লালমনিরহাটের তিস্তা, ধরলা, রত্নাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাকোয়া, চাতলা, মালদহ, ত্রিমোহীনি, মরাসতি, গিরিধারী, গিদারী, ধোলাই, শিংগীমারী, ছিনাকাটা, ধলাই ও ভেটেশ্বর নদীতে বন্যার পানি বৃদ্ধির ফলে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গের খবর পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উক্ত নদীর উপভাগিকায় ধানের বীজতলা ও সবজি দীর্ঘদিন বন্যার পানির তলদেশে নিমজ্জিত থাকার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে। এর পাশাপাশি তলিয়ে গেছে পুকুর। এতে করে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
জানা গেছে, খাদ্য সংকটের পাশাপাশি বানভাসি মানুষগুলো বিভিন্ন পানিবাহি রোগে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য এখনও কোন ভ্রামমান্য চিকিৎসক টিম তাদের পাশের ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ নিয়ে দাঁড়ায়নি বলে দাবি করছেন ভুক্তভোগীরা।
আরও জানা গেছে, বানভাসি মানুষের পাশাপাশি তাদের ঘরে থাকা গরু-ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগির উচু স্থানে কোন রকমে রাখলেও খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। এদের পাশে এখনও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কোন প্রতিনিধির আশারও খবরও পাওয়া যায়নি।
আরও দেখা গেছে, বন্যার পানিতে রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে গেছে। বানভাসিদের যাতায়াতে দেখা গেছে চরম ভোগান্তি। এ থেকে পরিত্রাণের যেন কোন পথ নেই।
এদিকে লালমনিরহাট বন্যার তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বৃহসপতিবার (৪ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে তিস্তা নদীর উপর দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১দশমিক ৬৭মিটার। যা (বিপদসীমা ৫২দশমিক ১৫সেন্টিমিটার) যা বিপদসীমার ৪৮সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে ২৮দশমিক ৯২মিটার। যা (বিপদসীমা ২৯দশমিক ৩১মিটার) যা বিপদসীমার ৩৯সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ভোর থেকে কাউনিয়া বাদে অন্যান্য পয়েন্টে পানি কমে বিপদসীমার নিচে থাকলেও দুপুর ১২টার পর থেকেই কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা নদীর তীরবর্তী দহগ্রাম, সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ডাউয়াবাড়ী, ভোটমারী, কাকিনা, মহিষখোচা, পলাশী, খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
এদিকে ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি সমতল ৩৯.৩০মিটার (বিপদসীমা ৩১.০৯মিটার) যা বিপদসীমার ৭৮সেন্টিমিটার নিচে।
অপরদিকে পাটগ্রাম পয়েন্টে পানি সমতল ৫৬.৬২মিটার (বিপদসীমা ৬০.৩৫মিটার) যা বিপদসীমার ৩৭৩সেন্টিমিটার নিচে।
কিন্তু লাগাতার বৃষ্টিপাতের কারণে ধরলা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত মোগলহাট, কুলাঘাট ও বড়বাড়ী ইউনিয়ন বন্যায় কবলিত।
লালমনিরহাটে গতকাল সকাল ৯.০০টা হতে সকাল ৯.০০টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত ০৩ মিলিমিটার।
বাপাউবো পানি ভবন ঢাকার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সতর্কীকরণ বার্তায় উল্লেখ করা হয় যে, উত্তরাঞ্চল (০৪ জুলাই, ২০২৪ খ্রি.) আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ৪৮ ঘন্টায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আগামী ৪৮ ঘন্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে তিস্তা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং ধরলা ও ঘাঘট নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রারম্ভে নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং পরবর্তি সময়ে চলমান পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত স্টেশন: ১০ টি। কুড়িগ্রাম (ধরলা) +০২, গাইবান্ধা (ঘাঘট) +১১, নুনখাওয়া (ব্রহ্মপুত্র) +৬৩, হাতিয়া (ব্রহ্মপুত্র) +৬৯, চিলমারী (ব্রহ্মপুত্র) +৬৩, ফুলছড়ি (যমুনা) +৬২, বাহাদুরাবাদ (যমুনা) +৬২, সাঘাটা (যমুনা) +৫৩, সারিয়াকান্দি (যমুনা) +১৯ এবং সিরাজগঞ্জ (যমুনা) +০৫।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত (মি.মি.): নেই।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সংশ্লিষ্ট উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত (মি.মি.): পাসিঘাট (অরুণাচল) ১২০.০, দিব্রুগড় (আসাম) ৬৪.০ এবং দার্জিলিং (পশ্চিম বঙ্গ) ৫১.০।