আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: তিস্তা নদীর পানি লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার অতীতের ৩০বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছে।
গতকাল রবিবার রাত ১২টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫৩দশমিক ১৫সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এর আগে রাত ১০টায় একই পয়েন্টে তিস্তার নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩দশমিক ১৩সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি ছিল ২০১৯ সালের তুলনায় একই পয়েন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিপদসীমা অতিক্রমের রেকর্ড।
২০১৯ সালের ১৩ জুলাই এই তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৩দশমিক ১০সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। এ অবস্থায় লালমনিরহাট জেলায় ৪০হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে সরকারি হিসেবে এর পরিমাণ ২১হাজার।
এদিকে তিস্তার পানি ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করার ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ গতকাল রবিবার রাতে বিশেষ সতর্কতা জারি করে। লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতেও মাইকিং করা হয়েছে।
এদিকে হাতীবান্ধা-বড়খাতা বাইপাস সড়কে পানির চাপ ঠেকাতে এলাকার লোকজন বালির বস্তা ফেলছে। অন্যদিকে আদিতমারীতে একটি বালুর বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলা অব্যাহত আছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে আজ সোমবার ১৩ জুলাই দুপুর ১২টায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলার নদ-নদীর পানি পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তার পর ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়তে শুরু করছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ও ফুলবাড়ীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে আজ সোমবার ১৩ জুলাই দুপুরে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে লালমনিরহাট শহর ও শহরতলীর লোকজন। ধরলার এমন অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট, কুলাঘাট ও বড়বাড়ী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
এ দিকে ভারতের গজালডোবা ব্যারেজ থেকে ধেয়ে আসা পানি নিয়ন্ত্রণ করতে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দেওয়ায় লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বানভাসি এসব মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বৃষ্টিতে লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৭টি ওয়ার্ডের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
শুধু এই ইউনিয়নেই ১০হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন জানিয়েছেন।
এসব পানিবন্দি পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারিভাবে উপজেলার দুটি ইউনিয়নের পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য ৩৫মেট্টিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, পানিবন্দি পরিবারগুলোর সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে ৩৫মেট্টিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ব্যারাজের উজান ও ভাটিতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, পানিবন্দি এলাকার মানুষের জন্য ২শত ৪৩মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ১৭লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।