১৩ আগস্ট ২০২৩। সাপ্তাহিক আলোর মনি’র প্রকাশনার ৯বছর পূর্ণ হলো। এখন দশম বর্ষের যাত্রা পেরিয়ে সাপ্তাহিক আলোর মনি আজ দশম বর্ষে পদার্পণ করছে। ৯বছর আগে হাঁটি হাঁটি পা পা করে যাত্রা শুরু করে নতুন প্রজন্মের এই পত্রিকা। লালমনিরহাট জেলার মিডিয়া জগতে সাপ্তাহিক আলোর মনি’র আগমন হুট করে। আল্লাহর অশেষ রহমত এবং পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের ফুলের ভালোবাসায় সাপ্তাহিক আলোর মনি ‘এলাম এবং জয় করলাম’ বাক্যটিকে স্বার্থকতা দিতে পেরেছে। এই আনন্দের দিনে আমরা শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমাদের অগণিত পাঠক, লেখক, গ্রাহক, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে। প্রকাশনার শুরু থেকে এই নাতিদীর্ঘ যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপে আমরা পেয়েছি অসংখ্য পাঠক-পাঠিকার অকুণ্ঠ সমর্থন। স্বল্প এই সময়ে প্রচারসংখ্যার যে শিখরে সাপ্তাহিক আলোর মনি পৌঁছেছে, তার শতভাগ কৃতিত্ব এই তাঁদের। তাঁদের অকুষ্ঠ ভালোবাসায় আমরা অভিভূত, কৃতজ্ঞ ও বিনত। নবম বছরের নানা ধাপে অগণিত শুভার্থী আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁদের সহযোগিতার হাত, আবেগে ও ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ। আমাদের পেশাগত কাজে ও বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে তাঁরাই ছিলেন আমাদের প্রধান সহায়। সামান্যতম সাফল্যও যদি সাপ্তাহিক আলোর মনি আজ অর্জন করে থাকে, এর ভাগীদার তাঁরা সবাই। সবার আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতার ফলেই সাপ্তাহিক আলোর মনি লালমনিরহাট জেলার সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্রের মর্যাদা অর্জন করতে পেরেছে। নানা আঙ্গিকে এখন থেকেই বদলে যাচ্ছে সাপ্তাহিক আলোর মনি। এর ভিতর থাকছে কবিতা, গল্প, ছড়া, প্রবন্ধ, গবেষণা মূলক প্রতিবেদন ও গ্রাম, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা, বিভাগ, দেশ এবং বিদেশের নানা ধরনের উন্নয়ন মূলক তরতাজা খবরের ভিতরের খবর। যা পাঠকে আকৃষ্ট করবে। ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট লালমনিরহাটের সংবাদপত্র জগতে আবির্ভূত হয় সাপ্তাহিক আলোর মনি। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক সাম্য ও ন্যায়বিচার এবং অসাম্প্রদায়িকতা-মহান মুক্তিযুদ্ধের এই মৌল আদর্শগুলো ধারন করে সাপ্তাহিক আলোর মনি শুরু করে তার পথচলা। যাত্রার শুরুতে আমাদের সম্বল ছিল বস্তুনিষ্ঠ, সাহসী ও দলনিরপেক্ষ সাংবাদিকতার পথে চলার অদম্য সংকল্প। বুকভরা স্বপ্ন ছিল আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে উৎসারিত অমর আকাঙ্ক্ষাগুলো ছিল আমাদের দিকনির্দেশিকা। আমরা উপলব্ধি করতে ও ভাষা দিতে চেষ্ঠা করেছি লালমনিরহাট জেলার মানুষের সংকট আর সম্ভাবনাকে, আকৃতি আর আশাবাদকে। আমাদের যাত্রাপথ সব সময় মসৃণ ছিল না। কখনো চাপ এসেছে, কখনো কুৎসা রটনার চেষ্টা হয়েছে, নানা পন্থায় আমাদের ওপর আক্রমণ এসেছে। অগুনিত পাঠক ও শুভার্থীর উচ্ছ্বসিত সহযোগিতায় আমরা সেসব পেরিয়ে এসেছি। আমরা সংকল্পভ্রষ্ট হইনি, নীতিনিষ্ট সাংবাদিকতার পথ থেকে পিছিয়ে আসিনি। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় বরং আরও দৃঢ়তর হয়েছে। এই ৯বছর ধরে সাপ্তাহিক আলোর মনি ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা অনুশীলনের চেষ্ঠা করেছে এবং এ প্রক্রিয়ায় ব্যাপকসংখ্যক পাঠকের আস্থা অর্জণ করে প্রচারসংখ্যায় শীর্ষ স্থানে পৌঁছেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী সহিংসতাসহ যা কিছু রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর, সেসবের বিরুদ্ধে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশ ও গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে জনসাধারণকে ওয়াকিবহাল রাখা এবং মতামত প্রকাশে সহযোগিতা করতে সাপ্তাহিক আলোর মনি সাংবাদিকতার নৈতিক উৎকর্ষ ও পেশাদারি দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করে চলেছে। কখনো ভুলত্রুটি হলে দ্রুত তা স্বীকার করেছে। আমাদের দুঃখিনী এই লালমনিরহাট জেলাটির সম্পদ বড় অপ্রতুল, কিন্তু এ লালমনিরহাট জেলার লড়াকু মানুষের স্বপ্ন অদম্য। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয়ের পর মানুষের অপার স্বপ্ন দ্রুতই মুখ থুবড়ে পড়ে। নানা রাজনৈতিক ঘূর্ণিবাত্যায় আমাদের গণতন্ত্র বারবার দিশা হারায়। নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা ও রাষ্ট্রের কার্যক্রমে মেরুদূর ফারাক ঘটে যায়। রাষ্ট্রে বহু মৌলিক গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এখনো আমাদের এক পরাহত স্বপ্ন। তবু সমস্ত প্রতিকূলতা ছাপিয়ে, বহু পণ্ডিতজনের হতাশাব্যস্তক ভবিষ্যষণী ব্যর্থ করে নিয়ে, লালমনিরহাটের মানুষ নিজের পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। তার অর্জন আজ বড় কম নয়। আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, জন্ম-বিস্ফোরণ হ্রাস পেয়েছে, বেড়েছে নারীশিক্ষার হার, প্রবৃদ্ধি উঠেছে একটি সম্মানজনক স্তরে, বিপ্লব ঘটেছে কৃষিতে, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন তিনবিঘা করিডর ২৪ঘন্টা খোলা থাকছে, বাংলাদেশ-ভারত ২টি দেশের ১শত ৬২টি ছিটমহলবাসীর অবরুদ্ধ জীবনের সুদীর্ঘ ৬৮বছরের ঝুলে থাকা সমস্যার চির অবসান হয়েছে। এসব অর্জন এ লালমনিরহাট জেলা ও দেশের মানুষের। কেবল দুঃসাহসে সমস্ত বিঘ্ন তুচ্ছ করে তারা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, এসব অর্জন লালমনিরহাট তথা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার একটি সোপান মাত্র। লালমনিরহাট ও বাংলাদেশকে সাফল্যের আরও নতুন নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছে স্বপ্নে বিভোর এই অমিতভাষী মানুষদের আছে এবং দিয়েছে। ৯বছর পূর্তিতে সাপ্তাহিক আলোর মনি নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে অভিসম্ভাবি সাফল্যের দিকে অগ্রসর হবে। যা অন্যদের চেয়ে আলাদা ও ভিন্নতর প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়া স্বপ্নকে সুদৃঢ় করে সামান্যের দিকে এগিয়ে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি আমরা সামনে এগুবই এগিয়ে যাব এটা সুনিচ্ছিৎ। গত ৯বছরে সাপ্তাহিক আলোর মনি’র যা কিছু সাফল্য, তার সবটাই আমাদের পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতার ফল। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পাশাপাশি গবেষণামূলক প্রতিবেদনগুলো আগামী প্রজন্মের জন্য এক নতুন ইতিহাস হয়ে থাকবে। সত্যের সঙ্গে মিথ্যাকে মিশ্রিত না করার ঐশী নির্দেশনাকে সাপ্তাহিক আলোর মনি আগামীতেও অবশ্য পালনীয় কর্তব্য হিসেবে মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। সাপ্তাহিক আলোক মনি’র ৯বছর পূর্তির এই শুভক্ষণে সবার জীবনে বয়ে নিয়ে আসুক আনন্দ, শান্তি, মঙ্গল ও সাফল্য। সবাইকে আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।