শিরোনাম :
সাপ্তাহিক আলোর মনি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আপনাকে স্বাগতম। # সারাবিশ্বের সর্বশেষ সংবাদ পড়তে আমাদের সঙ্গেই থাকুন। -ধন্যবাদ।
শিরোনাম :
বিএনপি সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে: লালমনিরহাটে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু লালমনিরহাটে এলসিসিআই মডেল স্কুলের পাঠ সমাপনী ২০২৪খ্রি. অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে দিন দিন কমছে আখ চাষ লালমনিরহাটের শালবন হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র লালমনিরহাটে মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা অনুষ্ঠিত লালমনিরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে নির্বাচিত হলেন যাঁরা! সার সিন্ডিকেট হোতারা ধোঁয়া ছোঁয়ার বাহিরে কেন লালমনিরহাটে তামাকের বিষে কমছে জমির ঊর্বরতা; বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি লালমনিরহাটে জেন্ডার-সংবেদনশীল দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত লালমনিরহাটে আত্মনির্ভরশীল দল এবং ইউডিএমসি এর মধ্যে অ্যাডভোকেসি এবং লবিং মিটিং অনুষ্ঠিত
তিস্তা নদী জুড়ে এখন ধু ধু বালু চর

তিস্তা নদী জুড়ে এখন ধু ধু বালু চর

পানি না থাকায় তিস্তা নদীর প্রায় ১শত ৩০কিলোমিটার জুড়ে এখন ধু ধু বালু চরে পরিণত হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের একতরফা শাসন নীতির কবলে পড়ে বসন্তেই যৌবন হারিয়ে মরতে বসেছে এক কালের প্রমত্তা তিস্তা নদী। তিস্তা নদীর পাড়ে নেই মাঝি-মাল্লা আর জেলেদের হাঁক-ডাক। প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ। তিস্তা নদীর মূল গতিপথ এখন বালুর স্তুপে পরিণত হয়েছে।

 

ভরা বর্ষা মৌসুমে তিস্তা সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারাজ রক্ষায় খুলে দেয়া হয় ৫২টি জল কপাট। এতে ব্যারাজের আশপাশের বাসিন্দাসহ ভাটিতে থাকা লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ হয়ে পড়ে পানিবন্দি। নদী ভাঙ্গণে বসতভিটাসহ সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয় তিস্তা নদীর পাড়ের মানুষ। আশ্রয় নেয় বাঁধের ধারে কেউ বা অন্যের জমিতে। পক্ষান্তরে প্রতি বছরই বন্যার পর কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই প্রমত্তা তিস্তা নদী পরিণত হয় ধু-ধু বালুচরে।

 

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় প্রতি বছর বর্ষা শেষ হতে না হতেই বাংলাদেশ অংশ পরিণত হয় মরা খালে। ৩শত ১৫কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের প্রায় ১শত ৩০কিলোমিটার এখন মরুভূমি। দিন দিন প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি।

 

পানি না থাকায় তিস্তা নদীর বুকে মাছ শিকার করতে ছুটে চলা ডাহুক, পানকৌড়িসহ অসংখ্য পাখ-পাখালিদের উড়ে যাওয়ার চিরচেনা দৃশ্য এখনও আর চোখে পড়ে না। তারাও যেন মুখ ফিরিয়ে বিদায় নিয়েছে যৌবনা তিস্তা নদী থেকে। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা চরাঞ্চলের বালু জমিতে কঠোর পরিশ্রম করে চাষাবাদ করা চাষিদের বিভিন্ন জাতে শস্য মরে যেতে বসেছে। তিস্তার নদীর বালুচরে গর্ত করে পানির অস্থায়ী উৎস সৃষ্টির মাধ্যমে শস্যক্ষেতে সেচ দেন এসব কৃষক। কিন্তু পানি স্তর নিচে চলে যাওয়ায় প্রতিদিন সেচ দিয়েও রক্ষা হচ্ছে না ফসল। এছাড়াও শত কষ্টে চাষাবাদ পণ্য মূলভূখন্ডে নিতে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত পরিবহন খরচ। পানি থাকলে নৌকায় সহজে ও কম খরচে শস্য পরিবহন করা যেত। ফলে বেশি খরচ ও পরিশ্রম করে উৎপাদিত শস্যের ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার চাষি।

 

তিস্তা নদীর উপর নির্মিত তিস্তা সড়ক সেতু ও কাকিনা-মহিপুর তিস্তা সড়ক সেতু যেন এখন বালু চরে প্রহসনে দাড়িয়ে আছে। পানি শূন্য তিস্তা নদীর বালুচর এখন হেঁটেই পাড়ি দিচ্ছে মানুষজন। ঢেউহীন তিস্তায় রয়েছে শুধু বালু কণা। নেই মাছ বা নৌকার ছুটে চলার চিরচেনা দৃশ্য। সব মিলে পানি শূন্য তিস্তা পাড়ের জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বেকার হয়ে খাদ্যকষ্টে পড়েছেন তিস্তা নদীর বুকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহকারী হাজারও জেলে ও মাঝি-মাল্লাদের পরিবার।

 

দেখা গেছে, তিস্তার মূল নদীতে বড় বড় বালুর স্তুপ। তিস্তা নদীতে পানি নেই। চোখ জুড়ে শুধুই ধু ধু বালুচর। তিস্তা ব্যারাজের উজানে পানি আটকানোর চেষ্টা করছে ভারত। এতে করে যেটুকু পানি উজানে জমছে তাতেই ব্যারাজটির মাধ্যমে ইরি-বোরো ধানের জন্য সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

 

তিস্তা পাড়ের বাসিন্দারা বলেন, এই তিস্তা নদী আমাদের কোনো উপকারে আসে না। শুধু প্রতি বছর ভাঙ্গণে আর পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দুই পাড়ের মানুষ।

 

তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাশিদীন ইসলাম জানান, সেচপ্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে কমপক্ষে ১ লাখ ২০ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন। অথচ বর্ষা শেষ না হতেই গত ১০ দিনে গড়ে ব্যারাজের মূল গেটের পানি প্রবাহ রয়েছে ২৫ হাজার ৩০০ কিউসেক। যা দিয়ে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম শুরু করা কষ্টকর হবে।

 

উল্লেখ্য যে, ভারতের সিকিম রাজ্য থেকে উৎপত্তি ঐতিহাসিক তিস্তা নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিশে গেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন




এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা ও ছবি অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি
Design & Developed by Freelancer Zone