শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
লালমনিরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নির্বাচিত হলেন যাঁরা! সার সিন্ডিকেট হোতারা ধোঁয়া ছোঁয়ার বাহিরে কেন লালমনিরহাটে তামাকের বিষে কমছে জমির ঊর্বরতা; বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি লালমনিরহাটে জেন্ডার-সংবেদনশীল দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে আত্মনির্ভরশীল দল এবং ইউডিএমসি এর মধ্যে অ্যাডভোকেসি এবং লবিং মিটিং অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত পাটগ্রামে শহীদ জিয়া স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্ট অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র আমাদের হাতের নাগালে নাই-লালমনিরহাটে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় লালমনিরহাটে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ঔষধ সেবা অর্ধেক মূল্যে হত দরিদ্রদের ছানি অপারেশন অরবিট চক্ষু হাসপাতালে লালমনিরহাটে শীতের হরেক রকমের পিঠার দোকানের পসরা নিয়ে বসছেন বিক্রেতারা
সাদামনের মানুষ প্রফেসর মোঃ হামিদুল হক

সাদামনের মানুষ প্রফেসর মোঃ হামিদুল হক

কর্মে ও সেবায় সমুজ্জ্বল আছেন কল্যাণময় আলোতে তিনি আর কেউ নন প্রফেসর মোঃ হামিদুল হক। তিনি উদার, উৎসাহী ও ন্যায়পরায়ন এবং সাদামনের একজন মানুষ। সব সময় লালমনিরহাটের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় যিনি স্থান করে নিয়েছেন তিনি হলেন- প্রফেসর মোঃ হামিদুল হক। সবার কাছে তিনি এখনও মোঃ হামিদুল হক স্যার হিসেবেই বেশী পরিচিত।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মোঃ হামিদুল হক ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাট সদর উপজেলার সাপটানা নামাটারি গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বাংলাদেশ সংবিধানের স্বাক্ষরদাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন-এঁর পুত্র। তাঁর মা হাসনাবানু একজন গৃহিনী। লালমনিরহাট মডেল হাইস্কুল ও কারমাইকেল কলেজ রংপুর থেকে যথাক্রমে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের পর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তিতে তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে তিনি ১ নভেম্বর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তিতে তিনি সরকারি জসমুদ্দীন কাজি আব্দুল গনি ডিগ্রি কলেজ, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর-এ দক্ষতার সাথে শিক্ষকতার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। ১ মার্চ ২০১১ থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ঐতিহ্যবাহী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, রংপুর এ অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এ সময়ে তিনি সাফল্যজনক ভাবে চারবছর মেয়াদী শিক্ষায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করেন। তিনি রংপুর বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষা কার্যক্রম তদারকি, বিএড ও এমএডসহ অন্যান্য সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ কোর্সের শিক্ষার্থী, শিক্ষাকর্মকর্তা ও শিক্ষক প্রশিক্ষণার্থীগণের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা আয়োজন, আন্তঃ প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারের বিভিন্ন প্রকার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। এ প্রতিষ্ঠানে সফলতার সাথে লাইফস্কিল বেসড এডুকেশন (এলএসবিই) প্রশিক্ষণ, কন্টিনিউয়াস প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (সিপিডি), ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রশিক্ষন, ওয়াটার, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ), ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট, সেকেন্ডারি টিচিং সার্টিফিকেট (এসটিসি) কোর্স আয়োজনসহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ আধুনিকায়ন ও গতিশীল করতে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি ৮ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ এর পরিচালক (প্রশিক্ষণ) পদে যোগদান করেন। এ সময়ে তিনি একজন সুদক্ষ শিক্ষা প্রশাসক হিসেবে মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে সরকারের শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের নীতিমালা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সহায়তা প্রদান, শিক্ষার গুণগত ও পরিমানগত মান বজায় রাখা ও নিশ্চিতকরণ, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক্রম পরিমার্জনের জন্য যাচাই ও মূল্যায়নে সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন মাউশি, কলেজ, স্কুল, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, প্রকল্প ইত্যাদিতে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দের জন্য দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তিনি ১২ জানুয়ারি ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ হতে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম) এর মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। নায়েম পরিচালিত বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সসহ অন্যান্য সকল প্রশিক্ষণ কোর্সের মূখ্য উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন, নায়েমের প্রশাসন প্রধান হিসেবে প্রশাসনের সকল কর্মকান্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা; নায়েমের বোর্ড ও গভর্ণরস-এর নিকট বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন; আয়নব্যয়ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন; শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশিত নীতিমালা বাস্তবায়ন; শৃঙ্খলা বজায় ও নায়েমকে সার্বিকভাবে কার্যকর করার পদক্ষেপ গ্রহণ; অনুষদবৃন্দকে পরিচালনা, পেশাগত সহায়তা প্রদান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযোগ স্থাপনসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।
প্রফেসর মোঃ হামিদুল হক পেশাগত জীবনে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড এ পেশাগত উন্নয়নের উপর বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর পেশাগত জীবনের সফল অর্জনসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, রংপুরে চারবছর মেয়াদী বিএড (সম্মান) ও এমএড কোর্স চালুকরণ, রংপুর বিভাগের ৩১০৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশ হাজারের অধিক আইসিটি সামগ্রী (ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, মডেম, পেনড্রাইভ ইত্যাদি সুষ্ঠুভাবে বিতরণ, সন্তানসহ মা প্রশিক্ষণার্থীদের সহায়তায় ডে কেয়ার সেন্টার স্থাপন, নায়েম এ এমএড কোর্স চালুকরণসহ ইএফটিএন (ইলেকট্রনিকফান্ডট্রান্সফার) পদ্ধতি, লাইব্রেরি ব্যবহারে আধুনিক পদ্ধতি প্রবর্তন ও বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষায় উদ্ভাবন কর্মসূচি সফলভাবে চালুকরণ। তিনি শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৫ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচি কর্তৃক শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ সম্মাননা পদক পান। অসহায় মানুষের কল্যাণে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি দ্য রোটারী ফাউন্ডেশন কর্তৃক ১৯৯৮ সালে পল হ্যারিস ফেলো সম্মাননায় ভুষিত হন।
রোটারী ইন্টারন্যাশনালের হোম ফর হোমলেস কর্মসূচির আওতায় গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাকরণ, রোটারী ক্লাবের সেভ দ্য ফুয়েল-সেভ দ্য প্লান্টস প্রকল্পের আওতায় লালমনিরহাট অঞ্চলের রান্নাঘরে সাশ্রয়ী মূল্যের পরিবেশ বান্ধব চুলা স্থাপন, শিশুদের সহশিক্ষাক্রম কর্মসূচি যেমন শরীরচর্চা, নাটক, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি, সঙ্গীত ইত্যাদি চর্চার জন্য ‘পরশমনি কচি-কাঁচার মেলা’ নামে একটি শিশু কল্যাণ সংগঠন পরিচালনা, ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা, রোটারী ক্লাব অব হরলে, স্যুরে, ইংল্যান্ড এবং ভগবান মহাবীর বিকলাঙ্গ সহায়তা সমিতি, ভারত এর সহায়তায় ২২০জন বিকলাঙ্গ ব্যক্তির কৃত্রিম অঙ্গ প্রতি স্থাপন ক্যাম্প আয়োজন, লালমনিরহাট এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে কয়েক হাজার দরিদ্র পরিবারের মধ্যে মশারী বিতরণ, রোটারী ক্লাব হ্যানেলি বে, জার্মানির সহায়তায় অসহায় বৃদ্ধদের পুণর্বাসন কর্মসূচি, কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদান, শিশু অপুষ্টি দুরীকরণ ও শিক্ষাবৃত্তি প্রদান কর্মসূচি পরিচালনা করেন।
তিনি বাংলা একাডেমি; বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি; বাংলাদেশ জুওলজিক্যাল সোসাইটি; উত্তরবঙ্গ জনকল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ; অফিসার্স ক্লাব, ঢাকাসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংস্থায় আজীবন সদস্য হিসেবে জাতীয় শিক্ষক শিক্ষা কাউন্সিল (এন.টি.ই.সি) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই ছেলের পিতা। তাঁর স্ত্রী রুখসানা পারভীন একজন প্রাক্তন শিক্ষক। অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হক ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মার্চ বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের বিজ্ঞ সদস্য হিসেবে যোগদান করেছেন। আদর্শ, নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতায় সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে তিনি অবসরে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, মহান মুক্তির সংগঠক মরহুম আবুল হোসেন (সাবেক এমপি) কর্তৃক সংরক্ষিত মহান মুক্তিযুদ্ধকালের ১১২টি মহামূল্যবান ডকুমেন্টের আলোকে বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মোঃ হামিদুল হক ‘বৈভবে একাত্তর’ নামে একটি স্মারক গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ গ্রন্থটিতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি এবং যুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী ঘটনাসমূহ প্রাপ্ত ডকুমেন্টের সাথে সমন্বয় করে ১৩টি অধ্যায়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন পরিষদ এ গ্রন্থটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone