আলোর মনি ডটকম ডেস্ক রিপোর্ট: এবার গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে বাংলাদেশী কৃষক তরিকুল ইসলাম (২৮) কে ধরলা নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা ১৮০বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
আজ রবিবার ৫ জুলাই বিকাল ৪টায় বুড়িমারী ৬১বিজিবি ও পাটগ্রাম থানা পুলিশের যৌথটিম লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর সীমান্তের ধরলা নদীর মাইয়া মরার ঘাট হতে হতভাগ্য যুবকের লাশ উদ্ধার করে পাটগ্রাম থানায় নিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় সীমান্ত গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সীমান্ত গ্রামটিতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
সীমান্ত গ্রামের অধিবাসী ও নিহতের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের আমবাড়ি সীমান্ত গ্রামের মৃত আজিজুল ইসলামের পুত্র তরিকুল ইসলাম (২৮) হারিয়ে যাওয়া একটি গরু আনতে গত ৩০ জুন সন্ধ্যায় সীমান্তের নোম্যন্সল্যান্ডে যায়। এই সীমান্তে কোন কাঁটাতারের বেড়া নেই। সেখানে হারিয়ে যাওয়া গরু খোঁজা খুঁজির সময় ভুলবসত ভারতীয় সীমান্ত গ্রামে ঢুকে পড়ে। ভারতীয় গ্রামবাসীর সহায়তায় সে ফিরে আসতে ছিল। এমন সময় ভারতীয় ১৮০চ্যাংরাবান্ধা বিএসএফের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তারা বাংলাদেশী যুবক তরিকুল ইসলামকে বিএসএফ ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে তার উপর চলে রাতভর নির্মম নির্যাতন। এক পর্যায়ে যুবকের গলায় ফাঁস দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে গলায় রশি বাধা অবস্থায় তরিকুলকে ধরলা নদীতে ভাসিয়ে দেয়। ঘটনাটি ভারতীয় গ্রামবাসীরা আটক যুবক তরিকুলের স্বজনদের মোবাইল ফোনে জানায়। স্বজনরা তাঁকে উদ্ধারে স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পের সহায়তা চায়। কিন্তু বিএসএফ বিজিবি’র কাছে বাংলাদেশী যুবক তরিকুল ইসলামকে আটক ও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে আসছিল।
এদিকে আজ রবিবার ৫ জুলাই সকাল ১১টায় একই উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর সীমান্তের মেইন পিলার ৮৪২ এস ৬ এর কাছে নোম্যান্সল্যান্ডে ধরলা নদীর মাইয়া মরার ঘাটে একটি লাশ ভেসে উঠে। গ্রামবাসীরা বিষয়টি বুড়িমারী ৬১বিজিবি ক্যাম্পে জানায়। বিজিবির সদস্যা সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু ধরলা নদীতে পানির তীব্র স্রোত থাকায় তাৎক্ষণিক ভাবে লাশ উদ্ধার করতে পারেনি। পরে বিকাল ৪টায় পাটগ্রাম থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে যায়। বিজিবি, পুলিশ ও সীমান্ত গ্রামের অধিবাসীদের যৌথ উদ্যোগে লাশ উদ্ধার করা হয়। গ্রামবাসীরা সনাক্ত করে লাশটি নিখোঁজ কৃষক তরিকুল ইসলামের।
পাটগ্রাম থানার ইনন্সেপেক্টর তদন্ত মোজ্জাম্মেল হক জানান, লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে তাঁকে নির্মম নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় রাতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। লাশ পোষ্ট মডেম করতে লালমনিরহাট মর্গে পাঠানো হবে।
৬১বিজিবি’র বুড়িমারী ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার ওমর ফারুক জানান, গ্রামবাসীদের খবরে ধরলা নদীতে লাশ ভাসতে দেখে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কিভাবে ও কি কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে তাহা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ভারতের অভ্যন্তরে তাঁকে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা স্পষ্ট ভাবে বুঝা যায়। এ ঘটনায় তীব্র নিন্ধা জানিয়ে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিএসএফ এখনো কোন প্রতিক্রিয়া বা পত্রে জবাব দেয়নি।