লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ তৌহিদুর রহমান দহগ্রাম ইউনিয়নে কৃষকের গরুর তালিকা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তার নিকট প্রদান করার জন্য দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোঃ আনিছুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
দহগ্রামে কৃষকের গরু নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের স্লিপ বাণিজ্য নিয়ে অভিযোগ উঠায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপরে সরেজমিনে তদন্ত করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ তৌহিদুর রহমান।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষে এ বিষয়ে শুনানীতে পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ শ্যামল চন্দ্র রায়, পানবাড়ি বিজিবি ক্যাম্পের কম্পানী কমান্ডার, স্থানীয় কাস্টম কর্মকর্তা, দহগ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আব্দুল কাদের, দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ইউপি সচিব মোঃ আনিছুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যগণ এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দহগ্রামে গরু কেন্দ্রিক যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে ওই সিন্ডিকেট, টাকা নিয়ে গরুর স্লিপ প্রদান, গরুর নিলাম নিয়ে সিন্ডিকেট এসব বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান এবং বিজিবির কাছে জানতে চান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট।
এ ছাড়াও আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউনিয়নের কোন কৃষককে বাজারে গরু বিক্রয়ের স্লিপ (রশিদ) প্রদান করা হয়েছে তাও সংশ্লিষ্টদের নিকট জানতে চান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট।
দহগ্রাম থেকে প্রতি শনিবার এবং বুধবার ৩০টি করে মোট ৬০টি গরু সপ্তাহে তিনবিঘা করিডোর গেট দিয়ে দেশের মূল ভূখন্ডে নিয়ে আসার অনুমতি দেয় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ। নির্দিষ্ট এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গরু কেন্দ্রিক দহগ্রামে গড়ে উঠেছে বিশাল এক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট চোরাই পথে ভারত থেকে গরু এনে জনপ্রতিনিধিদের নিকট থেকে স্লিপ নিয়ে বাজারে বিক্রয় করে। ফলে দহগ্রামের কৃষকরা সাংসারিক প্রয়োজনে বাজারে গরু বিক্রয় করা থেকে বঞ্চিত হয়। কৃষকরা এ বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে।
অভিযোগ আছে কাষ্টম কর্তৃক নিলাম কৃত গরু বাদ দিয়ে অবশিষ্ট গরু দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যে স্লিপ বা গরু বিক্রয়ের রশিদ প্রদান করা হয় তার প্রতিটি স্লিপ ২৫ থেকে ৪০হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ পায় মাত্র ১শত ৫০টাকা। এ বিষয়ে গত ৩০ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব সংবাদের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ তৌহিদুর রহমান গত রোববার সরেজমিন তদন্ত করেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য সুবিধাভোগীরা তৎপর হয়ে পড়ছে।
দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, আমার অপজিশন পার্টি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
লালমনিরহাট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্টেট মোঃ তৌহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে আমি একটা সময় বেঁধে দিয়েছি এই সময়ের মধ্যে কোন কৃষক গরু বিক্রয় করেছে তার একটি সার সংক্ষেপ (summary) দিতে বলেছি। তদন্ত রিপোর্ট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডিসি স্যারের কাছে দাখিল করা হবে বলেও তিনি জানান।