জমি খারিজ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাওয়ায় ৫জন সাংবাদিককে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে জেলে পাঠানোর হুমকি দেওয়ার ঘটনায় লালমনিরহাট সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ-আল নোমান সরকারকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, ঘটনার পর বৃহস্পতিবারই তাঁকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। তাঁকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় বদলি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ সংক্রান্ত একটি আদেশ ইতোমধ্যে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসেছে। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে ৫জন সাংবাদিককে আটকে রেখে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল দেয়ার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত লালমনিরহাট সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ-আল নোমান সরকার। আটকে রাখার প্রায় ৪০মিনিট পর লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি. এম. এ মমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কার্যালয়ের গেটের তালা খুলে তাদের মুক্ত করেন।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকদের অভিযোগ, ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা মানুষজন নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন মর্মে তথ্য সংগ্রহে যান মাইটিভি ও ডেইল অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক মাহফুজ সাজু। এ সময় ভূমি অফিসের ক্রেডিট চেকিং কাম-সায়রাত সহকারী রাশিদুল ইসলাম ওরফে রাসেল সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে ভূমি অফিসের সার্টিফিকেট সরকারি মেহেদী হাসান ও অফিস সহায়ক মোঃ ইমদাদুল হক ওই সাংবাদিককে হেনস্তা করেন। পরে খবর পেয়ে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা ভূমি অফিসে উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ জানান। এ সময় লালমনিরহাট সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ-আল নোমান সরকার অফিসে উপস্থিত হয়ে অফিসের কলাপসেবল গেট তালা মেরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে উপস্থিত সাংবাদিকদের জেল দেয়ার প্রস্তুতি নেন। পরে সাংবাদিকরা লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহকে বিষয়টি জানানোর পর লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি. এম. এ মমিন ঘটনাস্থলে আসলে সাংবাদিকদের তালাবদ্ধ অবস্থায় পান। এ ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিকভাবে লালমনিরহাট জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়ে বড়বাড়ী-লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ এসে লালমনিরহাট সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ-আল নোমান সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিলে সাংবাদিকরা অবরোধ তুলে নেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মাইটিভি ও ডেইল অবজারভার পত্রিকার সাংবাদিক মাহফুজ সাজু বলেন, সাংবাদিকদের আটকে রেখে জেল দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে অপরাধ তিনি করেছেন তার শাস্তি বদলি হতে পারে না। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মত আইনের অপপ্রয়োগ করতে কেউ সাহস না পায়।
প্রেসক্লাব লালমনিরহাটের আহবায়ক আনোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, বদলি একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। আমরা লালমনিরহাট সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি)র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছি। এ দাবী পূরণ না হলে আমরা আবার আন্দোলনে যাবো।
প্রসঙ্গত, লালমনিরহাট সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আব্দুল্লাহ-আল নোমান সরকার এর বদলি/ পদায়কৃত কর্মস্থলে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ তাহমিদুল ইসলাম মর্মে জানা গেছে।
অপরদিকে লালমনিরহাটের পার্শ্ববর্তী জেলা কুড়িগ্রামে কুড়িগ্রাম সাংবাদিক ফোরাম (কেজেএফ)র আয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিক হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।