লালমনিরহাটে শিশু সন্তান আলাউদ্দিন সরকার আপনের সন্ধান চাই দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) সকাল ১০টা হতে ১১টা পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় গোল চত্ত্বরে পরিবার ও গ্রামবাসীর আয়োজনে ঘন্টাব্যাপী এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিখোঁজ শিশুর পিতা মোঃ জরিপ উল্লাহ, ফুফু (পালিত) মা অলেকা বেগম, চাচা আব্দুল জলিল প্রমুখ। এ মানববন্ধনে যোগ দেন লালমনিরহাট পৌরসভার বালাটারী এলাকার স্থানীয় ৫শতাধিক সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে নিখোঁজ শিশুর পিতা মোঃ জরিপ উল্লাহ স্বাক্ষরিত শিশু সন্তান আলাউদ্দিন সরকার আপন এর সন্ধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক ও লালমনিরহাট পুলিশ সুপার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন পরিবার ও এলাকাবাসী।
জানা যায়, লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের মালিটারী তালিমুল কোরআন রহমানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে নিখোঁজ আলাউদ্দিন সরকার আপনের সন্ধান মেলেনি ১৯দিনেও।
লালমনিরহাট সদর থানায় শিশু আপনের বাবা একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এর পাশাপাশি তার ফুফু (পালিত মা) মোছাঃ অলেকা বেগম ও একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন।
মানববন্ধনে লালমনিরহাট পৌরসভার বালাটারীর বাসিন্দা শিশু আপনের বাবা মোঃ জরিপ উল্লাহ বক্তব্যে এ তথ্য উল্লেখ্য করেন।
নিখোঁজ সংক্রান্ত সাধারণ ডায়েরী ও আপনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, শিশু আপন হারাটি ইউনিয়নের মালিটারী তালিমুল কোরআন রহমানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার আবাসিক থেকে নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করতো। গত ১৬ মে দুপুরের দিকে মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হয় সে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও শিশু আপনকে না পেয়ে মাদরাসা সুপার ওসমান গনি আলাউদ্দিন সরকার আপনের বাবা জরিপ উল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
১৯দিন পেরিয়ে গেলেও লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ শিশু আপনের কোনো খোঁজ দিতে বা উদ্ধার করতে পারেনি। এ কারণে শিশু আপনের পরিবার তাদের সন্তানকে ফিরে পাবেন কিনা সঙ্কায় রয়েছেন। তারা জানেনও না তাদের সন্তান জীবিত আছে নাকি মারা গেছে।
এদিকে লালমনিরহাট সদর থানায় মোছাঃ অলেকা বেগম বাদী হয়ে লালমনিরহাটের কিসামত হারাটি মালিটারীর মোঃ এনামুল হক (৪৫), মোঃ ভোলা মামুদ (৪০) এর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেন।
অলেকা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন ছেলে আপনকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তখন শিশুটির পালিত মা গত ১ জুন দুপুরে সন্তানের খোঁজে আবারও মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসা গভর্নিং কমিটির নির্বাহী সদস্য এনামুল ও মাদরাসা শিক্ষক ভোলা মামুদসহ আরও কয়েকজন গালিগালাজসহ চুলের মুঠি ধরিয়া বেধরক মারতে থাকে এবং বলে এখানে তোদের কোন সন্তান নাই এখনি এখান থেকে চলে যা নইলে তোদের সবাইকে ওপারে পাঠিয়ে দিব। পরে স্থানীয় লোকজন আগাইয়া আসলে তারা হুমকি দিয়া চলে যায়।
আপনের বাবা জরিপ উল্লাহ বলেন, আজ ১৯দিন ধরে ছেলেকে না পেয়ে আমি ও আমার স্ত্রীসহ পরিবারের সবাই পাগলের মতো হয়ে গেছি। আপনারা কিছু একটা করেন। আমার বুকের ধন শিশু সন্তান আপনকে ফেরত এনে দেন।
শিশু আপনের মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার কলিজার টুকরা সন্তান কোথায় আছে, কেমন আছে জানি না। ১৯দিন হলো এখনো তার কোনো খোঁজ পুলিশ পেল না। আমার সন্তানকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমার বুকের ধনকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন।
মালিটারী তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসার সুপার ওসমান গনি বলেন, আমরা চারিদিকে খোঁজার জন্য লোক লাগিয়েছি। আল্লাহ সহায় থাকলে তাকে আমরা খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওমর ফারুক বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী ও গত ১ জুন একটি অভিযোগ দিয়েছেন শিশুটির পরিবার। শিশুটি আসলে কোথায় আছে তার তদন্ত চলছে। তারপরেও সব জায়গায় ছেলেটির ছবিসহ সংবাদ পাঠানো হয়েছে হয়তো খুব তারাতারী আমরা তাকে খুঁজে পাবো।