দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের কুলাঘাটে শেষ পর্যন্ত রত্নাই নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হলে ১শত ৯১কোটি টাকা ব্যয়ে ধরলা নদীর উপর ৯শত ৫০মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯দশমিক ৮০মিটার প্রস্থ “শেখ হাসিনা ধরলা সেতু”-এর সুফল পাবেন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার (ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী) উপজেলার প্রায় ২০লক্ষ মানুষ। এতে করে পাল্টে যাবে দু’জেলার দৃশ্যপট।
জানা গেছে, লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্ববধানে লালমনিরহাট জেলার লালমনিরহাট সদর উপজেলার ২নং কুলাঘাট ইউনিয়নের স্ট্রীল সেতুর পশ্চিম দিকে রত্নাই নদীর উপর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ সেতুটি নির্মাণ হলে পার্শ্ববর্তী জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরাঙ্গামারী উপজেলার প্রায় ২০লক্ষ মানুষ প্রকৃত অর্থে “শেখ হাসিনা ধরলা সেতু” নির্মাণের শতভাগ সুফল পেতে যাচ্ছে। সেই সাথে কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বঙ্গ সোনাহাট ইউনিয়নের সেনারহাট স্থলবন্দর হতে ছেড়ে আসা ট্রাকাগুলো ২৫কিলোমিটার ঘুরে কুড়িগ্রাম সদর দিয়ে লালমনিরহাটের তিস্তা সড়ক সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্য স্থানে যেতে হবে না। তখন সরাসরি “শেখ হাসিনা ধরলা সেতু”র উপর দিয়ে লালমনিরহাট তিস্তা সড়ক সেতু হয়ে ট্রাকগুলো চলাচল করতে পারবে। “শেখ হাসিনা ধরলা সেতু” উদ্বোধনের পর দীর্ঘ ৫বছর অতিবাহিত হয়েছে। এতে করে শুধুমাত্র পিকাপ, ট্রাক, থ্রি-হুইলার, রিক্সা, অটো, অটোরিক্সা, বাই-সাইকেল, মোটর সাইকেল ও পায়ে হেঁটে সেতু পাড় হওয়া যায়। এতে করে আংশিক সুফল পেলে এখন সেতুর পুরোপুরি সুফল পেতে যাচ্ছে লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম জেলাবাসী।
২০২৩ সালের ৮ মার্চ লালমনিরহাট জেলা সদরের কুলাঘাট এলাকার প্রায় ২১কোটি টাকা ব্যয়ে রত্নাই নদীর উপর ১৩০.৮মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রীজের কাজ শুরু হয়েছে। এ ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় লালমনিরহাট ও পাশ্ববর্তী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা লক্ষ লক্ষ মানুষ শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর শতভাগ সুফল পেতে যাচ্ছে। নতুন ব্রীজটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গেলে ধরলা সেতু দিয়ে মালবাহী ভারী যানবাহন, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী থেকে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরসহ ঢাকাগামী বাস চলাচল শুরু হলে ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী উপজেলা, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থনৈতিক সফলতার দ্বার দ্বিগুণভাবে উন্মোচন হবে বলে প্রত্যাশা দু’জেলার মানুষের।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ জুন সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়েরর মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার “শেখ হাসিনা ধরলা সেতু”টি শুভ উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি। সেই দিন থেকে সাধারণ মানুষের চলাচলসহ ছোট ছোট হালকা যানবাহন চলাচল শুরু হলেও পণ্য পরিবহনের জন্য ভারী যানবাহন ও ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসসহ কোনো যানবাহন আজও চলাচল করতে পারছে না। ফলে দীর্ঘ ৫বছর ধরে শতভাগ সুফল পেতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেতু থেকে দেড় এক কিলোমিটার দূরে লালমনিরহাটের কুলাঘাট এলাকায় রত্নাই নদীর উপর জরাজীর্ণ বেইলি ব্রীজটি। ছোট আকারের বেইলি ব্রীজটির ভগ্নদশা হওয়ায় শুধু মাত্র হালকা যানবাহন ছাড়া পণ্য পরিবহনে ভারী যানবাহনসহ ঢাকাগামী কোনো বাস চলাচল করতে পারছেনা।
লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আব্দুল হামিদ বাবু বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রত্নাই ব্রীজটির মাধ্যমে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে শতভাগ অবদান রাখবে। এর পাশাপাশি ধরলার পূর্ব পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। যার ফলে সোনাহাট স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে।
কুলাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, রত্নাই নদীর উপর জরাজীর্ণ বেইলি ব্রীজের কারণে প্রায় ৭০কিলোমিটার ঘুরে ঢাকা, রংপুর ও লালমনিরহাটসহ কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে পণ্য আনতে হয়। এতে গাড়ি ভাড়া দ্বিগুণের পাশাপাশি সময়ও অনেক বেশি লাগে। তবে ব্রীজের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। ব্রীজটি নির্মাণ শেষ হওয়া মাত্রই ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে এবং লাভবান হবে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অর্থনীতিও।
লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ সরদার বলেন, প্রায় ২১কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০.৮মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রীজটি কনক্রিট অ্যান্ড স্টিল টেকনোলজি লিমিটেড নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। লালমনিরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগও কাজের দেখাশুনা করবে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩ জুন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থ ও প্রযুক্তিতে ১শত ৯১কোটি টাকা ব্যয়ে ৯শত ৫০মিটার দীর্ঘ সড়ক গার্ডার সেতুটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি। এরপর থেকে সবার চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।