লালমনিরহাটে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ১২ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (১০ আগস্ট) বিকাল ৪টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন প্লাটফর্ম প্রাঙ্গণে কর্ম বিরতিতে অংশগ্রহণকারী রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যবৃন্দের আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন ও র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় সর্বস্তরের বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী’র সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী-তে বিদ্যমান বৈষম্য ও অসঙ্গতি সমূহ দূরীকরণের আহবান জানিয়ে কর্মবিরতি পালন ও স্মারকলিপি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা বরাবরে যথাযথ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চীফ কমান্ড্যান্ট, বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী লালমনিরহাট বিভাগের কমান্ড্যান্টের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, নানা দুর্যোগপূর্ণ সময় ও ক্রান্তিকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাষ্ট্রের অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাষ্ট্রের বেলসম্পদ রক্ষা, রেল সম্পদ চুরি বা অবৈধভাবে অর্জন বা দখল বা দখলের চেষ্টার মত ফৌজদারী অপরাধে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার, চৌকি থেকে আসামী চালান, মামলার তদন্ত ও অধিক্ষে ভূক্ত এলকায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সমূহে মামলা পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ডিউটি করানো হলেও এই বাহিনীকে ঝুঁকি ভাতা প্রদান করা হয় না। এছাড়াও “শৃঙ্খলা বাহিনী” ভূক্ত কোনো বাহিনী যদি “সামরিক বাহিনী” হয় তবে সব সময় তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় এবং “বেসামরিক শৃঙ্খলা বাহিনী” হলে তা পরিচালিত হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে। কিন্তু প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনীর ন্যায় বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী গঠিত হলেও এ বাহিনী পরিচালিত হয় একটি সংস্থা/অধিদপ্তরের অধীন। যা মহান সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদের আলোকে গঠিত শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচালনার পরিপন্থি। কেননা বাংলাদেশের সকল সুশৃঙ্খল বাহিনী নিজেরাই অধিদপ্তরের মর্যাদা সম্পন্ন (যেমন: পুলিশ, বিজিবি, আনসার, কোষ্টগার্ড প্রভৃতি)। বাষ্ট্রের অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনীর বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নিজস্ব আইন এবং নিয়োগবিধিমালা থাকলেও এই বাহিনীর কোনো নিজস্ব মহাপরিচালক নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরে এই বাহিনী বাংলাদেশ রেলওয়ের সিভিল অফিসারদের দ্বারা তাদের মনগড়া আদেশ মাফিক পরিচালিত হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে জিএম/ডিআরএম মহোদয়গণের নির্দেশ মোতাবেক নিরীহ বাহিনীর সদস্যদের উপর শাস্তি আরোপ করা হয়। যার দরুন বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যন্ত ও হতাশাগ্রস্থ। নিম্নে কিছু দাবি ক্রমানুসারে পেশ করা হলো, কমান্ড্যান্ট দত্তর থেকেই আইনি মতামত প্রদান সহ ধাপে ধাপে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর অগ্রগামী করতে হবে। অন্যথায় এ কর্ম বিরতি পালন কর্মসূচী অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং অসন্তোষ তীব্র আকারে ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের মহান সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদের আলোকে গঠিত শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিন কে বেসামরিক শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে অবশ্যই সংবিধান, রুলস অব বিজনেস- ১৯৯৬, এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কাজের ধরণ অনুসারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রযোজ্য Allocation Among the Ministries as per Rules of Business-1996 (Revised upto 2017) মেনে বাহিনীর তত্ত্বাবধান ও সংস্থাপন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন দিতে হবে। সংবিধানের ১৫২ নং অনুচ্ছেদ এর আলোকে গঠিত শৃঙ্খলা বাহিনী কখনো সংস্থার অধীনে পরিচালিত হয় না এবং রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০১৬ এর ৮ এর ১ ধারা মোতাবেক বাহিনীর এ দায়িত্ব সরকার অর্থ্যাৎ মন্ত্রণালয়কেই দেয়া হয়েছে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আইন-২০১৬, সংবিধান ও রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ এর সাথে সাংঘর্ষিক হলে সংবিধানকে প্রাধান্য দিয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যগণকে সিভিল কর্মচারী হিসেবে বিবেচনা বন্ধ করতে হবে। কেন না সিভিল কর্মচারী পরিগণিত করলে সাপ্তাহিক ছুটি ০২ (দুই) দিন প্রযোজ্য হয়, কিন্তু রেলওয়ে বাহিনীর সদস্যরা সাপ্তাহিক ছুটি পায়না নৈমিত্তিক ছুটি পায় শুধু।
প্রজাতন্ত্রের সকল শৃঙ্খলা বাহিনী রেশন ও ঝুঁকিভাতা পায়, এমনকি রেলওয়ে পুলিশ সহ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর শূন্য পদে এসে কাজ করা আনসার সদস্যগণও রেশন ও ঝুঁকিভাতা পায়। আইনের বিধান অনুগামী না হয়ে অধিদপ্তরের অধীন থাকায় রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীই এ সুবিধা পায় না। তাই বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে গিয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর রেশন ও ঝুঁকিভাতা প্রাপ্তি নিশ্চিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
প্রতিদিন ০৮ (আট) ঘন্টার বেশি চাকুরি করানো হলে অতিরিক্ত কর্ম ঘন্টার জন্য দ্বিগুণ হারে ওভার টাইম/অধিকাল ভাতা দিতে হবে।
নিয়োগ বিধি সংশোধন করে প্রতি বছর শূন্য পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ করতে হবে এবং ০৩ (তিন) বছর পর পর শূন্য পদে নিয়মিত পদোন্নতি প্রধান করতে হবে। ডিপার্টমেন্টাল সদস্য থেকে “অফিসার ও সদস্য পদ সমূহে ৭০% পদোন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর মাঠ পর্যায়ের “চেইন অব কমান্ড” কোনো সিভিল অফিসারের হাতে থাকবে না। চাটার অব ডিউটি মেনে শুধু রেল সম্পত্তি সুরক্ষা ডিআরএম/জিএম মহোদয় এর নিকট দায়বদ্ধ থাকবে বাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ। এসিআর, পদোন্নতি প্রস্তুতি অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুরূপ পদ্ধতিতে হবে।
আন্তঃবাহিনী সমন্বয় পূর্বক রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি পদে বিদ্যমান বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে।
বিগত সামরিক শাসন আমলে জারীকৃত অধ্যাদেশ ২০১৬ সালে আইনে পরিণত হলে ও আইন বাস্তবায়নে কোনো বিধিপ্রণয়ন করা হয়নি বিগত ০৮ (আট) বছরেও। এমনকি ২০১৮ সালের পরে কোনো নিয়োগও সম্পন্ন করা হয়নি। জনবল ঘাটতির কারণে অতিরিক্ত ডিউটি করতে হয়। বিধায় সকল শূন্যপদ পূরণে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।
ব্যারাক ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নির্মাণ করতে হবে।
ভোলাগঞ্জ সার্কেল সহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে বাহিনীর সদস্যগণকে প্রত্যাহার করতে হবে।
সিকিউরিকি ম্যানুয়েল-১৯৮৫ মেনে চার্জ প্রদান করতে হবে।
এ ন্যায্য দাবী নিয়ে সাময়িক কর্মবিরতিতে যাওয়া বাংলাদেশ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সকল অফিসার ও সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ধরণের বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। অন্যথায় এ একই ইস্যু নিয়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে।