্তানদের নামাজের প্রতি যত্নবান হও এবং তাদের ভালো কাজে অভ্যস্ত করো। কেননা কল্যাণ লাভ অভ্যাসের ব্যাপার।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস: ৫০৯৪)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। তাদের বয়স ১০ বছর হওয়ার পর (প্রয়োজনে) নামাজের জন্য প্রহার করো এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৪৯

শিশুর সঙ্গে রূঢ় ব্যবহার না করা: সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, এক থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ৮৯ শতাংশ সমীক্ষা চলাকালীন আগের এক মাসে অন্তত একবার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। (প্রথম আলো)

শিশুর সঙ্গে রূঢ় আচরণ করা মহানবী (সা.) পছন্দ করতেন না। তিনি শিশুর সঙ্গে স্নেহশীল আচরণ না করায় এক পিতাকে ভর্ৎসনা করেন। প্রহার ও বকাঝকার পরিবর্তে উত্তম আচরণ ও উপদেশের মাধ্যমে শিশুকে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও এই নীতি অনুসরণ করতেন। হজরত আনাস (রা.) তাঁর শৈশবের দীর্ঘ ১০ বছর রাসুল (সা.)-এর সেবায় কাটিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য হলো, “আমার কোনো কাজে আপত্তি করে তিনি কখনো বলেননি এমন কেন করলে বা এমন কেন করলে না।” (মুসলিম, হাদিস: ২৩০৯)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম তিনটি প্রিয় বস্তুর কথা বলেছেন। তন্মধ্যে একটি, শিশু। প্রিয়নবী মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করছেন। মদিনায় প্রবেশমাত্রই শিশুরা তার কাছে ছুটে আসল। তিনি সানন্দে কোলে তুলে নিলেন। শিশুদের স্পর্শে তিনি আনন্দ লাভ করতেন।

এক বেদুঈন এসে মহানবীকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি শিশুদের চুমু দেন? আমি তো কখনো শিশুদের চুমু খাই না। উত্তরে রাহমাতুল্লিল আলামীন নবি বললেন, আল্লাহ তায়ালা যদি তোমার অন্তর থেকে দয়া উঠিয়ে নেন, আমার কী করার আছে?” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)।

শিশুর বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার আছে। কিন্তু ধর্মীয় অধিকার? ইসলাম ধর্মীয়ভাবে শিশুকে নিরাপত্তা দিয়েছে। কুরআন সুস্পষ্টভাবে শিশু হত্যা’ হারাম করেছে (বনি ইসরাইল, ১৭: ৩১)। একটি যুদ্ধে প্রিয় নবী সাহাবায়ে কেরামকে শিশুদের আক্রমণ করতে নিষেধ করেছেন (বুখারী ও মুসলিম)। কুরআন পিতা-মাতাকে শিশুর যথাযথ ভরণ-পোষণের নির্দেশ দিয়েছে (সূরা বাকারা, ২: ২৩৩)। শিশু যেন জুলুমের শিকার না হয়, সুবিচার পায় তারও প্রকট নির্দেশ এসেছে হাদিস শরীফে। (মুসনাদে আহমদ)।

প্রত্যেক পিতা-মাতার উচিত শিশু সন্তানকে উত্তম শিক্ষা দেওয়া। রাসূলে এরশাদ ফরমান, “পিতা- মাতার পক্ষ থেকে সন্তানকে উত্তম চরিত্র শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে না” (তিরমিযি শরীফ)। আর অবশ্যই কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। কেননা, কুরআনের মাধ্যমেই সে ভবিষ্যত জীবনে ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে আকৃষ্ট হবে। হাদিস শরীফে এসেছে, “পিতা-মাতার প্রতি শিশুর তিনটি হক আছে। তন্মধ্যে একটি কুরআন শিক্ষা দেওয়া” (তাম্বিহুল গাফিলীন)।

শিশুর প্রতি ইসলাম অত্যন্ত কোমল। যে ব্যক্তি শিশুকে স্নেহ করে না তাকে ‘উম্মত নয় বলে হাদিস শরীফে তিরস্কার করা হয়েছে (তিরমিযি শরীফ)। রাহমাতুল্লিল আলামীন নবী তার উম্মতদেরকে “শিশুকে ভালোবাসতে, দয়া করতে এবং তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী ও মুসলিম)। একজন মহিলা তার একটি খেজুর দুই শিশুকে ভাগ করে খাওয়ালেন। এর বিনিময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম তাকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দিলেন (মুসলিম শরীফ)।

শিশুকে পাশে রেখে মা নামাজ পড়তে দাঁড়ায়। অবুঝ শিশু কান্না করে। করুণার নবী মায়ের নামাজ সংক্ষেপ করার সুযোগ দিয়েছেন। এবং স্নেহঝরা কণ্ঠে বললেন, “আমি চাই না, তার মায়ের কষ্ট হোক” (বুখারী ও মুসলিম)।

এভাবে ইসলাম বহুভাবে শিশুদের যথার্থ অধিকার নিশ্চিত করেছে। শিশুদের নিরাপদ জীবনের ব্যবস্থা করেছে। আমাদেরও উচিত শিশুদের প্রতি ইসলামি নির্দেশ অনুসারে ব্যবহার করা। তাদেরকে প্রাপ্য অধিকার প্রদান করা। ইসলাম যেভাবে বলেছে সেভাবেই একজন শিশুকে লালন-পালন করা। তাদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত এবং শিষ্টাচারে সামাজিক হিসেবে গড়ে তোলা। ইসলামে একটি শিশুর জীবন নির্মল-নিষ্কলুষ। ‘শিশু অধিকার’ সম্বন্ধে ইসলামই সবচেয়ে সচেতন এবং সজীব। তাই তো ইসলাম বলে, ‘ফরজ নামাজের সেজদারত অবস্থায় তোমার পিঠে কোনো শিশু উঠেছে? কষ্ট সত্ত্বেও সেজদা লম্বা করো, যতক্ষণ তারা না নামে।”

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone