একটা সময় গ্রাম বাংলার বনে-জঙ্গলে অযত্ন আর অবহেলায় বেড়ে উঠতো কাঠলিচু বা আঁশফল গাছ। কিন্তু বর্তমান এই সময়ে এটি একটি দুষ্প্রাপ্য ফল হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এ ফলটি। কাঠলিচু বা আঁশফল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ফল। একে বলা হয় গরিবের লিচু। ফল গোল আকারের, শাঁস সাদা, খুব রসালো ও মিষ্টি।
যা লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার ১নং মোগলহাট ইউনিয়নের ফুলগাছ গ্রামে কাঠলিচু বা আঁশফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ না করা হলেও লালমনিরহাটের বাড়ির আঙ্গিনা, পুকুর পাড় ও বাগানে এ ফল গাছে গাছে এখন পরিপূর্ণ।
কাঠলিচু বা আঁশফল ক্রান্তীয় অঞ্চলের গাছ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভিদ হলেও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় এ গাছ দেখা যায়। কাঠলিচু বা আঁশফলের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায়। বীজ থেকে উৎপাদিত গাছ হুবহু মাতৃগুণ বহন করে না। আর ফল ধরতে দীর্ঘ সময় লাগে। এটি গুটি কলম করে এর বংশ বিস্তার করা যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ কাঠলিচু বা আঁশফল বেশ কিছু উন্নতমানের জাত প্রবর্তনের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করেছে।
বারি কাঠলিচু বা আঁশফল-১ ও বারি কাঠলিচু বা আঁশফল-২ নামে উন্নত জাত বাংলাদেশে সর্বত্র মুক্তায়ন করা হয়েছে।
কাঠলিচু বা আঁশফল গাছ ৬ থেকে ৮মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। কাঠলিচু ফল গাছ মধ্যম আকারের চিরসবুজ গাছ। ফলবিহীন গাছ দেখলে মনে হবে লিচুগাছ। এটির খুবই সুস্বাদু ফল।
এ ফল ও লিচু ধরার সময় একই। ফল দেখতেও অনেকটা লিচুর মতো গোলাকার। বীজও গোলাকার। তবে আকারে ছোট, রসাল অংশ খুবই কম। লিচুর চেয়ে আমিষের পরিমাণ বেশি।
বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হলেও আমিষগুণে ভরা এ ফলের কদর থাকলেও পরিচিতি কম। কাঠলিচু বা আঁশফলের স্বাদ আগস্ট মাস পর্যন্ত পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।
১নং মোগলহাট ইউনিয়নের ২নং ফুলগাছ গ্রামের কাঠলিচু বা আঁশফল চাষী মোঃ মিজু আহমেদ ওরফে লিফু জানান, আমার বাড়ির উঠানের জমিতে একটি কাঠলিচু বা আঁশফল গাছ রয়েছে। এ গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম খন্দকার বলেন, লালমনিরহাটে তেমন কাঠলিচু বা আঁশফলের বাগান নেই। তবে এরই মধ্যে লিফুর জমিতে এ গাছ রয়েছেন। কাঠলিচু বা আঁশফলের বাগানে কৃষকরা লাভবান হবে। এক্ষেত্রে বাগান করতে আগ্রহীদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হবে।