১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের পর দেশের অন্যান্য এলাকার ন্যায় এ এলাকার মানুষও মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। গঠন করা হয় সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও সর্বদলীয় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ। গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ। ৪ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী লালমনিরহাটে প্রবেশ করলে তাদের দখলে চলে যায় এ জনপদটি শুরু হয় হত্যা, নির্যাতন, লুটপাট আর বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা।
হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা সবচেয়ে বড় গণহত্যাকান্ড চালায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার লালমনিরহাট রেলওয়ে ওভার ব্রীজের পশ্চিম পাড়ের রিক্সা স্ট্যান্ডে। সেখানে স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানী বাহিনী রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেক বাঙ্গালীকে ধরে নিয়ে আসে। সেখানে তাদের একত্র করে গুলি করে হত্যা করে। পরে তাদের লাশ খোর্দ্দ সাপটানায় রেলওয়ে ডি.আর.এম অফিসের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিরাট গর্তে এবং সুইপার কলোনী সংলগ্ন পুকুরসহ বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয়া হয়। এর মধ্যে একজনই জীবিত ছিল। পাকিস্তানী সেনারা চলে যাওয়ার পর জীবিত রেলওয়ে কর্মচারী আবুল মনসুর গর্ত থেকে উঠে আসেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের আইরখামার গ্রামে ব্যাপক নর হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানী সেনারা। আইরখামার ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে ধরে এনে অনেক বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়। ১৯৭১ সালের ৪ ও ৫ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণ এবং মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় পর্যুদস্ত হয়ে ৬ ডিসেম্বর ভোরে পাকিস্তানী বাহিনী লালমনিরহাট ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট মুক্ত হয়।
উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতার ৫২ বছরেও লালমনিরহাটের বধ্যভূমিগুলি আজও চিহ্নিতকরণ করা হয়নি। যেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো অবহেলা আর অযত্নে পড়ে আছে। এগুলো সংস্কার, সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান জেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ।